শুষ্কভূমি

শুষ্কভূমি (Dryland)  অতি সামান্য বৃষ্টিপাত হয় এবং মাটি প্রায় সারা বছর শুষ্ক থাকে এমন এলাকা। পৃথিবীর মহাদেশীয় ভূভাগের প্রায় ৩৫ ভাগই শুষ্কভূমি। শুষ্কভূমির মৃত্তিকার উপস্থিতি দেখা যায় নিম্ন অথবা মধ্য-অক্ষাংশীয় জলবায়ু অঞ্চলে, যেখানে বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ মাত্র ১৫০ থেকে ২৫০ মিমি। মাটির উপর সার্বক্ষণিক উদ্ভিদ আবরণের জন্য এই বৃষ্টিপাত যথেষ্ট নয়। ক্রান্তীয় ও উপক্রান্তীয় অঞ্চলের প্রধান শুষ্কভূমিগুলো উত্তর আফ্রিকার সাহারা ও লিবিয়ার মরুভূমি, আরব ও তার আশেপাশের পশ্চিম এশীয় মরুভূমি, দক্ষিণ আমেরিকার পেরু ও চিলির মরুভূমি এবং অস্ট্রেলিয়ার প্রায় অর্ধেক এলাকা জুড়ে বিস্তৃত মরুভূমির বিশাল বিস্তৃতিতে অবস্থিত। মধ্য-অক্ষাংশের শুষ্কভূমির অবস্থান হলো মধ্য এশিয়া, তুর্কিস্থানের বিখ্যাত গোবি মরুভূমি এবং মঙ্গোলিয়ার মরুভূমিতে। ক্যালিফোর্নিয়া, অ্যারিজোনা, নেভাদা ও তার আশেপাশের এলাকাকে আবৃত করে রেখেছে উত্তর আমেরিকার শুষ্কভূমি। দক্ষিণ আমেরিকাতে প্যাটাগোনিয়ার অংশবিশেষ ও তার আশেপাশের এলাকা শুষ্কভূমির অন্তর্গত।

শুষ্কভূমির মাটি সাধারণত বিবর্ণ ও হালকা বুনটের হয়ে থাকে। এ ধরনের মাটিতে রাসায়নিক বিচূর্ণীভবন (chemical weathering) যৎসামান্য, কিন্তু যান্ত্রিক বিচূর্ণীভবন প্রবল। বৃষ্টিপাত কম হয় বলে জল চোঁয়ানোর পরিমাণও খুব কম। মৃত্তিকা শ্রেণীবিন্যাসের ক্ষেত্রে শুষ্কভূমির মৃত্তিকাকে ঊষর মৃত্তিকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই মৃত্তিকার উপরিভাগে সাধারণত গৈরিক আস্তরণ এবং এক বা একাধিক শনাক্তকারী ক্ষিতিজ (diagnostic horizon) অবস্থান করে। মরুভূমি মৃত্তিকা, লোহিত মরুভূমি মৃত্তিকা, লালচে-বাদামি মৃত্তিকা, ইত্যাদি ঊষর মৃত্তিকা শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত। সামান্য পরিমাণে জৈব উপাদানের উপস্থিতি এবং অবমুক্ত লৌহজাত অক্সাইড চলাচলের অভাব প্রমাণ করে যে, শুষ্কভূমির মৃত্তিকা উপাদানগুলো উত্তমরূপে বিজারিত অবস্থায় থাকে।

উত্তর-পশ্চিম বাংলাদেশের দক্ষিণ অংশ (রাজশাহী ও নওগাঁ জেলা) দেশের সবচেয়ে শুষ্ক অংশ, যেখানে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ও সময়কাল উভয়ই অনিশ্চিত। এই অঞ্চলের মৃত্তিকার সাধারণ শ্রেণীবিভাগ চুনযুক্ত ঘন-ধূসর প­াবনভূমি মৃত্তিকা, চুনযুক্ত বাদামি প­াবনভূমি মৃত্তিকা, অগভীর ধূসর সোপান মৃত্তিকা ইত্যাদি দ্বারা বৈশিষ্ট্যমন্ডিত। এই মাটিগুলো শুষ্কভূমির শস্য উৎপাদনের জন্য অধিকতর উপযুক্ত। শুষ্কভূমির শস্য যেগুলো উদ্ভিদ হিসেবে প্রায় সাংবৎসরিক ধরনের যেমন, ইক্ষু ইত্যাদির সন্তোষজনক বৃদ্ধির জন্য সারা বছর জুড়েই জল নির্গমনের নিশ্চয়তা অত্যাবশ্যক। শুষ্কভূমির বর্ষজীবী শস্যের বৃদ্ধির সময়টুকুতে অবশ্যই পর্যাপ্ত জল-নির্গমন ব্যবস্থা থাকতে হয়। বর্ষাকালে প­াবিত হয় এমন নিম্ন জল-নির্গমন ব্যবস্থাযুক্ত ভূমিতে শুষ্ক মৌসুমে শুষ্কভূমির রবি ফসল চাষ করা যায়। কিন্তু শুষ্কভূমির খরিফ ফসলের জন্য অবশ্যই উত্তম নির্গমন ব্যবস্থাযুক্ত মৃত্তিকার প্রয়োজন হয়। [মোহাম্মদ সুলতান হোসেন]

আরও দেখুন পাললিক মৃত্তিকা