সিদ্দিকী, জিল্লুর রহমান

Mukbil (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ১৭:৪১, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ ("'''সিদ্দিকী, জিল্লুর রহমান''' (১৯২৮-২০১৪) শিক্ষাবিদ, লেখক ও গবেষক। জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী ১৯২৮ সালের ২৩শে ফেব্রুয়ারি ঝিনাইদহ জেলার দুর্গাপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বা..." দিয়ে পাতা তৈরি)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

সিদ্দিকী, জিল্লুর রহমান (১৯২৮-২০১৪) শিক্ষাবিদ, লেখক ও গবেষক। জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী ১৯২৮ সালের ২৩শে ফেব্রুয়ারি ঝিনাইদহ জেলার দুর্গাপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা ছিলেন কলকাতার নর্মাল স্কুলের শিক্ষক। পিতামহের প্রতিষ্ঠিত গ্রামের পাঠশালায় জিল্লুর রহমানের প্রাথমিক পড়ালেখা শুরু হয়। কিন্তু বাবার চাকুরির বদলিজনিত কারণে জিল্লুর রহমান বিভিন্ন স্কুলে তার প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। তিনি বাঁকুড়া জিলা স্কুল হতে পঞ্চম ও ষষ্ঠ শ্রেণী, জলপাইগুডির জিলা স্কুল হতে ৭ম শ্রেণী এবং ৮ম থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত পড়েন যশোর জিলা স্কুলে। ১৯৪৫ সালে এ স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করে ভর্তি হন কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে ইংরেজি সাহিত্যে বি.এ ও এম.এ ডিগ্রি গ্রহণ করেন।

জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী

তিনি ১৯৫২ সালে রেডিও পাকিস্তান ঢাকা কেন্দ্রে প্রোগ্রাম সহকারী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন এবং একই বছর অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর শিক্ষার জন্য ভর্তি হন। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে দেশে ফিরে ১৯৫৪ সালে ঢাকা কলেজে শিক্ষকতায় যোগ দেন। পরবর্তীতে, ১৯৫৫ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে প্রভাষক পদে যোগদান করেন। ১৯৫৫ হতে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৪-৭৫ সালে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের খ-কালীন পরিচালক ছিলেন এবং ১৯৭৬ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য হিসেবে যোগ দেন। দু’মেয়াদে দায়িত্বপালন শেষে ১৯৮৪ সালে উপাচার্য পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন। অবসর পরবর্তী তিনি বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং প্রফেসর, বেসরকারি গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯০-৯১ সালে দেশের প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন।

দক্ষিণ এশিয়ায় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের একজন কর্মী এবং বিভিন্ন সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। বাংলা একাডেমি ও এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশ-এর ফেলো, বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সমিতির সভাপতি; নাগরিক নাট্য চক্রের সভাপতি ইত্যাদি বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অবদান রেখেছেন।

বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় কবিতা, প্রবন্ধ, অনুবাদ ও গবেষণামূলক অনেক রচনা তাঁর রয়েছে। অনুবাদ করেছেন শেক্সপিয়াারের অনেক বই। এছাড়া, বাংলা একাডেমির ইংরেজি থেকে বাংলা অভিধানের সম্পাদক ছিলেন। তার উল্লেখ্যযোগ্য বই হচ্ছে- বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ, স্যামসন অ্যাগনিমটিজ মিল্টন: কাব্যানুবাদ, হৃদয়ে জনপদে: আমার দেশ আমার ভাষা, চাঁদ ডুবে গেলে: কবিতা, প্রবাসে প্রতিদিন: ভ্রমণ দিনলিপি, যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারে ছিলাম, বাঙালীর আত্মপরিচয়, গ্রামের নাম খিদিরপুর, জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী রচনাবলী-১, ২, ৩ খণ্ড, Literature of Bangladesh and Other Essays, Visions and Revisions, Quest For a Civil Society, Higher Education in Bangladesh, ইত্যাদি।

জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী ১৯৭৭ সালে ‘আলাওল সাহিত্য পুরস্কার’ পান। দুই বছর পর ১৯৭৯ সালে লাভ করেন ‘বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার’, ১৯৯০ সালে ‘কাজী মাহবুবুল্লাহ বেগম ট্রাস্ট এওয়ার্ড’ এবং ১৯৯৮ সালে ‘অলক্ত সাহিত্য পুরস্কার’ ও ২০০৩ সালে ‘এম এ হক স্বর্ণপদক’। ২০১০ সালে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ উপাধি ‘স্বাধীনতা পুরস্কারে’ ভূষিত হন। তার স্ত্রীর নাম মিসেস কায়সার। এ দম্পতির তিন ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী ২০১৪ সালের ১১ই নভেম্বর ঢাকার মৃত্যুবরণ করেন। [শরীফ আহমেদ চৌধুরী]