সুলকবহর

সুলকবহর সুলতানি আমলের সমুদ্র বন্দর। চট্টগ্রাম মহানগরের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের সুলকবহর মৌজায় কর্ণফুলী নদী তীরে সম্ভবত বন্দরটি অবস্থিত ছিল। এই বন্দর মধ্যযুগে সমুদ্র-পথে আমদানি-রপ্তানির একটি গুরুত্বপূর্ণ বঙ্গোপসাগরীয় কেন্দ্র। সুলকবহর নামটি আরবি ভাষা থেকে উদ্ভূত, এর অর্থ সমুদ্র যাত্রার স্থান। সুলকবহরকে কেন্দ্র করে পণ্যদ্রব্যের বড় বড় বাজার সৃষ্টির আদি-কাহিনী লুকিয়ে আছে এর সন্নিহিত এলাকার বিভিন্ন স্থানের নামের সঙ্গে। চন্দনকাঠ ও কার্পাস রপ্তানির আড়ত এখন আর খুঁজে না পাওয়া গেলেও চন্দনপুরা এবং কাপাসগোলা স্থান-নাম বর্তমানে টিকে আছে। আদি এবং মধ্যযুগে বাংলার বন্দর থেকে রপ্তানির একটি প্রধান পণ্য ছিল কাপড়। সুলকবহর-ষোলশহর এলাকার আর একটি জায়গার নাম ‘গুদির পাড়া’। লোকশ্রুতি মোতাবেক সফররত আরব ব্যবসায়ীদের জাহাজ নির্মাণ ও মেরামতের বিখ্যাত কেন্দ্র ছিল এই পাড়া। এলাকাটিতে এখন পুকুর খোঁড়া বা কোন কাজে মাটি কাটার সময় বেরিয়ে আসে ভাঙ্গা জাহাজের টুকরো। ডক হিসেবে ব্যবহূত একটি টিলা এখনও অস্তিত্ব বজায় রেখেছে - নাম ‘গুদির পাহাড়’। গৌথ একটি আরবি শব্দ, যার অর্থ ডুব দেওয়া বা ঝাঁপ দেওয়া। নতুন বানানো বা মেরামত করা জাহাজ সম্ভবত এই মাটির ডক থেকেই পিছলে যেত নদীতে। আরবি গৌথ শব্দটি স্থানীয় ভাবে উচ্চারিত হয় গুদি। কর্ণফুলীর তীরে একটি উঁচু জায়গায় বিশ শতকের শুরুতে ‘ব্রিগ সিপ’ নির্মাণের বর্ণনা পাওয়া যায় প্রবাসী সাময়িকীতে - ঐতিহ্যগত প্রযুক্তির স্মারক বহন করছে এই উদ্যোগ। বন্দরসমূহে মহলত-ই সাইর-এর একটি মহল হিসেবে জিহাত গুদি (গোদা) অথবা মরামত জাহাজাত-এর নাম উল্লেখ করা হয়ে থাকে। কর্ণফুলীর মোহনা থেকে প্রায় ১৯.৩১ কিমি. ভেতরে সুলকবহরের অবস্থান। সাত শতকে হরিকেল রাজ্যের উত্থান-কাল থেকে ভারত মহাসাগরীয় নৌপথে একটি সমুদ্র-বন্দর হিসেবে চট্টগ্রাম সুনির্দিষ্ট। সুলতানি আমলে মুসলিম তীর্থযাত্রা এবং কাপড় ও চন্দন কাঠ ইত্যাদি সামগ্রী রপ্তানির মূখ্য ছিল বন্দর সুলকবহর।  [শামসুল হোসাইন]