হক, আবদুল১

হক, আবদুল১ (১৯১৮-১৯৯৭)  সাংবাদিক, লেখক। বৃহত্তর  রাজশাহী জেলার চাঁপাইনবাবগঞ্জে তাঁর জন্ম। তিনি  রাজশাহী কলেজ থেকে ইংরেজিতে অনার্সসহ বিএ (১৯৪৪) এবং  কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে এমএ (১৯৪৬) পাস করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালেই ১৯৪৫ সালে তিনি দৈনিক  আজাদ পত্রিকায় কিছুদিন সাব-এডিটর হিসেবে কাজ করেন এবং শিক্ষা সমাপনান্তে এর বার্তা বিভাগে একই পদে যোগদান করেন। পরে তিনি মাসিক  সওগাত-এর  সহযোগী সম্পাদক নিযুক্ত হন।

১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের পর আবদুল হক পাকিস্তান সরকারের ঢাকাস্থ আঞ্চলিক তথ্য দফতরে স্টাফ রাইটার পদে যোগদান করেন এবং পরে সহকারী প্রকাশনা অফিসার নিযুক্ত হন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি ঢাকাস্থ কেন্দ্রীয় বাংলা উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী প্রকাশনা অফিসার পদে নিযুক্ত হন এবং পরে প্রকাশনা অফিসার পদে পদোন্নতি লাভ করেন। পরের বছর কেন্দ্রীয় বাংলা উন্নয়ন বোর্ডকে বাংলা একাডেমীর সঙ্গে সংযুক্ত করা হলে তিনি সমন্বিত একাডেমীর উপপরিচালক নিযুক্ত হন এবং পরে পরিচালক পদে পদোন্নতি লাভ করে ১৯৮১ সালে অবসরগ্রহণ করেন।

আবদুল হকের প্রথম রচনা ‘লুৎফউন্নেসা’ শীর্ষক কবিতা ১৯৪০ সালে মাসিক মোহাম্মদীতে প্রকাশিত হয়। পরের বছর একই পত্রিকায় প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম  ছোটগল্প ‘টহল’। তাঁর প্রথম প্রবন্ধ ‘সাহিত্য সৃষ্টির প্রেরণা’ প্রকাশিত হয় ১৯৪১ সালে।

আবদুল হক একজন যুক্তিবাদী ও মননশীল লেখক হিসেবে স্বীকৃত। সমকালীন রাজনীতি, সমাজ ও সংস্কৃতির ওপর প্রখর দৃষ্টি রেখে তিনি সৃজনশীল প্রবন্ধ রচনা করেছেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গ্রন্থ: প্রবন্ধ ক্রান্তিকাল (১৯৬২), সাহিত্য ঐতিহ্য মূল্যবোধ (১৯৬৮), বাঙালী জাতীয়তাবাদ ও অন্যান্য প্রসঙ্গ (১৯৭৩), সাহিত্য ও স্বাধীনতা (১৯৭৪), ভাষা আন্দোলনের আদিপর্ব  (১৯৭৬), নিঃসঙ্গ চেতনা ও অন্যান্য প্রসঙ্গ (১৯৮৪), চেতনার এলবাম ও বিবিধ প্রসঙ্গ (১৯৯৩), লেখকের রোজনামচায় চার দশকের রাজনীতি পরিক্রমা: প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ (১৯৯৩); ছোটগল্প রোকেয়ার নিজের বাড়ী (১৯৬৭), ছিন্ন পত্রিকার কাহিনী (১৯৮১); মৌলিক নাটক অদ্বিতীয়া (১৯৫৬), ফেরদৌসী (১৯৬৪), সোনার ডিম (১৯৭৬); অনুবাদ নাটক পুতুলের সংসার (১৯৬৬), প্রেতাত্মা (১৯৬৬), মহাস্থপতি (১৯৬৬), রসমার্স হোম (১৯৬৭), হেড্ডা গাবলার (১৯৬৭), ইলিনয়ে অ্যাব লিঙ্কন (১৯৬৭), জন গ্যাব্রিয়েল বর্কম্যান (১৯৬৮), গণশত্রু (১৯৯২); ডিটেকটিভ গল্প কালো মুখোশ (আবুল আহসান ছদ্মনামে লিখিত, ১৯৫৮); সম্পাদনা কাজী আবদুল ওদুদ রচনাবলী (২ খন্ড) এবং কাজী মোতাহার হোসেন রচনাবলী (২ খন্ড)।

বাংলা ভাষা ও বাঙালি জাতীয়তাবাদ প্রসঙ্গে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত তাঁর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি প্রবন্ধ: ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা’ (১৯৪৭), ‘বাংলা ভাষা বিষয়ক প্রস্তাব’ (১৯৪৭), ‘উর্দু রাষ্ট্রভাষা হলে’ (১৯৪৭), ‘আরবী হরফে বাংলা’ (১৯৪৯), ‘মুসলিম জাতীয়তাবাদ: পুনর্নিরীক্ষা’ (১৯৬৬), ‘যুদ্ধ ও সাম্প্রদায়িকতা’ (১৯৬৬) ইত্যাদি। শেষোক্ত প্রবন্ধ দুটি ‘আবু আহসান’ ছদ্মনামে রচিত এবং মাসিক  সমকাল পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এ প্রবন্ধ প্রকাশের জন্য সমকালের দুটি সংখ্যা তৎকালীন সরকার বাজেয়াপ্ত করে।

আবদুল হক সাহিত্য ঐতিহ্য মূল্যবোধ গ্রন্থের জন্য দাউদ পুরস্কার (১৯৬৮), প্রবন্ধ সাহিত্যের জন্য বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৭৪) এবং বাংলা সাহিত্যে সামগ্রিক অবদানের জন্য আবুল হাসনাত সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৮) ও হিলালী স্মৃতি স্বর্ণপদক (১৯৯০) লাভ করেন।  [ওয়াকিল আহমদ]