হক, এ.কে.এম. আমিনুল

এ.কে.এম. আমিনুল হক

হক, এ.কে.এম. আমিনুল (১৯২৯-২০২২) জাতীয় অধ্যাপক, প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ ও মেরিন বায়োলজিস্ট (সামুদ্রিক জীববিজ্ঞানী) ছিলেন। তিনি ২রা জুলাই ১৯২৯ সালের কিশোরগঞ্জ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক নিবাস হোসেনপুর উপজেলার চরজামাইল গ্রামে। তাঁর পিতা আশরাফ আহমেদ এবং মা আমেনা আশরাফ।

ড. আমিনুল হক শিক্ষাজীবনে অসাধারণ মেধাবী ছাত্র ছিলেন। ১৯৪৬ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিকে দশম এবং সমগ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের মুসলিম ছাত্রদের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেন। একই প্রতিষ্ঠান থেকে ১৯৪৮ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ন হন। পরবর্তীতে ১৯৫০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফরংঃরহপঃরড়হ সহ বি.এস.সি এবং ১৯৫২ সালে পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে এম.এস.সি ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে ১৯৫৭ সালে যুক্তরাজ্যের নটিংহাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি পিএইচ.ডি ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। এছাড়া ১৯৭০-১৯৭১ সালে তিনি টোকিও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে SEATO পোস্ট ডক্টরাল ফেলোশিপ লাভ করেন।

অধ্যাপক আমিনুল হক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগে প্রভাষক হিসেবে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি ১৯৫২ সাল থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত প্রভাষক এবং ১৯৫৭ সাল থেকে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত জ্যেষ্ঠ প্রভাষক (সিনিয়র লেকচারার) হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর, ১৯৬২ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণিবিদ্যা বিভাগে রিডার হিসেবে যোগ দেন। ১৯৬৭ সাল থেকে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে ১৯৮৯ সালে অবসর গ্রহণ করেন। ১৯৮০ সাল থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত দুটি পূর্ণ মেয়াদে (১৯৮০-১৯৮৪ সাল এবং ১৯৮৪-১৯৮৮ সাল) প্রফেসর ড. আমিনুল হক বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ২০০৬ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক পাঁচ বছরের জন্য জাতীয় অধ্যাপক নিযুক্ত হন। তিনি ছিলেন শাহাবুদ্দিন আহমেদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের (১৯৯০-১৯৯১) মন্ত্রী পদমর্যাদায় একজন উপদেষ্টা। এছাড়াও, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন মৎস্য বিভাগের মেরিন পরিচালক হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেন।

ড. হক ১৯৬৭ সালে ময়মনসিংহের বাংলাদেশে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘মৎস্যবিদ্যা’-কে বিশ্ববিদ্যালয়-শিক্ষা-ব্যবস্থার একটি স্বতন্ত্র একাডেমিক বিভাগ/শাখা হিসাবে প্রবর্তন করেন, যা উপমহাদেশে প্রতিষ্ঠিত প্রথম মৎস্য অনুষদ। ‘বাংলাদেশের মৎস্যবিদ্যা শিক্ষার জনক’ অধ্যাপক আমিনুল হক ফিশারিজ অনুষদের প্রতিষ্ঠাতা ডিন এবং তিন বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা বিভাগীয় প্রধান ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি ফিসারিজ সোসাইটি অব বাংলাদেশ (FSB) প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ জার্নাল অব ফিসারিজ-এর প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান সম্পাদক ছিলেন।

প্রফেসর হক ছিলেন একজন বিশিষ্ট মৎস্যবিজ্ঞানী, যিনি ফিশারিজ বায়োলজিতে বিশেষ করে সিটাসিয়ানে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন। অধ্যাপক হক তাঁর জীবনে অনেক মর্যাদাপূর্ণ সম্মাননা এবং পুরস্কার পেয়েছেন। এসবের মধ্যে বিদ্যালয় পর্যায়ে ‘চিল-ময়না-দোয়েল-কোয়েল’ পাঠ্যপুস্তকের জন্য ইউনেস্কো (১৯৬১-১৯৬২) (ইউনেস্কো প্রাইজ ফর স্কুল টেকস্টবুক) পুরস্কার, জাতীয় মৎস্য পাক্ষিক পুরস্কার (১৯৯৬), বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে জাতীয় শিক্ষক দিবস স্বর্ণপদক (২০০৩), ড. এস.ডি চৌধুরী স্বর্ণপদক (২০০৪) বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমীর ফেলো নির্বাচিত হন ।

বিদ্যানুরাগী অধ্যাপক আমিনুল হক ২৯শে আগস্ট, ২০২২ তারিখে ঢাকার গুলশানে নিজ বাসভবনে ৯৩ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। [ইয়ারুল কবীর]]