শ্রীপুর

শ্রীপুর  বর্তমানে পদ্মার গর্ভে বিলীন। মুন্সিগঞ্জ জেলায় পদ্মার তীরে অবস্থিত শ্রীপুর ছিল চাঁদ রায় এবং কেদার রায়ের রাজধানী। রালফ ফিচ-এর (১৫৮৬) মতে,  সোনারগাঁও থেকে ছয় লিগ দক্ষিণে ছিল এর অবস্থান। ডি বারোস (১৪৯৬-১৫৭৩ খ্রি), ব্লেভ (১৫৭১-১৬৩৮ খ্রি) এবং ভনডেন ব্রুক শ্রীপুরের সঠিক অবস্থান চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে ভিন্ন মত ব্যক্ত করলেও সোনারগাঁও থেকে দক্ষিণে যে এর অবস্থান ছিল, সে বিষয়ে তাঁরা সকলেই একমত পোষণ করেছেন। তাঁরা শ্রীপুরকে একটি বন্দর হিসেবে চিহ্নিত করেন।

পর্তুগিজ নাবিকগণ প্রায়শই এখানে তাদের জাহাজ মেরামত করাতে আসতেন বলে শহরটিতে জাহাজ নির্মাণশিল্প বিকাশ লাভ করেছিল বলে মনে হয়। ভনডেন ব্রুক একে ‘শেরপুর ফিরিঙ্গি’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এ থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্তুগিজ বসতি ছিল। র‌্যালফ ফিচ শ্রীপুরকে ব্যবসা-বাণিজ্যের একটি উল্লেখযোগ্য কেন্দ্র হিসেবে বর্ণনা করেন এবং বলেন যে, তিনি আলবার্তো কার্ভালো’র একটি পর্তুগিজ জাহাজে চড়ে শ্রীপুর থেকে পেগু যান। ১৬১২ খ্রিস্টাব্দে অগাস্টান খ্রিস্টানগণ শ্রীপুরে কয়েকটি গির্জা নির্মাণ করেন এবং ১৬১৬ খ্রিস্টাব্দের মধ্যেই শহরটি খ্রিস্টানদের একটি ধর্মপ্রচার কেন্দ্রে পরিণত হয়। হিন্দু সংস্কৃতির একটি কেন্দ্র শ্রীপুরে ছিল দেব-দেবীর মূর্তি সম্বলিত বড় বড় মন্দির। শহরটি বাংলার ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১৫৯৫ খ্রিস্টাব্দে কেদার রায়ের পরাজয়ের পর মানসিংহ বিখ্যাত শিলাময়ী মূর্তিটি শ্রীপুর থেকে অম্বরে নিয়ে গিয়েছিলেন বলে কথিত আছে।  [আক্তারুজ্জামান]