শিশুহত্যা

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২৩:০৩, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)

শিশুহত্যা  নবজাত শিশুহত্যা প্রথা। এ প্রথা উনিশ শতকের মধ্যবর্তী সময় পর্যন্ত বাংলার হিন্দুসমাজে প্রচলিত ছিল। শিশুহত্যায় পিতা-মাতা, পরিবার বা সম্প্রদায়ের সম্মতি থাকত। প্রথা হিসেবে শিশুহত্যা পৃথিবীর অধিকাংশ প্রাচীন এবং মধ্যযুগীয় সমাজব্যবস্থায় লক্ষ্য করা যায়। এক সময় চীন এবং এস্কিমো সমাজব্যবস্থায় খাদ্যের দুষ্প্রাপ্যতার কারণে মেয়ে শিশু হত্যা করা সাধারণ ব্যাপার ছিল। কোন কোন প্রাচীন এবং মধ্যযুগীয় সমাজব্যবস্থায় বিকলাঙ্গ শিশুদের এই বিশ্বাসে হত্যা করা হতো যে, তারা অপদেবতাদের দ্বারা বিকৃত হয়েছে। রোমান আইনে প্যাটরিয়া পোটেসটাস (Patria Potestas) পিতাকে তার সন্তান উৎসর্গ বা হত্যা করার অধিকার প্রদান করে। ইসলাম, খ্রিস্টান এবং ইহুদি ধর্ম এই অমানবিক প্রথা প্রত্যাখান করে।

হিন্দুসমাজে এই প্রথা প্রচলিত ছিল এবং উনিশ শতকের প্রথম দিকে এই রীতির বিরুদ্ধে তীব্র সামাজিক সমালোচনা শুরু হয়। দক্ষিণ এশিয়ায় বারাণসী, কাথিয়াওয়ার, কচ্ছ, জববলপুর এবং সাগরে প্রধানত রাজপুতদের মধ্যে এই শিশুহত্যা সীমাবদ্ধ ছিল। পাঞ্জাবে শিশুহত্যা অত্যন্ত সাধারণ বিষয় ছিল। বাংলা ছিল শিশুহত্যা এলাকার প্রান্তিক সীমায়। পুরুষ শিশুরা উৎসর্গ থেকে একেবারে রেহাই না পেলেও, প্রথানুসারে মহিলা শিশুরাই শুধু এর শিকার ছিল। নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে এই প্রথা সমাজে নারীদের হীন মর্যাদার ইঙ্গিত দেয়। মুগল শাসকগণ শিশুহত্যা বন্ধের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।

সামাজিক ক্ষতিকারক দিক হিসেবে শিশুহত্যা প্রথা বাংলায় আঠারো শতকে বৃদ্ধি পায়। এই সময়ে শিশুহত্যা সমর্থন করে কিছু ক্ষুদ্র সম্প্রদায়ের উদ্ভব ঘটে। রাজা রামমোহন রায়ই প্রথম ব্যক্তি যিনি এই ক্ষতিকারক প্রথার বিরুদ্ধে জোরালো বক্তব্য রাখেন।  ব্রাহ্মসমাজ এবং হিন্দু কলেজের প্রাক্তন ছাত্রবৃন্দ এই প্রথার নিন্দাজ্ঞাপন করে এবং জনগণের মধ্যে শিশুহত্যা বিরোধী ধারণা প্রচারের চেষ্টা করে। শিশুহত্যার বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান সচেতনতায় উৎসাহিত হয়ে গভর্নর জেনারেল উইলিয়ম বেন্টিঙ্ক সতী বা শিশুহত্যার নামে যে কোন হত্যার বিরুদ্ধে আইন প্রণয়ন করেন। এই আইন প্রণয়নের ফলে অবশ্য শিশুহত্যা তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ হয় নি। পুরোপুরি উনিশ শতকে এই প্রথা প্রচলিত ছিল, যদিও ক্রমান্বয়ে এর হার কমে আসে। ১৮৬১ সালের ক্রিমিনাল প্রসিডিউর কোড অনুসারে ধর্ম বা অন্য যেকোন নামে সকল প্রকার মানুষ উৎসর্গকে সাধারণ হত্যা হিসেবে গণ্য করার ঘোষণা দেওয়া হয় এবং সে কারণে তা বিচারযোগ্য এবং অপরাধের জন্য শাস্তিযোগ্য হয়।

[সিরাজুল ইসলাম]