সরকারি চাকুরি আইন, ১৯৭৫
সরকারি চাকুরি আইন, ১৯৭৫ ভারতে ব্রিটিশ শাসনামলে ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের আওতায় সরকারি চাকুরিসমূহের একটি নিরাপত্তা ব্যবস্থা বিদ্যমান ছিল। এই ব্যবস্থা ১৯৪৭-এর পর ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশেরই সরকার কাঠামোতে অব্যাহত ছিল এবং তা ১৯৭১ সাল পর্যন্ত বজায় ছিল। এ ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থার মৌলিক যুক্তি ছিল সম্ভবত সেবা প্রদানে সরকারি কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা।
বাংলাদেশের সংবিধানের ১৩৬ নম্বর অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রকে চাকুরি সৃষ্টি, চাকুরিসমূহ যুক্তকরণ অথবা সরকারি কর্মকর্তাদের সেবা একীভূতকরণের মাধ্যমে প্রজাতন্ত্রের চাকুরিসমূহ পুনর্গঠন করার জন্য আইন প্রনয়ণের অধিকার দিয়েছে। প্রজাতন্ত্রের চাকুরিতে নিয়োজিত যেকোন ব্যক্তির চাকুরির যেকোন শর্ত পরিবর্তন বা বাতিল করার ক্ষমতাও রাষ্ট্রকে প্রদান করা হয়েছে। চাকুরিসমূহ পুনর্গগঠিত করার জন্য ১৩৬ অনুচ্ছেদের বিধান অনুযায়ী সরকার ‘চাকুরিসমূহ (পুনর্গঠন ও শর্তাবলী) অধ্যাদেশ, ১৯৭৩’ নামে একটি অধ্যাদেশ জারি করে। পরে এ আইনটি ‘চাকুরিসমূহ (পুনর্গঠন ও শর্তাবলী) আইন, ১৯৭৫’ দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়। এ আইনের উদ্দেশ্য ছিল প্রজাতন্ত্রের চাকুরি এবং সরকারি সংস্থাসমূহ এবং জাতীয়করণকৃত প্রতিষ্ঠানগুলোর চাকুরিসমূহ পূনর্গঠন করা ও এই ধরনের চাকুরিতে নিয়োগকৃত ব্যক্তিদের জন্য পদ, বেতন ক্রম এবং অন্যান্য শর্ত নির্ধারণ করে দেওয়া। আইনটি জারির পূর্ব থেকেই এর কার্যকারিতা প্রদান করা হয়। ১৯৭৩ সালের জুলাই মাসের প্রথম দিন থেকেই এটি কার্যকর হয়েছিল বলে বিবেচনা করা হয়। এ বিষয়ে ইতিপূর্বে জারিকৃত অধ্যাদেশ এ আইন দ্বারা রহিত করা হয়। অবশ্য আইনটি রহিতকরণকৃত অধ্যাদেশের অধীনে সম্পন্ন কার্য বা পদক্ষেপ অথবা জারিকৃত আদেশ বা নির্দেশকে অক্ষুণ্ণ রেখেছিল।
১৯৭৫-এর আইনটির তিনটি মৌলিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। প্রথমত, এটি প্রজাতন্ত্রের চাকুরিসমূহ এবং সরকারি সংস্থা ও জাতীয়করণকৃত প্রতিষ্ঠানসমূহের চাকুরি পুনর্গঠিত করার জন্য সরকারকে ক্ষমতা প্রদান করে। নতুন চাকুরি সৃষ্টি করা অথবা বিদ্যমান চাকুরিসমূহ সংযুক্তকরণ অথবা একীভূতকরণ এ ধরনের পুনর্গঠনের অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। দ্বিতীয়ত, প্রজাতন্ত্রের চাকুরিসমূহ এবং সরকারি সংস্থা ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানসমূহের চাকুরিতে নিয়োগকৃত সকল ব্যক্তি অথবা গ্রুপের জন্য অভিন্ন ধরনের পদ এবং বেতনক্রম নির্দিষ্ট করে দেওয়ার জন্য এটি সরকারকে ক্ষমতা প্রদান করে। তৃতীয়ত, এ আইনে প্রজাতন্ত্রের চাকুরি ও সরকারি সংস্থা এবং রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানসমূহের চাকুরিতে নিয়োজিত ব্যক্তিদের চাকুরির শর্তাবলী কোন ক্ষতিপূরণ ছাড়াই পরিবর্তন এবং বাতিল করার অধিকার রয়েছে। এমনকি চাকুরির যেকোন শর্তের এ ধরনের পরিবর্তন অথবা বাতিলকরণের জন্য চাকুরিতে নিয়োগকৃত ব্যক্তির অসুবিধার কারণ হলেও সরকার এ অধিকার প্রয়োগ করতে পারে।
এ আইন দ্বারা সরকারের ওপর ন্যস্ত বিধিসংগত ক্ষমতাবলে নতুন সার্ভিস ক্যাডার সৃষ্টির প্রথম সরকারি প্রজ্ঞাপন (নম্বর - এস.আর.ও ২৮৬-এল.জে. ৮০/ই ডি.(আই.সি.) এস, এইচ-৯২/৮০-৯৮) ১৯৮০ সালের ১ সেপ্টেম্বর জারি করা হয়েছিল। এ আদেশের অধীনে ২৯টি সার্ভিস ক্যাডার সৃষ্টি করা হয়। সার্ভিসসমূহ সৃষ্টির এ আদেশ ১৯৮৬ সালের ৩১ আগস্ট সংশোধন (নম্বর- এস.আর.ও-৩৪৭/ইউ. ৮৬/এন. ৪ ই./ আই.সি-৪/৮৫) করা হয়। সংশোধিত আদেশে নতুন একটি সার্ভিস, বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (সমবায়) সংযোজন করা হয়। এতে সার্ভিসের সংখ্যা দাঁড়ায় ৩০। ১৯৯২ সালের মার্চ মাসে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (প্রশাসন) এবং বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (সেক্রেটারিয়েট)-কে একীভূত করা হয়। [এ.এম.এম শওকত আলী]