সিদ্দিকী, নূরে আলম: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

("'''সিদ্দিকী, নূরে আলম''' (১৯৪৪-২০২৩) বিশিষ্ট ছাত্র নেতা, ছাত্রলীগের সভাপতি, স্বাধীন বাংনা কেন্দ্রী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, সাবেক সংসদ সদস্..." দিয়ে পাতা তৈরি)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
'''সিদ্দিকী, নূরে আলম''' (১৯৪৪-২০২৩) বিশিষ্ট ছাত্র নেতা, ছাত্রলীগের সভাপতি, স্বাধীন বাংনা কেন্দ্রী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, সাবেক সংসদ সদস্য এবং কিংবদন্তী ...।
'''সিদ্দিকী, নূরে আলম''' (১৯৪৪-২০২৩) বিশিষ্ট ছাত্র নেতা, ছাত্রলীগের সভাপতি, স্বাধীন বাংনা কেন্দ্রী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, সাবেক সংসদ সদস্য এবং কিংবদন্তী ...।


[[Image:SiddiquiNureAlam.jpg|right|thumbnail|200px|নূরে আলম সিদ্দিকী]]
নূরে আলম সিদ্দিকীর জন্ম ১৯৪৪ সালের ২৬শে মে। তাঁদের পৈতৃক বাড়ি ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলায়। তাঁর পিতার নাম নূরুন্নবী সিদ্দিকী এবং মাতার নাম নূরুন্নাহার সিদ্দিকী। তাঁর পিতা রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত এবং সোহরাওয়ার্দীর অনুসারী ছিলেন। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর তাঁদের পরিবার যশোর জেলার ঝিনাইদহে চলে আসে এবং স্থায়ী ভাবে বসবাস শুরু করে।  
নূরে আলম সিদ্দিকীর জন্ম ১৯৪৪ সালের ২৬শে মে। তাঁদের পৈতৃক বাড়ি ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলায়। তাঁর পিতার নাম নূরুন্নবী সিদ্দিকী এবং মাতার নাম নূরুন্নাহার সিদ্দিকী। তাঁর পিতা রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত এবং সোহরাওয়ার্দীর অনুসারী ছিলেন। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর তাঁদের পরিবার যশোর জেলার ঝিনাইদহে চলে আসে এবং স্থায়ী ভাবে বসবাস শুরু করে।  


৬ নং লাইন: ৭ নং লাইন:
পারিবারিক রাজনৈতিক ঐতিহ্যের মধ্যে নূরে আলম সিদ্দিকী রেড়ে ওঠেন। স্কুল জীবন থেকেই রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ শুরু। তিনি ১৯৬২ সালে শরীফ শিক্ষা কমিশন ও ১৯৬৪ সালে হামুদুর রহমান শিক্ষা কমিশন রিপোর্টবিরোধী আন্দোল, ৬ দফা ১১ দফা আন্দোলন, ৬৯-এ আইয়ুববিরোধী গণঅভূত্থান, ৭০-এর নির্বাচন, ১৯৭১ সালের ২রা মার্চ থেকে ২৫ শে মার্চ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর আহবানে পূর্ব বাংলার সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনে বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করেন। ৬-দফা আন্দোলনকালে তিনি দীর্ঘ সময়ের জন্য কারাবরণ করেন। ১৯৭০-৭২ সাল পর্যন্ত তিনি ছাত্রলীগের সভাপতি এবং ১৯৭১ সালের মার্চের শুরুতে গঠিত ‘স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ’-এর তিনি আহবায়ক ছিলেন। তিনি ৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে অন্যতম সংগঠকের ভূমিকা পালন করেন। ঐ সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে একাধিকবার তার বক্তৃতা প্রচারিত হয়।
পারিবারিক রাজনৈতিক ঐতিহ্যের মধ্যে নূরে আলম সিদ্দিকী রেড়ে ওঠেন। স্কুল জীবন থেকেই রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ শুরু। তিনি ১৯৬২ সালে শরীফ শিক্ষা কমিশন ও ১৯৬৪ সালে হামুদুর রহমান শিক্ষা কমিশন রিপোর্টবিরোধী আন্দোল, ৬ দফা ১১ দফা আন্দোলন, ৬৯-এ আইয়ুববিরোধী গণঅভূত্থান, ৭০-এর নির্বাচন, ১৯৭১ সালের ২রা মার্চ থেকে ২৫ শে মার্চ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর আহবানে পূর্ব বাংলার সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনে বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করেন। ৬-দফা আন্দোলনকালে তিনি দীর্ঘ সময়ের জন্য কারাবরণ করেন। ১৯৭০-৭২ সাল পর্যন্ত তিনি ছাত্রলীগের সভাপতি এবং ১৯৭১ সালের মার্চের শুরুতে গঠিত ‘স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ’-এর তিনি আহবায়ক ছিলেন। তিনি ৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে অন্যতম সংগঠকের ভূমিকা পালন করেন। ঐ সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে একাধিকবার তার বক্তৃতা প্রচারিত হয়।


[[Image:SiddiquiNureAlam.jpg|right|thumbnail|200px|নূরে আলম সিদ্দিকী]]
নূরে আলম সিদ্দিকী উদার গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে বিশ্বাসী এবং বামপন্থী রাজনীতির ঘোর বিরোধী ছিলেন। স্বাধীনতা-উত্তর বঙ্গবন্ধু সরকারের সময় ১৯৭৩ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাঁর নির্বাচনী এলাকা থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকা-ের পর ১৯৭৮ সালে তিনি আওয়ামী লীগ ছেড়ে মিজানুর রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বে গঠিত পাল্টা আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। পরবর্তীতে তিনি শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মূল আওয়ামী লীগে ফিরে আসেন। উল্লেখ স্বাধীনতা-উত্তর ক্রমশ তিনি ব্যবসার দিকে ঝুঁকে পড়েন।
নূরে আলম সিদ্দিকী উদার গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে বিশ্বাসী এবং বামপন্থী রাজনীতির ঘোর বিরোধী ছিলেন। স্বাধীনতা-উত্তর বঙ্গবন্ধু সরকারের সময় ১৯৭৩ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাঁর নির্বাচনী এলাকা থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকা-ের পর ১৯৭৮ সালে তিনি আওয়ামী লীগ ছেড়ে মিজানুর রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বে গঠিত পাল্টা আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। পরবর্তীতে তিনি শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মূল আওয়ামী লীগে ফিরে আসেন। উল্লেখ স্বাধীনতা-উত্তর ক্রমশ তিনি ব্যবসার দিকে ঝুঁকে পড়েন।



১৭:৫৬, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

সিদ্দিকী, নূরে আলম (১৯৪৪-২০২৩) বিশিষ্ট ছাত্র নেতা, ছাত্রলীগের সভাপতি, স্বাধীন বাংনা কেন্দ্রী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, সাবেক সংসদ সদস্য এবং কিংবদন্তী ...।

নূরে আলম সিদ্দিকী

নূরে আলম সিদ্দিকীর জন্ম ১৯৪৪ সালের ২৬শে মে। তাঁদের পৈতৃক বাড়ি ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলায়। তাঁর পিতার নাম নূরুন্নবী সিদ্দিকী এবং মাতার নাম নূরুন্নাহার সিদ্দিকী। তাঁর পিতা রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত এবং সোহরাওয়ার্দীর অনুসারী ছিলেন। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর তাঁদের পরিবার যশোর জেলার ঝিনাইদহে চলে আসে এবং স্থায়ী ভাবে বসবাস শুরু করে।

নূরে আলম সিদ্দিকীর প্রাথমিক শিক্ষা মুর্শিদাবাদ জেলার কবন্দি গ্রামের স্কুলে। তিনি ঝিনাইদহ মডেল হাই স্কুল থেকে মেট্রিকুলেশন এবং কেশবচন্দ্র পাল (কে.সি পাল) কলেজ খেকে ১৯৬২ সালে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। ১৯৬৪ সালে তিনি জগন্নাথ কলেজ থেকে বি.এ পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং সেখান থেকে বাংলা, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও ইতিহাস বিষয়ে এম.এ ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৭০ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি আইনশাস্ত্রে ডিগ্রি লাভ করেন। পারিবারিক রাজনৈতিক ঐতিহ্যের মধ্যে নূরে আলম সিদ্দিকী রেড়ে ওঠেন। স্কুল জীবন থেকেই রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ শুরু। তিনি ১৯৬২ সালে শরীফ শিক্ষা কমিশন ও ১৯৬৪ সালে হামুদুর রহমান শিক্ষা কমিশন রিপোর্টবিরোধী আন্দোল, ৬ দফা ১১ দফা আন্দোলন, ৬৯-এ আইয়ুববিরোধী গণঅভূত্থান, ৭০-এর নির্বাচন, ১৯৭১ সালের ২রা মার্চ থেকে ২৫ শে মার্চ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর আহবানে পূর্ব বাংলার সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনে বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করেন। ৬-দফা আন্দোলনকালে তিনি দীর্ঘ সময়ের জন্য কারাবরণ করেন। ১৯৭০-৭২ সাল পর্যন্ত তিনি ছাত্রলীগের সভাপতি এবং ১৯৭১ সালের মার্চের শুরুতে গঠিত ‘স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ’-এর তিনি আহবায়ক ছিলেন। তিনি ৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে অন্যতম সংগঠকের ভূমিকা পালন করেন। ঐ সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে একাধিকবার তার বক্তৃতা প্রচারিত হয়।

নূরে আলম সিদ্দিকী উদার গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে বিশ্বাসী এবং বামপন্থী রাজনীতির ঘোর বিরোধী ছিলেন। স্বাধীনতা-উত্তর বঙ্গবন্ধু সরকারের সময় ১৯৭৩ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাঁর নির্বাচনী এলাকা থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকা-ের পর ১৯৭৮ সালে তিনি আওয়ামী লীগ ছেড়ে মিজানুর রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বে গঠিত পাল্টা আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। পরবর্তীতে তিনি শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মূল আওয়ামী লীগে ফিরে আসেন। উল্লেখ স্বাধীনতা-উত্তর ক্রমশ তিনি ব্যবসার দিকে ঝুঁকে পড়েন।

২০২৩ সালের ২৯শে মার্চ ঢাকার একটি হাসপাতালে ৭৯ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁরই নির্মিত সাভারের একটি মসজিদ প্রাঙ্গণে তাঁর মৃতদেহ সমাহিত করা হয়। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী পারভীন আলম এবং ১ কন্যা ও ২ প্রত্র সন্তান রেখে যান। তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র তাহজীব আলম সিদ্দিকী বর্তমানে আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য। [হারুন-অর-রশিদ]

তথ্যসূত্র হারুন-অব রশিদ (সম্পা.), বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, ৫ম খণ্ড, (বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি); The Daily Star (ঢাকা), ৩০ মার্চ ২০২৩.