শেরে-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

শেরে-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিক ভবন

শেরে-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়  ঢাকার শেরে-বাংলা নগরে অবস্থিত ২০০১ সালের জুলাই মাসে প্রতিষ্ঠিত দেশের অন্যতম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। রাষ্ট্রপতির আদেশ নং ১৬-এর পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় সংসদ পূর্বতন বাংলাদেশ কৃষি ইনস্টিটিউট-এর নাম পরিবর্তন করে শেরে-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আইন পাশ করে। এই প্রতিষ্ঠান ১৯৩৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বেঙ্গল কৃষি ইনস্টিটিউট নামে তৎকালীন মণিপুরী ফার্মে প্রতিষ্ঠিত হয়। শুরুর দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দুবছরের বি.এসসি কোর্স সম্পন্ন করার পর যেসব ছাত্রছাত্রী বেঙ্গল কৃষি ইনস্টিটিউটে (পরবর্তীতে বাংলাদেশ কৃষি ইনস্টিটিউট) ভর্তি হতো, তাদের শস্য উৎপাদন, মৃত্তিকা বিজ্ঞান, উদ্যানতত্ত্ব, উদ্ভিদ-রোগতত্ত্ব, কীটতত্ত্ব প্রভৃতি বিষয়ে ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ কোর্স পড়তে হতো। ১৯৩৮-৩৯ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হওয়া প্রথম ব্যাচের ২০ জন ছাত্র ১৯৪১ সালে ইনস্টিটিউটের কোর্স সম্পন্ন করে এবং এ অবস্থা ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগ পর্যন্ত চলতে থাকে। অতঃপর বেঙ্গল কৃষি ইনস্টিটিউট নামটি বদলে পূর্ব পাকিস্তান কৃষি ইনস্টিটিউট হলেও পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যবিষয় ১৯৫৯ সাল পর্যন্ত অপরিবর্তিত ছিল। ১৯৫৩ সাল থেকে কৃষিতে স্নাতক ডিগ্রি (বি.এজি) অর্জনের পর ছাত্রদের স্নাতকোত্তর কৃষিবিজ্ঞানে (এম.এজি) উচ্চতর অধ্যয়নের সুযোগ দেওয়া হতো। ১৯৫৯ সাল থেকে আসন সংখ্যা ২০ থেকে বৃদ্ধি করে ৪০ (যা বর্তমানে ১৮৫) করা হয় এবং তা ১৯৭১ সাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।

১৯৬১ সালে ময়মনসিংহে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন তৎকালীন কৃষি অনুষদের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। দেশের একমাত্র কৃষি ইনস্টিটিউট, পূর্ব পাকিস্তান কৃষি ইনস্টিটিউটকে পূর্ব পাকিস্তান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়। এটি অতঃপর দ্বৈত নিয়ন্ত্রণে পড়ে: একদিকে শিক্ষা সম্পর্কিত বিষয়ে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যদিকে প্রশাসনিক বিষয়ে কৃষি পরিদপ্তর (গবেষণা ও সম্প্রসারণ)। স্বাধীনতার পর ইনস্টিটিউটকে বাংলাদেশ কৃষি ইনস্টিটিউট হিসেবে পুনর্বিন্যস্ত  করা হয়। ১৯৭৬ সালে একে গাজীপুরের জয়দেবপুরে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।

২০০১ সালের ডিসেম্বর থেকে একজন ভাইস-চ্যান্সেলর নিয়োগের মাধ্যমে শেরে-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হয়। সেসঙ্গে পূর্ববর্তী ইনস্টিটিউটের যাবতীয় সম্পত্তি ও দায়দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর বর্তায়।

বর্তমানে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগগুলির মধ্যে রয়েছে কৃষিতত্ত্ব, ফসল উদ্ভিদবিদ্যা, কীটতত্ত্ব, কৃষি বংশগতিবিদ্যা ও উদ্ভিদ প্রজনন, উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব, মৃত্তিকাবিজ্ঞান, উদ্যানতত্ত্ব, কৃষি রসায়ন ও প্রাণরসায়ন, কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান, কৃষি পরিসংখ্যান, কৃষি সম্প্রসারণ শিক্ষা, পশুপালন এবং কৃষি বনবিদ্যা। বর্তমানে শেরে-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়-এর ৭৬ একর কৃষি জমি রয়েছে এবং গ্রন্থাগারে আছে প্রায় ২৭,৬০০ বই এবং প্রায় ৩,৫০০ সাময়িকী ও অন্যান্য প্রকাশনা।  [মোহাম্মদ কামারুজ্জামান]

আরও দেখুন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়; বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট