হক, রফিক-উল

Mukbil (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ১৪:৫৩, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ ("right|thumbnail|200px|রফিক-উল হক '''হক, রফিক-উল''' (১৯৩৫-২০২০) প্রখ্যাত আইনজীবী, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এবং সমাজসেবী। রফিক-উল হকের জন্ম ১৯৩৫ সালের ২রা নভেম্বর কলকাতায়। মুমিন-উল..." দিয়ে পাতা তৈরি)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)
রফিক-উল হক

হক, রফিক-উল (১৯৩৫-২০২০) প্রখ্যাত আইনজীবী, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এবং সমাজসেবী। রফিক-উল হকের জন্ম ১৯৩৫ সালের ২রা নভেম্বর কলকাতায়। মুমিন-উল হক ও নূরজাহান বেগম দম্পতির সন্তান রফিক-উল হক কলকাতার ইসলামিয়া কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৫ সালে স্নাতক, ১৯৫৭ সালে দর্শনশাস্ত্রে স্নতকোত্তর এবং ১৯৫৮ সালে আইনশাস্ত্রে এলএলবি ডিগ্রি লাভ করেন। ক্রিমিন্যাল ল’ বিষয়ে প্রথম স্থান অধিকার করে কলকাতা বিশ^বিদ্যালয় থেকে তিনি স্বর্ণপদক লাভ করেন। তিনি ১৯৬১ সালে যুক্তরাজ্য থেকে হিন্দু ল’ বিষয়ে ডিস্টিংশনসহ বার-এট-ল ডিগ্রি অর্জন করেন।

১৯৬০ সালে কলকাতা হাইকোর্টে তালিকাভুক্তির মাধ্যমে রফিক-উল হকের আইনজীবী হিসেবে বর্ণাট্য কর্মজীবনের সূচনা হয়েছিল। এরপর তিনি ১৯৬২ সালে ঢাকা হাইকোর্টে যোগদান করেন এবং ১৯৬৫ সালে পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবী হিসাবে অন্তর্ভূক্ত হন। ১৯৭৫ সালে তিনি বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে সিনিয়র আইনজীবী হিসেবে যোগদান করেন। তিনি ৭ই এপ্রিল ১৯৯০ থেকে একই বছরের ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবেও দায়িত্বপালন করেন। ৬০ বছরের সফল আইন পেশায় তিনি অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও আলোচিত মামলা পরিচালনা করে খ্যাতি অর্জন করেন। তাঁর পরিচালিত প্রায় ৫০০টি মামলা আইন জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। রফিকুল হক বাংলাদেশে কোম্পানি ও কর্পোরেট আইনের একজন অগ্রণী আইনজীবী ছিলেন। তিনি ১৯৭৭ সালে কোম্পানি আইন সংস্কার কমিটির অন্যতম সদস্য হিসেবে কাজ করেন।

বঙ্গবন্ধু সরকারের শাসনামলে (১৯৭২-৭৫) তিনি ‘জাতীয়করণ আদেশ, ১৯৭২’সহ অনেক আইনের খসড়া প্রণয়নের দায়িত্বপালন করেছেন। ‘ওয়ান-ইলেভেন’ নামে পরিচিত ২০০৭-২০০৮ সময়ে বাংলাদেশের জাতীয় রাজনৈতিক সংকটের সময় আইনজীবী হিসেবে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এ সময় তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-র চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াসহ অনেক রাজনৈতিক নেতার আইনজীবী হিসেবে কাজ করেন। সে সময়ে বাংলাদেশে আইনের শাসন ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় আইনজীবী হিসেবে তিনি বিশেষ অবদান রাখেন। রফিক-উল হক ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের আইন বিভাগে খ-কালীন শিক্ষক হিসেবেও পাঠ দান করছেন। তাঁকে দিয়েই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘হিন্দু ল’ পাঠদান শুরু হয়েছিল।

ব্যারিস্টার রফিক-উল হক বাংলাদেশ বার কাউন্সিল ট্রাইব্যুনাল, বার কাউন্সিল নির্বাচন ট্রাইব্যুনাল এবং বার কাউন্সিল অব বাংলাদেশ (১৯৯০)-এর চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি ওয়ার্ল্ড অ্যাসোসিয়েশন অফ লইয়ার্স, ফরেন ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট এবং আন্তর্জাতিক কর সংক্রান্ত নির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন। তিনি অর্থ, ব্যাংকিং এবং ঋণ সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। তিনি অর্থ ও ব্যাংকিং উপ-কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবেও কাজ করেন এবং ব্যাংকিং আইন সংস্কারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের আদেশসহ বিভিন্ন আইন প্রণয়ন এবং বেসরকারি বিনিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়েও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি শেয়ারবাজার উন্নয়নের জন্য গঠিত কমিটির অন্যতম সদস্য ছিলেন। রফিক-উল হক বাংলাদেশ শিল্প ঋণ সংস্থা (বিএসআরএস), ন্যাশনাল টি কোম্পানি লিমিটেড, আরব বাংলাদেশ ব্যাংক লিমিটেড, ন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানি লিমিটেড (নিফকো), আইএফআইসি ব্যাংক লিমিটেড এবং মালদ্বীপ বাংলাদেশ ব্যাংক লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা ও উদ্যোক্তা ছিলেন। তিনি ১৯৯০ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সভায় যোগদানকারী বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন।

পারিবারিক ঐতিহ্য থেকে ছাত্রজীবনে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন রফিক-উল হক। ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের বাবা মুমিন- উল হক পেশায় ডাক্তার হলেও চব্বিশ পরগনা মিউনিসিপালিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। রফিক-উল হক কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদের নির্বাচিত সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সেক্রেটারি ছিলেন। পরে তিনি পশ্চিমবঙ্গ যুব কংগ্রেসের ভাইস প্রেসিডেন্ট হন। এই সূত্রে কেন্দ্রীয় যুব কংগ্রেসের তৎকালীন সভাপতি ইন্দিরা গান্ধীর সাথেও কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জী তাঁর বন্ধু ছিলেন। রফিক-উল হক পেশাগত জীবনে সরাসরি রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন না, তবে তিনি কাজ করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, প্রেসেডিন্ট হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদ, প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে। বাংলাদেশের প্রতিটি রাজনৈতিক সংকট সমাধানে তিনি সোচ্চার ও সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন।

ব্যারিস্টার রফিক-উল হক একজন সমাজসেবী ছিলেন। আর্ত-মানবতার কল্যাণে তিনি অনেক সেবাধর্মী কাজ করেছেন। ঢাকার ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতাল প্রতিষ্ঠায় তাঁর পারিবারিক অবদান রয়েছে। তিনি নিজে ঢাকা শিশু হাসপাতাল প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। এছাড়াও ঢাকার আদ-দ্বীন মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল, বারডেম হাসপাতাল, আহসানিয়া মিশন ক্যান্সার হাসপাতালসহ ২৫টিরও বেশি সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠানের সাথে তিনি অর্থায়নসূত্রে জড়িত ছিলেন। তিনি আদ-দ্বীন ফাউন্ডেশন ও বারডেম হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান এবং ঢাকা শিশু হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পর্ষদের সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে দায়িত্বপালন করেছেন। রফিক-উল হক নিজ অর্থায়নে গাজীপুরের চন্দ্রায় ১০০ শয্যার সুবর্ণ-ইব্রাহিম জেনারেল হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেছেন।

আইনজীবী এবং একজন সমাজসেবী হিসেবে অসামান্য অবদানের জন্য রফিক-উল হক মার্কিন সিনেট প্রদত্ত কলকাতার মাদার তেরেসা স্বর্ণপদক, ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালের প্রশংসা পুরস্কার এবং মুক্তিযোদ্ধা জাদুঘরের পৃষ্ঠপোষক পুরস্কার লাভ করেন। তিনি স্বাস্থ্য ও পরিচ্ছন্নতায় অবদানের জন্য এমসিসিআই এবং রোটারি ক্লাব অফ ঢাকা সাউথ লায়ন্স ক্লাব কর্তৃক পুরস্কৃত হন।

প্রখ্যাত আইনজীবী রফিক-উল হক ২০২০ সালের ২৪ অক্টোবর মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। [মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান]