শ্রীকৃষ্ণবিজয়

শ্রীকৃষ্ণবিজয়  মালাধর বসু (১৫শ-১৬শ শতক) রচিত একটি আখ্যানকাব্য। এটি সংস্কৃত ভাগবতের দশম ও একাদশ অধ্যায় অনুসরণে রচিত। ভাগবতে হিন্দুধর্মের তত্ত্বকথা ও শ্রীকৃষ্ণের জীবনবৃত্তান্ত আছে; শ্রীকৃষ্ণবিজয়েও কৃষ্ণের জন্ম থেকে মহাপ্রয়াণ পর্যন্ত জীবনবৃত্তান্ত বর্ণিত হয়েছে। রচয়িতা মূল উৎসের পাশাপাশি অন্যান্য  পুরাণ ও  লোককাহিনী থেকেও উপাদান গ্রহণ করেছেন। এজন্য শ্রীকৃষ্ণবিজয় নিছক অনুবাদ গ্রন্থ না হয়ে একখানা মৌলিক  কাব্য হয়ে উঠেছে।

পাপাচারে লিপ্ত জগৎকে মুক্ত করার জন্য ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অবতাররূপে মর্ত্যে অবতীর্ণ হন। তিনি অত্যাচারী রাজা মাতুল কংস ও তাঁর সহযোগী অনেক অসুর, মানব ও হিংস্র প্রাণীকে বধ করেন। বৃন্দাবন, মথুরা ও দ্বারকা এই তিনটি পর্যায়ে কৃষ্ণের লীলা বর্ণিত হয়েছে; প্রতি ক্ষেত্রে অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে তাঁকে যুদ্ধ করতে হয়েছে। দ্বারকাযুদ্ধে দ্বারকাপুরী ও যদুবংশ ধ্বংস হয়েছে।

রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত মুসলিম শক্তির প্রতিপক্ষ হিসেবে হিন্দু শক্তির কথা চিন্তা করে  মালাধর বসু শ্রীকৃষ্ণকে বীররূপে চিত্রিত করেছেন এরূপ একটি ধারণা কেউ কেউ পোষণ করেন। এ কাব্যে শ্রীকৃষ্ণের ঐশ্বর্যলীলা প্রাধান্য পেয়েছে। কাব্যটি সে সময়ে খুবই জনপ্রিয় ছিল; চৈতন্যদেব স্বয়ং এর কাব্যরস আস্বাদান করে ভাবাবেগে আপ­ুত হতেন।  [ওয়াকিল আহমদ]