সিংহ, নূতন চন্দ্র
সিংহ, নূতন চন্দ্র (১৯০০-১৯৭১) ঔষধশিল্প উদ্যোক্তা, মুক্তিযুদ্ধে শহীদ। জন্ম ১৯০০ সালের ১ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম জেলার রাউজান থানার গহিরা গ্রামে। পিতার নাম অখিল চন্দ্র সিংহ ও মাতা গয়েশ্বরী সিংহ। নূতন চন্দ্র সিংহ জগৎপুর পূর্ণানন্দ আশ্রমে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন।
নূতন চন্দ্র শৈশবে পিতার সঙ্গে আকিয়াব যান এবং সেখানে প্রথমে মুদি দোকান এবং পরে সাবান ও ঔষধ তৈরির ব্যবসা শুরু করেন। দীর্ঘদিন সেখানে ব্যবসা পরিচালনার পর তিনি বিহারের কুন্ডধাম তীর্থ দর্শন করে চট্টগ্রাম ফিরে আসেন এবং কুন্ডেশ্বরী মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। পরে তিনি ১৯৪৬ সালে নিজ গ্রাম গহিরায় শ্রী কুন্ডেশ্বরী ঔষধালয় নামে একটি আয়ুর্বেদ ঔষধ কারখানা স্থাপন করেন।
শিক্ষা বিস্তার এবং সমাজসেবায় নূতন চন্দ্রের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তিনি নিজ অর্থ ব্যয়ে ১৯৬০ সালে কুন্ডেশ্বরী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কুন্ডেশ্বরী বালিকা বিদ্যামন্দির, ১৯৬৯ সালে কুন্ডেশ্বরী মহিলা কলেজ স্থাপন করেন। এ ছাড়া তিনি কুন্ডেশ্বরী ভবন এবং ডাকঘর স্থাপন করেন।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি সৈন্যবাহিনী ‘অপারেশন সার্চলাইট’ কার্যক্রমের মাধ্যমে হত্যাকান্ড শুরু করলে নূতন চন্দ্র সিংহ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক এবং তাঁদের পরিবার-পরিজনকে কুন্ডেশ্বরী প্রতিষ্ঠানসমূহে আশ্রয় দেন। পরে তিনি তাঁদের নিরাপদে ভারতগমনে সহায়তা করেন। চট্টগ্রাম পুনর্দখলের পর পাকিস্তানি সৈন্যরা ১৯৭১ সালের ২৩ এপ্রিল স্থানীয় রাজাকারদের সহযোগিতায় কুন্ডেশ্বরী আক্রমণ করলে নূতন চন্দ্র সিংহ নিহত হন।
নূতন চন্দ্র সিংহ তাঁর শিক্ষানুরাগ এবং সমাজসেবার স্বীকৃতি স্বরূপ নিম্নোক্ত সম্মাননা (মরণোত্তর) লাভ করেন: বাংলাদেশ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি প্রদত্ত শিক্ষানুরাগী সম্মাননা (১৯৯২), উত্তর কাট্টলী আলহাজ্ব মোস্তফা হাকিম ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন কর্তৃক শিক্ষা বিস্তারে অবদানের জন্য প্রদত্ত সম্মাননা (২০০৪), চট্টগ্রাম সমিতি (ঢাকা) প্রদত্ত সমাজসেবার জন্য পুরস্কার (২০০৫), লায়ন্স জেলা ৩১৫ বি-৪ বাংলাদেশ কর্তৃক সমাজসেবার জন্য প্রদত্ত স্বর্ণপদক (২০০৬), শেফাউলমূলক হাকিম হাবিবুর রহমান ফাউন্ডেশন কর্তৃক আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় অবদানের জন্য প্রদত্ত পুরস্কার (২০০৬) এবং মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকার জন্য ঢাকা প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধা (চট্টগ্রাম অঞ্চল) প্রদত্ত সম্মাননা। [মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল]