সাতকানিয়া উপজেলা

সাতকানিয়া উপজেলা (চট্টগ্রাম জেলা)  আয়তন: ২৮০.৯৭ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২২°০১´ থেকে ২২°১৩´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°৫৭´ থেকে ৯২°১০´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে চন্দনাইশ উপজেলা, দক্ষিণে লোহাগাড়া (চট্টগ্রাম) উপজেলা, পূর্বে বান্দরবান সদর উপজেলা, পশ্চিমে বাঁশখালী ও আনোয়ারা উপজেলা।

জনসংখ্যা ৩৮৪৮০৬; পুরুষ ১৮৬০০৭, মহিলা ১৯৮৭৯৯। মুসলিম ৩৪৭০১৩, হিন্দু ৩৪১১৩, বৌদ্ধ ৩৫২০, খ্রিস্টান ৩১ এবং অন্যান্য ১২৯। এ উপজেলায় মগ আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।

জলাশয় প্রধান নদী: সাঙ্গু।

প্রশাসন সাতকানিয়া থানা গঠিত হয় ১৯১৭ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
১৭ ৭৩ ৮৪ ৫৪৩৪৯ ৩৩০৪৫৭ ১৩৭০ ৫৭.২ (২০০১) ৫১.৬
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
- ১৯ ৪৫০০১ - ৬১.৪
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
১৭.১১ (২০০১) ৯৩৪৮ ২৮৩৮ (২০০১) ৫২.০
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
আমিলাইশ ১২ ১০৮২ ৫০৬৪ ৫৩৭০ ৪২.৪
এওচিয়া ১৪ ৫৯০৭ ১১৯৮৩ ১২১৩৭ ৫০.৬
কাঞ্চনা ৫১ ৩৩৪২ ১০১৬৪ ১১৪১১ ৫০.৮
কালিয়াইশ ৪৭ ২০৭৬ ১০৩৯২ ১০১৭১ ৫২.৮
কেওচিয়া ৫৪ ৩৯৬৩ ১২৯৯১ ১২০৪০ ৫৯.৯
খাগরিয়া ৫৮ ২১৩৯ ১২৯০৮ ১৩৯২৩ ৪৬.৬
চরতি ২৯ ৫৮৫৯ ১৪৫৪৯ ১৫৩৩৪ ৪৭.৭
ঢেমশা ৩৬ ২৮৫৮ ৮১৫৭ ৭৮৫৮ ৫৩.৭
ধর্মপুর ৪০ ১৬২৬ ৫৩২৫ ৫৮৬৬ ৫১.৭
নলুয়া ৬৯ ৩১৭৭ ৮৪৫৫ ৯৪৫৫ ৫০.১
পশ্চিম ঢেমশা ৯৪ ১২২৫ ৩৮৬০ ৩৯৭১ ৬২.৪
পুরানগড় ৭৬ ৬৩৩৭ ৮৬৩০ ৯১৭৯ ৪৫.০
বাজালিয়া ২১ ৪৮৬৬ ৮৭২১ ৯০৭৮ ৫৭.৪
মাদর্শা ৬৫ ৫২৫৬ ৫৮৮২ ৬৮০৭ ৪৭.৮
সদহ ৮৩ ৭৫৩৬ ১৫৩৮৬ ১৫৫১০ ৪৮.৮
সাতকানিয়া ৮৭ ৩৭৫৯ ১১৭৫০ ১৩৬৮৮ ৫৪.২
সোনাকানিয়া ৯১ ৬৫৫৩ ১০৮৮১ ১২৯০৯ ৫৭.৪

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ সাতকানিয়া ও সোনাকানিয়া ইউনিয়নের দারোগা মসজিদ ও ডেপুটি মসজিদ (পঞ্চদশ শতাব্দী)। ত্রয়োদশ শতাব্দীর মূর্তি সম্বলিত মুদ্রা ও ঠাকুর দীঘি (সাতকানিয়া), কোতওয়াল দীঘি (সোনাকানিয়া), শিবমন্দির (ঢেমশা), বোমং হাট গির্জা (বাজালিয়া), হিন্দুপাড়া মন্দির (কাঞ্চনা)।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের ৮ আগষ্ট সাতকানিয়া বাজার ও সতিপাড়া থেকে ১৭ জন নিরীহ লোককে ধরে নিয়ে হত্যা করে। পাকবাহিনী দক্ষিণ সাতকানিয়ার বানিয়াপাড়ায় লুটপাট করে এবং বেশকিছু বাড়িঘরে অগ্নি সংযোগ করে। পরবর্তীতে পাকবাহিনী ২৪ জন নিরীহ লোককে হত্যা করে। উপজেলার মুক্তিযোদ্ধারা ৫ই আগস্ট তারিখে সাতকানিয়া কলেজ মিলিশিয়া ও রাজাকার ক্যাম্প অপারেশন পরিচালনা করে। সাতকানিয়ায় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়েছে।

বিস্তারিত দেখুন সাতকানিয়া উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ১০।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান  মসজিদ ১০২৫, মন্দির ৬১, বৌদ্ধ মন্দির ৮, মাযার ১৮। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: ধর্মপুর কালু গাজী সিকদার মসজিদ, ভোয়ালিয়া পাড়া মাঝের মসজিদ, আজগর শাহ (রঃ) মাযার, সাতকানিয়া সদর শ্রী শ্রী দক্ষিণেশ্বরী কালীবাড়ি, ঢেমশা  চৌধুরী বাড়ি মন্দির, কাঞ্চনা কালীবাড়ি, সোনাকানিয়া বৌদ্ধ বিহার, ঢেমশা বড়ুয়া পাড়া গির্জা।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৫২.৭%; পুরুষ ৫৩.২%, মহিলা ৫২.৩%। কলেজ ৫, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৩৯, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১০৪, মাদ্রাসা ৮০। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: হেলার আদর্শ ডিগ্রী কলেজ, সাতকানিয়া সরকারি কলেজ (১৯৪৯), সাতকানিয়া আদর্শ মহিলা কলেজ, বাংলাদেশ রাইফেলস্ ট্রেনিং একাডেমি, এ কে বি সি ঘোষ ইনস্টিটিউট (১৯২৯), আমিলাইশ কাঞ্চনা বঙ্গ ঘোষ ইনিস্টিটিউট (১৯২৯), সাতকানিয়া আদর্শ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০২), ঢেমশা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০৭), রূপকানিয়া আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৮৮০), সাতকানিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৮৯০), মধ্য-রূপকানিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৮৯০), মনোয়াবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯০৫), রূপকানিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯১০), গারাংগিয়া ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসা (১৯২০), সাতকানিয়া আলিয়া এম ইউ মাদ্রাসা, দারুল ইহসান মহিলা দাখিল মাদ্রাসা।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী আশার প্রতীক, অবলুপ্ত: স্বাধীনতা দিবস স্মরণিকা (২০০৩)।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ৬, অডিটোরিয়াম ১, প্রেসক্লাব ১, সিনেমা হল ১, সাংস্কৃতিক সংগঠন ৫, খেলার মাঠ ৩০।

বিশেষ আকর্ষণ  হলুদিয়া প্রান্তিক লেক, আলিশা ডেসটিনি প্রজেক্ট ও কেওচিয়া বন গবেষণা প্রকল্প।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৩৫.৬৪%, অকৃষি শ্রমিক ৪.২৭%, শিল্প ০.৫৬%, ব্যবসা ২০.৩১%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৪.০৬%, চাকরি ১৪.৭১%, নির্মাণ ১.৭৭%, ধর্মীয় সেবা ০.৩৮%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ৬.১৯% এবং অন্যান্য ১২.১১%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৪৯.০৫%, ভূমিহীন ৫০.৯৫%। শহরে ৪৩.১৯% এবং গ্রামে ৫০.০১% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, আলু, সরিষা, চীনাবাদাম, কলাই, হলুদ, তুলা, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি  আখ, ভুট্টা, সুপারি।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, জাম, কাঁঠাল, কলা, লিচু, পেঁপে, পেয়ারা, আমড়া, নারিকেল, ডালিম।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ১৬, গবাদিপশু ১২, হাঁস-মুরগি ৩০০, নার্সারী ১০ (মৎস্য)।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১০৬.০ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ১০৬ কিমি, কাঁচারাস্তা ৪৮২ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, ঘোড়ার গাড়ি, গরুর গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা চালকল, আটাকল, বরফকল, করাতকল, টিম্বার ইন্ডাস্ট্রিজ, ওয়েল্ডিং কারখানা।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, তাঁতশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, সূচিশিল্প, দারুশিল্প, বাঁশের কাজ, বেতের কাজ, সেলাই কাজ, পাটের কাজ, উলের কাজ, নকশি কাঁথা, জাল তৈরি।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৩০, মেলা ৮। সাতকানিয়া সদর হাট, গরিঙ্গা হাট, ডেপুটি হাট, দেওয়ান হাট, কেরানী হাট, বোমাং হাট, বাংলা হাট, বাংলা বাজার এবং বারুণী মেলা, পরীনির্বাণ মেলা, শাক্যমুনী মেলা, মির্জাখীল মহরম মেলা ও মক্কারো বলীখেলা উলে­খযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য কলা, পেয়ারা, চীনাবাদাম, আলু, তুলা, বাঁশ ও বেতের তৈরি জিনিসপত্র।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৬৯.৯% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯১.৫%, ট্যাপ ২.৯% এবং অন্যান্য ৫.৬%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৭৩.০% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ২২.৯% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৪.১% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র এ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ৫, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ১৭, কমিউনিটি স্বাস্থ্য কেন্দ্র ৬, হাসপাতাল ১।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৯৭৬ ও ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে এ উপজেলার ঘরবাড়ি, গবাদিপশু, গাছপালা ও ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।

এনজিও ব্র্যাক, আশা, প্রশিকা। [এ.বি.এম রফিকুল কাদের চৌধুরী]

তথ্যসূত্র   আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; সাতকানিয়া উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।