সাক্ষরতা

সাক্ষরতা  পড়া ও লেখার ক্ষমতা। সমাজজীবন যত জটিল হয় ব্যবহারিক সাক্ষরতার স্তর তত উন্নীত হয় বলে একজন নিরক্ষর লোকের পক্ষে কর্মসংস্থান দুরূহ হয়ে ওঠে, দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়াও কষ্টকর হয়।

ভারতীয় উপমহাদেশে আর্যদের সময় থেকেই তুলনামূলকভাবে উন্নত ধরনের শিক্ষাব্যবস্থা প্রচলিত ছিল এবং শিক্ষিত ব্যক্তিবর্গকে সমাজে অত্যন্ত সম্মানের দৃষ্টিতে দেখা হতো। তবে, শিক্ষালাভের সুযোগ কেবল বিশিষ্ট ও সম্ভ্রান্ত শ্রেণিরই একচ্ছত্র অধিকার ছিল। মুসলিম আমলেও একই অবস্থা বিরাজমান ছিল। ব্রিটিশ আমলে পাশ্চাত্য শিক্ষা দেশের যুবশক্তিকে গণশিক্ষার ব্যাপারে সচেতন করে।

ঔপনিবেশিক যুগ  ১৯০১ সালে ব্রিটিশ ভারতে সাক্ষরতার হার ছিল ৫.৬%, এবং ৪০ বছর পরে ১৯৪১ সালে তা বেড়ে হয় ১৩.৯%। ১৯৪১ সালে অবিভক্ত বাংলায় সাক্ষরতার হার ছিল ১৬.১%। ব্রিটিশ শাসনের শেষদিকে গণসাক্ষরতার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়। ১৯৩৯-৪০ সালে বাংলায় সাক্ষরতা আন্দোলন ‘শিখি একজন, শেখাই অন্য জনে’ ধ্বনিতে আহবান জানানো বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং বাংলায় প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য নৈশ বিদ্যালয় চালু হয়। প্রাপ্তবয়স্কদের শিক্ষার বিষয়টি প্রাদেশিক সরকারের নবপ্রতিষ্ঠিত ‘পল্লী পুনর্গঠন’ বিভাগে নাস্ত করা হয়। এই বিভাগের অধীনস্থ বয়স্কশিক্ষা পাঠক্রমে কৃষি, পশুপালন ও জনস্বাস্থ্য কর্মসূচি অন্তর্ভুক্ত ছিল, এবং এই কার্যক্রম পরিবীক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মচারী নিযুক্ত করা হয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ আরম্ভ হলে এই কর্মসূচিটি বিঘ্নিত হয়। পল্রী পুনর্গঠন বিভাগের অবলুপ্তি ঘটে এবং সরকারি সমর্থন ছাড়া স্থানীয় জনসাধারণ বয়স্ক শিক্ষা কেন্দ্রগুলিকে চালিয়ে যেতে অসমর্থ হওয়ায় ধীরে ধীরে এগুলির বিলুপ্তি ঘটে।

পাকিস্তান আমল  ১৯৪৭-১৯৭১ সালে পাকিস্তানে দুটি আদমশুমারি করা হয়েছিল, একটি ১৯৫১ সালে, অন্যটি ১৯৬১ সালে। যেকোন ভাষার সুস্পষ্ট ছাপা অক্ষর পাঠে সক্ষম জনগণই প্রথম আদমশুমারিতে ‘সাক্ষর’ হিসেবে শ্রেণিভুক্ত হয়েছিল। এ সংজ্ঞা অনুযায়ী, পূর্ব পাকিস্তানে ৫ বৎসর ও তদূর্ধ্ব বয়সী লোকসংখ্যার ২৪.৭% এবং মোট লোকসংখ্যার ২১.১% সাক্ষর ছিল। যেকোন ভাষায় প্রাত্যহিক জীবনের একটি ক্ষুদ্র বর্ণনা বুঝে পড়তে সক্ষম ব্যক্তি ১৯৬১ সালের আদমশুমারিতে সাক্ষর হিসেবে বিবেচিত হয়। এই আদমশুমারি অনুযায়ী, ৫ ও তদূর্ধ্ব বয়সের লোকসংখ্যার ২১.৫% এবং মোট জনসংখ্যার ১৭.৬% সাক্ষর ছিল। পাকিস্তান সরকারের শিক্ষানীতি নিরক্ষর প্রাপ্তবয়স্কদের ব্যাপারে ছিল উদাসীন এবং সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে সরকারের আদৌ মনোযোগ ছিল না। পূর্ব বাংলায় কতিপয় উৎসাহী ব্যক্তি বয়স্কশিক্ষার ব্যাপারে কিছু প্রাথমিক উদ্যোগ গ্রহণ। পঞ্চাশের দশকে এইচ.জি.এস বিভার এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কাজ করে। বিভার ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস-এর একজন কর্মকর্তা ছিলেন, এবং অবসর গ্রহণের পর তিনি পূর্ববাংলা থেকে নিরক্ষরতা দূরীকরণের ব্রতে আত্মনিয়োগ করেন। বয়স্কশিক্ষা আন্দোলনকে তিনি পুনরুজ্জীবিত করেন। তিনি ‘ল্যুবাক মডেলে’ পুস্তিকা ও ছকসমাহার প্রণয়ন করেন এবং ১৯৫৬ সালে একটি সাক্ষরতা কেন্দ্র গঠন করেন। পরে, আব্দুল হাসনাত ইসমাইল ও আরও কয়েকজনের সহায়তায় তিনি একটি ‘প্রাপ্তবয়স্ক শিক্ষা সমবায় সমিতি’ গঠন করেন। তবে ১৯৬২ সালে তাঁর মৃত্যুর পর এই আন্দোলন স্তিমিত হয়ে পড়ে।

পূর্ব পাকিস্তানে নিরক্ষরতা দূরীকরণের জন্য জাতীয়ভাবে প্রথম গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ নেওয়া হয় ‘পল্লী কৃষি ও শিল্প উন্নয়ন’ (ভি-এইডি) কর্মসূচির আওতায়। এই কর্মসূচির অধীনে পল্লী এলাকাসমূহে বয়স্কশিক্ষা কেন্দ্র স্থাপিত হয়। স্বল্পকাল পরই, ১৯৫৯ সালে এই কর্মসূচির কাজ কুমিল্লায় স্থাপিত বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমির ওপর ন্যস্ত করা হয়। পরে ১৯৬৩ সালে পূর্ব পাকিস্তান সরকার শিক্ষা পরিচালকের দপ্তরে একটি আলাদা প্রাপ্তবয়স্ক শিক্ষা শাখা সৃষ্টি করে। ১৯৬৪ সালে এই শাখার মাধ্যমে একটি আদর্শ পাইলট প্রকল্প হাতে নেওয়া হয় এবং প্রাথমিক পর্যায়ে চারটি জেলার চারটি থানায় তার বাস্তবায়ন শুরু হয়। পরবর্তী পর্যায়ে এই কর্মসূচিতে আরও চারটি থানা অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়া পর্যন্ত মোট এই আটটি থানা প্রকল্প এলাকা হিসেবে চালু ছিল।

বাংলাদেশ আমল  ১৯৭৪, ১৯৮১, ১৯৯১, ২০০১ এবং ২০১১ সালে মোট পাঁচটি আদমশুমারি হয়েছে। ১৯৭৪ সালের আদমশুমারিতে সাক্ষরতার সংজ্ঞা ছিল, যেকোন ভাষায় যুগপৎ পড়তে ও লিখতে পারার ক্ষমতা। এ সংজ্ঞায় পাকিস্তান আমলের আগের আদমশুমারিসমূহে গৃহীত সংজ্ঞাসমূহে যে ধরনের ত্রুটি ছিল তা দূরীভূত হয় এবং ইউনেস্কো উদ্ভাবিত সংজ্ঞার সঙ্গে তা সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়ে ওঠে। ১৯৮১ সালের আদমশুমারির সংজ্ঞা অনুযায়ী, যেকোন ভাষায় চিঠি লিখতে সক্ষম পাঁচ বৎসর বা তদূর্ধ্ব বয়সের ব্যক্তিগণ সাক্ষর হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ১৯৯১ সালের আদমশুমারিতেও যেকোন ভাষায় চিঠি লেখার ক্ষমতাই সাক্ষরতার বিবেচ্য সংজ্ঞা ছিল, তবে তা ছিল সাত বা তদূর্ধ্ব বয়সের ব্যক্তিবর্গের ক্ষেত্রে। বিভিন্ন আদমশুমারি কালে সাক্ষরতার সংজ্ঞার পরিবর্তন বিভিন্ন সময়ের সাক্ষরতা হারে প্রভাব ফেলেছে। সব বয়সের ব্যক্তির ক্ষেত্রে ১৯৬১ সালের ১৭% সাক্ষরতা হার ১৯৯১ সালের আদমশুমারি বৎসরে ২৪.৯%-এ উন্নীত হয়েছিল। ৭ বৎসর ও তদূর্ধ্ব বয়সের লোকসংখ্যার সাক্ষরতা হার ১৯৭৪ সালের ২৬.৮% থেকে ১৯৯১ সালে ৩২.৪% এবং ২০০১ সালে ৪৫.৩%-এ উন্নীত হয়েছিল। প্রত্যেক আদমশুমারিকালে মহিলাদের চেয়ে পুরষদের সাক্ষরতার হার ছিল অধিক। তবে মহিলাদের সাক্ষরতা হার ১৯৭৪ সালে যা ছিল ১৬.৪% তা বৃদ্ধি পেয়ে ১৯৯১ সালে ২৫.৫% এবং ২০০১ সালে ৪০.৬% হয়। আদমশুমারির বছরগুলিতে নগর ও পল্লীতে সাক্ষরতা হারে যথেষ্ট তারতম্য পরিলক্ষিত হয়, সবগুলি বছরেই পল্লী এলাকার চেয়ে নগর এলাকায় সাক্ষরতা হার তুলনামূলকভাবে বেশি ছিল।

বয়স্ক শিক্ষা  বয়স্ক সাক্ষরতা হারের সংজ্ঞা হচ্ছে ১৫ ও তদূর্ধ্ব বয়সী জনসংখ্যার মধ্যে সাক্ষর ব্যক্তিদের সংখ্যা এবং একই বয়সের মোট লোকসংখ্যার শতকরা অনুপাত। এ হার ১৯৭৪ আদমশুমারিতে ছিল ২৫.৯%, ১৯৮১ আদমশুমারিতে ২৯.২% এবং ১৯৯১ আদমশুমারিতে ৩৫.৩%। ২০০১ সালে এই হার ৪৭.৫%-এ উন্নীত হয়েছিল। সবগুলি আদমশুমারিতেই বয়স্ক সাক্ষরতার হার মহিলাদের চেয়ে পুরুষদের মধ্যে অধিক ছিল।

প্রাপ্তবয়স্ক শিক্ষিত ব্যক্তিগণ ভাল কাজকর্ম বা ভাল শিক্ষার জন্য শহরে চলে আসে। ফলে, সব আদমশুমারি কালেই শহরে প্রাপ্তবয়স্ক সাক্ষরতার হার পল্লীর প্রাপ্তবয়স্ক সাক্ষরতার হারের চেয়ে অনেক বেশি থাকে। তবে, নগর ও পল্লীর সাক্ষরতা হারের তারতম্য ২০০১ সালে অনেকটা কমে গিয়েছে। পুরুষ ও মহিলার ক্ষেত্রেও বয়স্কশিক্ষার হারের তারতম্য কমে এসেছে। আজকাল শিক্ষা কর্মকান্ডে গ্রামের লোকের অধিকতর হারে অংশগ্রহণের ফলে এমনটি হয়েছে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে নিরক্ষরতা দূরীকরণ ও শিক্ষার প্রসারের ব্যাপারে এক নব উদ্দীপনা এবং উদ্যোগ সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশের ১৯৭২ সালের সংবিধান সার্বিক প্রাথমিক শিক্ষানীতির ভিত্তি রচনা করেছে। এই নীতির তিনটি উপাদান হচ্ছে বৈষম্যহীন, গণমুখী ও সর্বজনীন শিক্ষা ব্যবস্থা; সব শিশুদের জন্য অবৈতনিক বাধ্যতামূলক শিক্ষা সম্প্রসারণ; এবং নিরক্ষরতা দূরীকরণ ও শিক্ষাকে সমাজের প্রয়োজনে ব্যবহারোপযোগীকরণ। বাংলাদেশ সবার জন্য শিক্ষাবিষয়ক বিশ্ব সম্মেলন (১৯৯০), শিশুসংক্রান্ত বিশ্ব শীর্ষ সম্মেলন (১৯৯০), এবং সবার জন্য শিক্ষাবিষয়ক শীর্ষ সম্মেলনের ঘোষণাপত্রের (১৯৯৩) সুপারিশসমূহ বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সর্ব প্রকারের জাতীয় দলিল, শিক্ষাসংক্রান্ত সকল কমিশন ও কমিটির প্রতিবেদনে প্রাথমিক শিক্ষাই যে দেশের শিক্ষিত নাগরিক গড়ে তোলার ভিত্তি সেটি বিশেষভাবে স্বীকৃত। তবে, ১৯৯০ সালে বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা আইন পাস হওয়ার পরই প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত হয়। এই আইনের আওতায় বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা ১৯৯২ সালে ৬৮টি থানায় এবং ১৯৯৩ সালে পুরো দেশে চালু করা হয়। উপশহরে বিদ্যালয় স্থাপন, কমিউনিটি শিক্ষার ব্যবস্থাকরণ, খাদ্যের জন্য শিক্ষা কর্মসূচি এবং উপবৃত্তি প্রদানের মাধ্যমে ছাত্রভর্তি বৃদ্ধি ও বিদ্যালয় ত্যাগের প্রবণতা হ্রাসের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। প্রান্তিক দক্ষতার ওপর ভিত্তি করে তৈরি নতুন প্রাথমিক শিক্ষার পাঠ্যক্রম ১৯৯২ সালে চালু হয়। তার ফলে প্রাথমিক শিক্ষার বিভিন্ন দক্ষতা পরিমাপসূচকে কিছু উন্নতি পরিলক্ষিত হয়, যথা ভর্তির অনুপাত ও শিক্ষা সম্পন্নকরণ হারের বৃদ্ধি এবং প্রাথমিক শিক্ষায় তুলনামূলকভাবে মেয়েদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি। রাষ্ট্রীয় তত্ত্বাবধানে প্রাথমিক শিক্ষা পরিচালনা করা ছাড়াও, ১৯৮০-র দ্বিতীয়ার্ধ থেকে সরকার বেসরকারি সংস্থাসমূহকে ভাগ্যবিড়ম্বিত জনসাধারণের মৌলিক শিক্ষার চাহিদা মেটাতে বিভিন্ন ধরনের শিক্ষা কার্যক্রম পরিবীক্ষণের অনুমতি দিয়েছে।

১৯৭৪ সালের বাংলাদেশ শিক্ষা কমিশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, স্বাধীনতা অর্জনের বছর দেশে অশিক্ষিত প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ও নারীর সংখ্যা ছিল ৩৫ মিলিয়ন। তাদের জন্য উপানুষ্ঠানিক গণশিক্ষা কর্মসূচি গ্রহণের সুপারিশ করা হয়। দ্বিতীয় পাঁচসালা পরিকল্পনায় (১৯৮০-৮৫) গণনিরক্ষরতা দূরীকরণে বিশেষ প্রাধান্য দেওয়া হয়। সেসঙ্গে ১৯৮০ সালে ১১-৪৫ বৎসরের জনগণের জন্য সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা প্রকল্প, গণশিক্ষা কর্মসূচি (এমইপি) বাস্তবায়ন করা হয়। তবে, ১০ মিলিয়নকে শিক্ষিত করার লক্ষ্যমাত্রার স্থলে অনুমিত মাত্র ৭,০০,০০০-এর ক্ষেত্রে তা সম্ভব হওয়ায় এই কর্মসূচি ১৯৮২ সালে পরিত্যক্ত হয়।

তৃতীয় পাঁচসালা পরিকল্পনায় (১৯৮৫-৯০) ২৫০ মিলিয়ন টাকার বরাদ্দে জুন ১৯৯০ সাল পর্যন্ত ২.৪ মিলিয়ন প্রাপ্তবয়স্ককে শিক্ষিত করার নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা রেখে এই কর্মসূচি পুনরায় চালু করা হয়। সমন্বিত উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা হতে সংগৃহীত তথ্যে দেখা যায়, লক্ষ্যমাত্রার ৭১টি উপজেলার মধ্যে মাত্র ২৭টি উপজেলাকে এই প্রকল্পের আওতায় আনা হয়েছিল এবং পাঁচ বছরে মোট ২,৯১,৬০০ জন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিকে শিক্ষিত করা হয়েছিল। চতুর্থ পাঁচসালা পরিকল্পনায় (১৯৯০-৯৫) ২৩৫.৭০ মিলিয়ন টাকা বরাদ্দ করা হয়। এই পরিকল্পনা গ্রহণের সময় এমইপি-কে এই প্রকল্পের অধীনে আনার বিধান রাখা হয় এবং ১১-৪৫ বৎসর বয়সের মোট ৩,৬৭,০০০ নিরক্ষর প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিকে শিক্ষিত করা হয়। সেসঙ্গে আইএনএফই কর্মসূচির আর একটি নতুন প্রকল্পের সম্প্রসারণ আরম্ভ হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল সমন্বিত উপানুষ্ঠানিক শিক্ষাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দান করা। দেশের ৬৮টি থানায় এই কর্মসূচির বাস্তবায়ন হয়।

১৯৯৫ সালে প্রথমে লালমনিরহাট ও ভোলা জেলায় জেলা প্রশাসনের পৃষ্ঠপোষকতায় ‘সার্বিক শিক্ষা আন্দোলন’ শুরু করা হয়, পরে অন্যান্য আরও ১৫টি জেলায় তা সম্প্রসারিত হয়। এর বাইরে আরও ৩৯টি জেলায় এই কার্যক্রম সম্প্রসারণ করার প্রস্ত্ততিমূলক কাজ এখন এগিয়ে চলছে। পঞ্চম পাঁচসালা পরিকল্পনায় (১৯৯৭-২০০২) এই পরিকল্পনার শেষ সাল নাগাদ উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যমাত্রা ‘সবার জন্য শিক্ষা’ অর্জনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। এ লক্ষ্যে গৃহীত প্রধান প্রচেষ্টাসমূহ হচ্ছে, প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহে মোট ছাত্রছাত্রীর অন্তর্ভুক্তি ১০০%-এ উন্নীতকরণ। কৌশল হিসেবে চিহ্নিত করা হয় ছাত্রী অন্তর্ভুক্তির ব্যাপারে অধিকতর গুরুত্ব আরোপ এবং ২০০২ সাল নাগাদ প্রাথমিক শিক্ষা সম্পূর্ণকরণ হারকে ন্যূনতম ৭৫%-এ উন্নীত করা। ২০০৭ সালের তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশের সাক্ষরতার হার ৫৩.৫% এবং ২০০৯ সালে ৫৬.৫%। ২০০৮ সালের ইউনিসেফ-এর তথ্য অনুযায়ী পুরুষ ও নারীদের মধ্যে সাক্ষরতার হার যথাক্রমে ৬২% ও ৫১% যেখানে ২০০৪ সালে ছিল যথাক্রমে ৫১% ও ৩১%।

পঞ্চম পাঁচশালা পরিকল্পনায় গণশিক্ষার ব্যাপারেও সবার জন্য শিক্ষা অর্জনের সার্বিক লক্ষ্যমাত্রা এবং ৩০ মিলিয়ন প্রাপ্তবয়স্ক নিরক্ষর ব্যক্তির শিক্ষার চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কতগুলি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে। এসব লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে, ২০০২ সাল নাগাদ প্রাপ্তবয়স্কদের (১৫ বৎসর ও তদূর্ধ্ব) শিক্ষার হার ৮০%-এ উন্নীতকরণ; প্রযুক্তিগত দক্ষতা বৃদ্ধি, শিল্প-বাণিজ্যে উদ্যোগমনস্ক এবং নেতৃত্বমনা শিক্ষার্থীদের বিকাশ সাধন; সাক্ষরতায়, বিজ্ঞান-গণিতে ও ভাবের আদানপ্রদানে দক্ষতা বৃদ্ধি; নগর ও পল্লী উভয়ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সাক্ষরতা হারের তারতম্য হ্রাসকরণ; এবং নব্য শিক্ষিতদের সাক্ষরতা টিকিয়ে রাখার কর্মসূচি সম্প্রসারণ।  [শরিফা খাতুন]