সেনগুপ্ত, শচীন্দ্রনাথ

সেনগুপ্ত, শচীন্দ্রনাথ (১৮৯২-১৯৬১)  নাট্যকার, সাংবাদিক। ১২৯৯ বঙ্গাব্দের ৪ শ্রাবণ  (জুলাই ১৮৯২) খুলনা জেলার সেনহাটি গ্রামে তাঁর জন্ম। পিতা সত্যচরণ সেনগুপ্তের কর্মস্থল রংপুরে তিনি শিক্ষালাভ করেন। সেখানে বিপ্লবী  প্রফুল­ চাকী ছিলেন তাঁর সহপাঠী। ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে স্বদেশী আন্দোলনে যোগ দিয়ে শচীন্দ্রনাথ বিদ্যালয় ত্যাগ করেন এবং  অনুশীলন সমিতির সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার জাতীয় বিদ্যালয় থেকে প্রবেশিকা পাস করে তিনি বিএ পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন। পরে তিনি কটক মেডিক্যাল স্কুলে চিকিৎসাবিদ্যা ও ময়মনসিংহে কবিরাজি শেখেন।

শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত

কর্মজীবনের শুরুতে শচীন্দ্রনাথ কিছুদিন একটি কলেজে অধ্যাপনা করেন; পরে সাংবাদিকতায় যান। তাঁর সাংবাদিক জীবনের শুরু দৈনিক কৃষক ও ভারত পত্রিকায় সহসম্পাদকরূপে। এছাড়া তিনি সাপ্তাহিক হিতবাদী, বিজলী ( বারীন্দ্রকুমার ঘোষ প্রতিষ্ঠিত), আত্মশক্তি  প্রভৃতি পত্রিকাও সম্পাদনা করেন।

শচীন্দ্রনাথ বিশেষ কৃতিত্ব অর্জন করেন নাটক রচনায়। তাঁর রচিত ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক নাটকের মূল প্রতিপাদ্য দেশাত্মবোধ। সামাজিক নাটক রচনায়ও তিনি দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও হিন্দু-মুসলমানের মিলনের বাণী তাঁর নাটকের অপর বৈশিষ্ট্য। ইতিহাসনিষ্ঠায়, কাহিনীর দৃঢ় সংবদ্ধতায় ও শক্তিশালী সংলাপে শচীন্দ্রনাথের নাটক সমৃদ্ধ। তাঁর উল্লেখযোগ্য ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক নাটকগুলি হলো: গৈরিক পতাকা (১৯৩০), দেশের দাবি  (১৯৩৪), রাষ্ট্রবিপ্লব (১৯৪৪), সিরাজুদ্দৌলা (১৯৩৮), ধাত্রীপান্না (১৯৪৮), সবার উপরে মানুষ সত্য (১৯৫৭), আর্তনাদ ও জয়নাদ (১৯৬১)। তাঁর ঐতিহাসিক নাটক সিরাজুদ্দৌলা সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা অর্জন করে। ১৯৪৬ সালে কলকাতার রঙ্গমঞ্চে অভিনীত রাষ্ট্রবিপ্লব  নাটকটিও বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল।

রক্তকমল (১৯২৯), ঝড়ের রাতে (১৯৩১), নার্সিংহোম (১৯৩৩), স্বামী-স্ত্রী (১৯৩৭), তটিনীর বিচার (১৯৩৯), মাটির মায়া, কাঁটা ও কমল, প্রলয়, জননী প্রভৃতি তাঁর সামাজিক নাটক। এসব নাটকে ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবনের বিচিত্র জটিলতা ও সমস্যা বিধৃত হয়েছে। এছাড়াও তাঁর রচিত কিশোরদের নাটক, প্রবন্ধ, ভ্রমণকাহিনী ও অনুবাদ গ্রন্থ আছে। বেসরকারি সাংস্কৃতিক দলের নেতা হিসেবে তিনি রাশিয়া, নরওয়ে, পোল্যান্ড, চীন, সিংহল প্রভৃতি দেশ ভ্রমণ করেন। ১৯৬১ সালের  ৫ মার্চ তাঁর মৃত্যু হয়।  [সুশান্ত সরকার]