শ্রীপুর উপজেলা (মাগুরা)

শ্রীপুর উপজেলা (মাগুরা জেলা)  আয়তন: ১৭৫.১৫ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৩°৩২´ থেকে ২৩°৪১´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°২১´ থেকে ৮৯°৩২´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে পাংশা ও বালিয়াকান্দি উপজেলা, দক্ষিণে মাগুরা সদর উপজেলা, পূর্বে মধুখালী ও বালিয়াকান্দি উপজেলা, পশ্চিমে শৈলকূপা উপজেলা।

জনসংখ্যা ১৬৬৭৪৯; পুরুষ ৮১৯৯১, মহিলা ৮৪৭৫৮। মুসলিম ১৩৩৯৩৪, হিন্দু ৩২৬৯৩, খ্রিস্টান ৬২ এবং অন্যান্য ৬০।

জলাশয় প্রধান নদী: গড়াই, কুমার ও মুচিখালী।

প্রশাসন ১৮৫৯ সালে শ্রীপুর থানা গঠিত হয় এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
- ৭৯ ১৬৪ ৪৮৯৪ ১৬১৮৫৫ ৯৫২ ৬৯.২ ৫১.৩
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৩.১১ ৪৮৯৪ ১৫৭৪ ৫৭.২
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
আমলসার ১০ ৬৪১৮ ১২৫৬৪ ১৩০১৫ ৪১.০
কাদিরপাড়া ৪২ ৩৭৬৭ ৭৬০২ ৭৬৯৯ ৫২.৮
গয়েসপুর ৩১ ৫১৪২ ৯৫৫৬ ৯৭৮৪ ৪৪.৪
দ্বারিয়াপুর ২১ ৪২১৭ ৭৮৭৫ ৮২২৬ ৫৩.২
নাকোল ৫২ ৪৭৬৩ ৯৭৫৪ ৯৮৪০ ৫৬.৯
শ্রীকোল ৭৩ ৭৭১৯ ১৩৩১৩ ১৩৮০৭ ৫৫.০
শ্রীপুর ৮৪ ৫১৬১ ১১৫০৯ ১২০৬২ ৫৬.৬
সবদালপুর ৬৩ ৬০৯৫ ৯৮১৮ ১০৩২৫ ৫৫.৭

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ বিরাট রাজার রাজপ্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ, রাধানগর নীলকুঠি (কাদিরপাড়া), বৌদ্ধ সংঘারাম, পিলখানা, মুন্সি গয়রাতুল­াহর বাড়ি।

মুক্তিযুদ্ধ উপজেলার মুক্তিযোদ্ধারা পারুলী রাজাকার ক্যাম্পে হামলা চালায়, পাকসেনাদের গোলাঘাট রেলসেতু ক্যাম্প আক্রমণ করে। গুনিয়াকুড়ি গ্রামে রেলপথ উপড়ে ফেলে ও কাওরাইদ পাকসেনা ক্যাম্পে আক্রমণ চালায়। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধারা মাওনা পাথার এলাকায় পাকবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করে এবং ইজ্জতপুর রেলওয়ে পাকসেনা ক্যাম্পে হামলা পরিচালনা করে।

বিস্তারিত দেখুন শ্রীপুর উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ১০।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান  মসজিদ ১১৫, মন্দির ২০, মাযার ১। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: উপজেলা জামে মসজিদ, পীর করিম শাহের মাযার (সবদালপুর), নাকোল মিয়াপাড়া হাজরাতলা বেদান্ত মঠ ও মিশন, বড়ালীদহ পশ্চিমপাড়া কালীমন্দির।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৫১.৮%; পুরুষ ৫৪.২%, মহিলা ৪৯.৫%। কলেজ ৪, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২৬, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৭১, কমিউনিটি স্কুল ৫, কিন্ডার গার্টেন ৩, মাদ্রাসা ১৬। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: নাকোল রাইচরণ মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯০১), শ্রীপুর এম সি পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯০২)।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ১, সিনেমা হল ৪, ক্লাব ২৩।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৬৪.৩৫%, অকৃষি শ্রমিক ২.০৭%, শিল্প ১.৫০%, ব্যবসা ১২.৭৯%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৪.৭২%, চাকরি ৮.১৭%, নির্মাণ ১.২৭%, ধর্মীয় সেবা ০.১৫%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.৬২% এবং অন্যান্য ৪.৩৬%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৬১.১৯%, ভূমিহীন ৩৮.৮১%। শহরে ৬১.৭১% এবং গ্রামে ৬১.১৭% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, পাট, গম, সরিষা, ডাল, কাজুবাদাম, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি  অড়হর, চীনা, যব।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, নারিকেল, লিচু, কলা।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ৪৫, গবাদিপশু  ৪০, হাঁস-মুরগি ১৫।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৭৩ কিমি, কাঁচারাস্তা ২৫ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৪৪৫ কিমি; নৌপথ ২৮ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরুর গাড়ি, ঘোড়ার গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা ধানকল, বরফকল, ওয়েল্ডিং কারখানা।

কুটিরশিল্প তাঁতশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, বাঁশের কাজ, বেতের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ২৪, মেলা ৬। আমলসার হাট, দ্বারিয়াপুর হাট, গয়েসপুর হাট, কাদিরপাড়া হাট, নাকোল হাট, সবদালপুর হাট, শ্রীকোল হাট, শ্রীপুর হাট এবং বড়ালীদহের চড়ক মেলা উলে­খযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য ধান, পাট, কলা, কাঁঠাল।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৩৮.৫% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয় জলের উৎস নলকূপ ৯৮.৮%, ট্যাপ ০.২% এবং অন্যান্য ১.০%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৭৮.৮% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ১৭.৩% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। তবে ৩.৯% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র ১, পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ৮।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৫৮৫ ও ১৯০৯ সালের ঝড়ে এ উপজেলায় অনেক লোকের প্রাণহানি ঘটে।

এনজিও ব্র্যাক, আশা, পল্লী শিশু ফাউন্ডেশন।  [মো. মহেববুল্লাহ]

তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; শ্রীপুর উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।