শাহ সুলতান মাহিসওয়ার (রঃ)

শাহ সুলতান মাহিসওয়ার (রঃ)  একজন দরবেশ। তিনি বগুড়া জেলার মহাস্থানে সমাহিত। শাহ সুলতান মাহিসওয়ারের ইতিহাস অস্পষ্ট। কথিত আছে যে, তিনি বলখ রাজ্যের রাজার পুত্র ছিলেন এবং এজন্য তিনি বলখী নামেও পরিচিত। শাহ সুলতান একান্ত অনাড়ম্বর জীবন পছন্দ করে উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া রাজসিংহাসন ছেড়ে দামেস্কে এসে শেখ তৌফিকের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন।

পীর শেখ তৌফিক শাহ সুলতানকে বাংলায় গিয়ে ইসলাম প্রচার করার নির্দেশ দেন। তিনি সমুদ্রপথে বাংলা অভিমুখে যাত্রা করেন এবং গঙ্গা নদীর মোহনায় অবস্থিত সন্দ্বীপে পৌঁছেন। সেখান থেকে তিনি হরিরামনগরে আসেন। জায়গাটি সম্ভবত সমুদ্র উপকূলে অবস্থিত ছিল এবং কালী উপাসক বলরাম তখন স্থানটি শাসন করছিলেন। রাজা শাহ সুলতানকে ইসলাম প্রচারে বাধা দেন। সংঘর্ষে রাজা মারা যান এবং তাঁর মন্ত্রী ইসলাম গ্রহণ করে প্রাণ বাঁচান। অতঃপর শাহ সুলতান মহাস্থানের দিকে অগ্রসর হন। স্থানীয় রাজা পরশুরাম ও তাঁর বোন শিলাদেবী শাহ সুলতানকে বাধা দেন। ফলে দুপক্ষে যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে রাজা নিহত হন এবং শিলাদেবী করতোয়া নদীতে প্রাণ বিসর্জন।

শাহ সুলতানের আগমন এবং রাজা বলরাম ও পরশুরামের সঙ্গে তাঁর যুদ্ধের কাহিনী শুধু জনশ্রুতির মাধ্যমে জানা যায়। তিনি মাহিসওয়ার (মাছের পিঠে আরোহী) নামে সমধিক পরিচিত। সম্ভবত তিনি মাছ আকৃতির নৌকায় এসেছিলেন বলে সাধারণ লোকের নিকট মাহিসওয়ার হিসেবে পরিচিত ছিলেন। বাংলার আরও কয়েকজন দরবেশকে নিয়ে অনুরূপ কাহিনী প্রচলিত আছে এবং এদেশে মাহিসওয়ার আওলিয়াগণ বেশ জনপ্রিয়। শাহ সুলতান মাহিসওয়ারকে শনাক্ত করা খুবই দুরূহ, তবে জনগণ তাঁকে আধ্যাত্মিক শক্তিসম্পন্ন একজন মহান দরবেশ বলে ভক্তি শ্রদ্ধা করে আসছে।

১০৯৬ হিজরিতে (১৬৮৫ খ্রি) আওরঙ্গজেবের শাসনামলে সৈয়দ মুহম্মদ তাহির, সৈয়দ আব্দুর রহমান এবং সৈয়দ মুহম্মদ রেজা নামক তিন ব্যক্তির নামে এক সনদ জারি করা হয়। এই সনদ বলে তাঁরা স্থায়িভাবে দরগাহ সংলগ্ন লাখেরাজ ভূমি (রাজস্ব-মুক্ত জমি) ভোগ-দখলের অধিকার পান। সনদে কুকুলতাশ মুজাফ্ফর জঙের সিলমোহর অঙ্কিত আছে এবং এটি সরকার বাজুহার অন্তর্গত সিলবারী পরগনার মুৎসদ্দি, চৌধুরী, কানুনগো প্রভৃতি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিকট নির্দেশ হিসেবে পাঠান হয়। দলিলের মালিকরা যাতে দরবেশের লাখেরাজ সম্পত্তি ভোগ দখল করতে পারে তা নিশ্চিত করার জন্য কর্ম-কর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়। এই সনদে পূর্ববর্তী শাসকদের প্রদত্ত অনুরূপ সনদ ওফরমানের উল্লেখ আছে। অতএব দরগাহটি বেশ পুরানো, তবে কত পুরানো তা নিশ্চিত বলা যাচ্ছে না, কারণ পূর্ববর্তী সনদ ও ফরমান পাওয়া যায় নি। স্থানীয় লোকজন শাহসুলতান মাহিসওয়ারকে খুব শ্রদ্ধা করে। প্রতিদিন বহু লোক শ্রদ্ধা জানানোর জন্য তাঁর দরগাহ দর্শনে আসে। [আবদুল করিম]