সুপ্রিম জুডিশিয়াল কমিশন

সুপ্রিম জুডিশিয়াল কমিশন সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগের উদ্দেশ্যে ব্যক্তিবর্গের নাম সুপারিশ করার জন্য ২০০৮ সালের মার্চ মাসে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কমিশন অধ্যাদেশ জারি করা হয়। অধ্যাদেশে গোড়াতে এ ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল যে, প্রধান বিচারপতিকে চেয়ারম্যান করে এ কমিশন গঠিত হবে। কমিশনের অন্য সদস্যরা হবেন আইনমন্ত্রী, আপিল বিভাগের দুই সর্বাধিক জ্যেষ্ঠ বিচারক, এটর্নি জেনারেল, দু’জন আইন প্রণেতা যাদের একজনকে মনোনয়ন দেবেন জাতীয় সংসদ এবং অপরজনকে মনোনয়ন দেবেন বিরোধী দলের নেতা, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এবং আইন সচিব। সুপ্রিম জুডিশিয়াল কমিশন অতিরিক্ত বিচারকের শূণ্যপদে নিয়োগের জন্য দু’জনের নাম সুপারিশ করবে। কমিশন আপিল বিভাগের বিচারকের প্রতিটি শূণ্যপদে পদোন্নতি দেওয়ার জন্য হাইকোর্ট বিভাগে কর্মরত বিচারকদের মধ্য থেকে তিন থেকে পাঁচ জনের নামও সুপারিশ করবে। নাম সুপারিশ করার আগে কমিশন সুপ্রিম কোর্টের বিচারক হিসেবে নিয়োগ লাভের যোগ্যতাসম্পন্ন যেকোন ব্যক্তির সাক্ষাৎকার নিতে পারবে। অতিরিক্ত বিচারক পদে নিয়োগের জন্য নাম সুপারিশ করার আগে কমিশন প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, পেশাগত যোগ্যতা, সদিচ্ছা ও সততা যাচাই করে দেখবে।

আপিল বিভাগের বিচারকের পদের জন্য কমিশন বিচারকদের বিচারকার্য সম্পাদনের ক্ষেত্রে যোগ্যতা, সততা, সুনাম পরীক্ষা করে দেখবে। আইন মন্ত্রণালয় হাইকোর্টের বিচারকের পদ বা হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারকের পদের জন্য নামের তালিকা কমিশনের কাছে পাঠাবে। তবে তালিকায় নেই এমন যেকোন ব্যক্তিকে মনোনীত করার অধিকার কমিশনের সংরক্ষিত থাকবে, কিংবা কমিশন এমন ব্যক্তির নাম তালিকাভুক্ত করার জন্য মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানাতে পারবে। কমিশন তার সুপারিশমালা রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করার জন্য উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাবে। অধ্যাদেশের ৯(৪) অনুচ্ছেদে আরোও বিধান রাখা হয়েছে যে, সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগের প্রশ্নে কমিশনের সুপারিশ মেনে চলতে রাষ্ট্রপতি বাধ্য নন।

জনৈক আইনজীবীর দায়ের করা রীট পিটিশনের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট বিভাগ এ অধ্যাদেশকে কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না তার কারণ দর্শানোর জন্য সরকারের উপর রুল নিশি জারী করেন এবং সেই সঙ্গে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কমিশনে কাজকর্ম তিন মাসের জন্য স্থগিত ঘোষণা করেন। এরপর অধ্যাদেশ সংশোধন করে এ ব্যবস্থা করা হয় যে, কমিশন প্রধান বিচারপতি, সুপ্রিম কোর্টের প্রত্যেক বিভাগের তিন জন বিচারক, আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা বা মন্ত্রী এবং সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতিকে নিয়ে গঠিত হবে। তিন জন বিচারকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বিভাগের একটি বিশেষ বেঞ্চ রুলটির শুনানি গ্রহণ করেন এবং ২০০৮ সালের ৭ আগস্ট রায় দেন। বিশেষ বেঞ্চের অধিকাংশ বিচারক রাষ্ট্রপতিকে কমিশনের সুপারিশ অগ্রাহ্য করার ক্ষমতা দেয়া সংক্রান্ত অধ্যাদেশের ৯(৪) অনুচ্ছেদটিকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করেন এবং অধ্যাদেশের বাকি অংশকে সংবিধানসম্মত বলে রায় দেন।  [কাজী এবাদুল হক]