শাঁখারি

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২৩:০০, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)

শাঁখারি  একটি পেশাজীবী গোষ্ঠী, যাদের কাজ শঙ্খ কাটা এবং শঙ্খ দিয়ে বালা, কানের দুল, আঙটি ইত্যাদি তৈরি করা। লোককাহিনীর বর্ণনামতে, আদি শাঁখারি হচ্ছে কর্ণাটক-এর জনৈক ধনপতি সওদাগর। তাঁর বংশধররা শঙ্খ কাটার বিশেষত্ব অর্জন করে এবং সময়ের পরিক্রমায় একটি বণিক সম্প্রদায়ের রূপ লাভ করে। শাঁখারিগণ হচ্ছে উচ্চ বর্ণের হিন্দু এবং তারা ব্রাহ্মণদের মতোই ধর্মীয় বিধি-নিষেধ ও আচার-অনুষ্ঠান পালন করে।

ঐতিহ্যগতভাবে শাঁখারিদের মধ্যে বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ, বিধবা পুনঃবিবাহ ও যৌথপরিবার প্রথা প্রচলিত ছিল, কিন্তু ইদানীং এ সকল বৈশিষ্ট্য তাদের মধ্যে তেমন প্রচলিত নেই। সাধারণত বিধবাদের পুনরায় বিয়ে করতে অনুমতি দেওয়া হয় না, তবে বিবাহ বিচ্ছেদকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। প্রায় সকল শাঁখারিই বৈষ্ণব সম্প্রদায়ভুক্ত এবং এদের মধ্যে শাক্তদের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে অনেক কম। বর্ণভেদে, শাঁখারিরা নবশাকদের সমপর্যায়ের। ব্রাহ্মণগণ তাদের কাছ থেকে পানি ও মিষ্টান্ন গ্রহণ করে। বিভিন্ন উপলক্ষে তাদের খাদ্য সম্পর্কিত বিধি-বিধান উচ্চ সম্প্রদায়ের সমপর্যায়ের। শাঁখারিদের অনেকেই নিরামিষভোজী।

শঙ্খনির্মিত সামগ্রীর ব্যবসায় সবসময়ই তেজি ছিল। সাধারণভাবে শঙ্খনির্মিত সামগ্রী হিন্দুদের উৎসবাদিতে ব্যবহূত হয়। প্রমাণ রয়েছে যে, সপ্তদশ এবং অষ্টাদশ শতাব্দীতে বাংলার শঙ্খজাত সামগ্রী রপ্তানি করা হতো। টেরাকোটা প্রমাণাদির সাক্ষ্য দেয় যে,

শাঁখারি

প্রাচীন আমলেও শঙ্খনির্মিত বালা দক্ষিণ ভারতে রপ্তানি করা হতো। শঙ্খসামগ্রীর কেন্দ্র ছিল ঢাকা, বরিশাল, দিনাজপুর, রংপুর এবং সিলেট। বর্তমানে পুরানা ঢাকার শাঁখারিপট্টি নামক মহল্লায় ঐতিহ্যবাহী নানা ধরনের শাঁখা বিশেষভাবে তৈরি করা হয়। শাঁখা তৈরির প্রধান যন্ত্রপাতি হচ্ছে করাত, বাঁশের লাঠি, কাঠের চাকা ইত্যাদি। শাঁখারিরা প্রথমে ধারালো যন্ত্রের সাহায্যে শঙ্খ কাটে, এ পদ্ধতিকে বলা হয় শঙ্খ কাটা। তারপর শঙ্খের ধারালো ধারগুলি ঘষে সমান করা হয়। শঙ্খকে গোলাকার ও সমতল করার পরবর্তী পদ্ধতিকে বলা হয় ঝাঁপানি। ইস্পাতের বাটালির সাহায্যে শঙ্খগুলির গায়ে বিভিন্ন ধরনের ছাপ মারা হয়। বর্তমানে কক্সবাজার ও উপকূলীয় এলাকায় কুটিরশিল্প পর্যায়ে ব্যাপক পরিমাণে শঙ্খসামগ্রী উৎপাদিত হচ্ছে। এ সকল উৎপাদনকারী উপরিউক্ত শাঁখারিদের সাথে জড়িত নয়।  [শারমীন নাজ]

আরও দেখুন শঙ্খশিল্প।