শহীদ, আনোয়ার উল আলম: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

সম্পাদনা সারাংশ নেই
সম্পাদনা সারাংশ নেই
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[Image:ShaheedAnwarUlAlam.jpg|right|thumbnail|200px|আনোয়ার উল আলম শহীদ ]]
'''শহীদ, আনোয়ার উল আলম''' (১৯৪৭-২০২০)  ষাটের দশকের ছাত্রনেতা, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, বিখ্যাত কাদেরিয়া বাহিনীর বেসামরিক প্রধান, জাতীয় রক্ষীবাহিনীর উপপ্রধান, সাবেক রাষ্ট্রদূত ও লেখক। ডাকনামÑ শহীদ। পুরো নাম আনোয়ার উল আলম শহীদ। তিনি ১৯৪৭ সালে টাঙ্গাইল জেলা শহরের থানাপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈত্রিক নিবাস টাঙ্গাইল জেলার কালিহাতী উপজেলার ইছাপুর গ্রামে। তাঁর পিতার নাম  মৌলবী আব্দুর রাহীম ইছাপুরী এবং মাতার নাম মোছাম্মৎ ইদন্নেছা রাহীম। আনোয়ার উল আলম শহীদ ১৯৬৪ সালে টাঙ্গাইল বিন্দুবাসিনী হাইস্কুল থেকে এস.এস.সি পাস করেন। ১৯৬৬ সালে করটিয়া সা’দত কলেজ থেকে এইচ.এস.সি এবং ১৯৬৮ সালে একই কলেজ থেকে স্নাতক পাস করেন। তিনি ১৯৭০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞান বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ১৯৬৭ সালে টাঙ্গাইল মহকুমা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৬৯-৭০ ও ১৯৭০-৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এসময় তিনি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদস্য ছিলেন।  
'''শহীদ, আনোয়ার উল আলম''' (১৯৪৭-২০২০)  ষাটের দশকের ছাত্রনেতা, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, বিখ্যাত কাদেরিয়া বাহিনীর বেসামরিক প্রধান, জাতীয় রক্ষীবাহিনীর উপপ্রধান, সাবেক রাষ্ট্রদূত ও লেখক। ডাকনামÑ শহীদ। পুরো নাম আনোয়ার উল আলম শহীদ। তিনি ১৯৪৭ সালে টাঙ্গাইল জেলা শহরের থানাপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈত্রিক নিবাস টাঙ্গাইল জেলার কালিহাতী উপজেলার ইছাপুর গ্রামে। তাঁর পিতার নাম  মৌলবী আব্দুর রাহীম ইছাপুরী এবং মাতার নাম মোছাম্মৎ ইদন্নেছা রাহীম। আনোয়ার উল আলম শহীদ ১৯৬৪ সালে টাঙ্গাইল বিন্দুবাসিনী হাইস্কুল থেকে এস.এস.সি পাস করেন। ১৯৬৬ সালে করটিয়া সা’দত কলেজ থেকে এইচ.এস.সি এবং ১৯৬৮ সালে একই কলেজ থেকে স্নাতক পাস করেন। তিনি ১৯৭০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞান বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ১৯৬৭ সালে টাঙ্গাইল মহকুমা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৬৯-৭০ ও ১৯৭০-৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এসময় তিনি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদস্য ছিলেন।  


বিন্দুবাসিনী হাইস্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র থাকা অবস্থায় আনোয়ার উল আলম শহীদ ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত হন। তিনি ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত বাঙালির মুক্তির সনদ ‘আমাদের বাঁচার দাবী’ ৬ দফার আন্দোলন, ছাত্র সমাজের ১১ দফার আন্দোলন ও ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন তিনি কাদেরিয়া বাহিনীর বেসামরিক প্রধান হিসেবে টাঙ্গাইলের মুক্ত এলাকায়  প্রশাসন পরিচালনা করেন। এসময় তিনি ‘রণদূত’ ছদ্মনামে কাদেরিয়া বাহিনীর মুখপত্র ‘রণাঙ্গন’ সাপ্তাহিক পত্রিকা সম্পাদনা করেন। ১৯৭২ সালে তিনি জাতীয় মিলিশিয়া বাহিনীতে যোগদান করেন এবং পরবর্তীকালে জাতীয় রক্ষীবাহিনীর উপপরিচালক (প্রশিক্ষণ) নিযুক্ত হন।  
বিন্দুবাসিনী হাইস্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র থাকা অবস্থায় আনোয়ার উল আলম শহীদ ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত হন। তিনি ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত বাঙালির মুক্তির সনদ ‘আমাদের বাঁচার দাবী’ ৬ দফার আন্দোলন, ছাত্র সমাজের ১১ দফার আন্দোলন ও ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন তিনি কাদেরিয়া বাহিনীর বেসামরিক প্রধান হিসেবে টাঙ্গাইলের মুক্ত এলাকায়  প্রশাসন পরিচালনা করেন। এসময় তিনি ‘রণদূত’ ছদ্মনামে কাদেরিয়া বাহিনীর মুখপত্র ‘রণাঙ্গন’ সাপ্তাহিক পত্রিকা সম্পাদনা করেন। ১৯৭২ সালে তিনি জাতীয় মিলিশিয়া বাহিনীতে যোগদান করেন এবং পরবর্তীকালে জাতীয় রক্ষীবাহিনীর উপপরিচালক (প্রশিক্ষণ) নিযুক্ত হন।  


১৯৭৫ সালের অক্টোবর মাসে জাতীয় রক্ষীবাহিনীকে সেনাবাহিনীতে একত্রিকরণ করা হলে আনোয়ার উল আলম শহীদ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদমর্যাদায় সেনাসদরে জেনারেল স্টাফ অফিসার গ্রেড-১ হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। ১৯৭৮ সালে তাঁকে কর্নেল পদে পদোন্নতি দেয়া হয় এবং একই বছর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিচালক নিযুক্ত করা হয়। তিনি ১৯৮১ সালে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনে কাউন্সিলর হিসেবে চাকরিতে যোগদান করেন। ১৯৯১ সালে তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক নিযুক্ত হন। ১৯৯৪ সালে কানাডার অটোয়ায় বাংলাদেশ হাই কমিশনে ডেপুটি হাই কমিশনার হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৯৮ সালে তিনি বাহরাইনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ পান। ২০০১ সালে তাঁকে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বদলি করা হয় এবং অতিরিক্ত পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে পদোন্নতি দেয়া হয়। ২০০৩ সালে তিনি স্পেনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত নিযুক্ত হন এবং এসময় তিনি জাতিসংঘের বিশ^ পর্যটন সংস্থায় বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৭ সালে অবসর গ্রহণের মাধ্যমে তাঁর কূটনৈতিক জীবনের অবসান ঘটে।  
১৯৭৫ সালের অক্টোবর মাসে জাতীয় রক্ষীবাহিনীকে সেনাবাহিনীতে একত্রিকরণ করা হলে আনোয়ার উল আলম শহীদ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদমর্যাদায় সেনাসদরে জেনারেল স্টাফ অফিসার গ্রেড-১ হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। ১৯৭৮ সালে তাঁকে কর্নেল পদে পদোন্নতি দেয়া হয় এবং একই বছর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিচালক নিযুক্ত করা হয়। তিনি ১৯৮১ সালে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনে কাউন্সিলর হিসেবে চাকরিতে যোগদান করেন। ১৯৯১ সালে তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক নিযুক্ত হন। ১৯৯৪ সালে কানাডার অটোয়ায় বাংলাদেশ হাই কমিশনে ডেপুটি হাই কমিশনার হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৯৮ সালে তিনি বাহরাইনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ পান। ২০০১ সালে তাঁকে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বদলি করা হয় এবং অতিরিক্ত পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে পদোন্নতি দেয়া হয়। ২০০৩ সালে তিনি স্পেনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত নিযুক্ত হন এবং এসময় তিনি জাতিসংঘের বিশ্ব পর্যটন সংস্থায় বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৭ সালে অবসর গ্রহণের মাধ্যমে তাঁর কূটনৈতিক জীবনের অবসান ঘটে।  


আনোয়ার উল আলম শহীদ খেলাধুলা ও সাহিত্যকর্মে উৎসাহী ছিলেন। তিনি ১৯৬১ সালে সিলেটের মুরারী চাঁদ কলেজ মাঠে, ১৯৬২ সালে রংপুর কারমাইকেল কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত প্রাদেশিক স্কাউট জাম্বুরিতে এবং ১৯৬৩ সালে পাকিস্তান দলের সদস্য হয়ে গ্রিসে অনুষ্ঠিত বিশ^ স্কাউট জাম্বুরিতে অংশ নেন। বিন্দুবাসিনী হাইস্কুলে অধ্যয়নকালে ‘মুকুল’, করটিয়া সা’দত কলেজে অধ্যয়নকালে পাক্ষিক ‘আয়না’, ‘সূর্য্যের গান’ প্রভৃতি লিটল ম্যাগাজিন সম্পাদনা করেন। তিনি একজন সুলেখক ছিলেন। তাঁর রচিত গ্রন্থের মধ্যে ‘গ্রীস ঘুরে এলাম’ (১৯৬৪), ‘একাত্তর আমার শ্রেষ্ঠ সময়’ (২০০৯), ‘রক্ষীবাহিনীর সত্যি-মিথ্যা’ (২০১৪), ‘আজীবন সংগ্রামী মৌলবী আব্দুর রাহীম ইছাপুরী’ (২০১৪) প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। তিনি টাঙ্গাইলে ব্যক্তিগত উদ্যোগে ‘শহীদ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর’ প্রতিষ্ঠা করেন। আনোয়ার উল আলম শহীদ ২০২০ সালের ১০ই ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর স্ত্রীর নাম ডা. সাঈদা খান। এ দম্পতির সাঈদ আনোয়ার রিশাদ নামে (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী) ১ পুত্র ও সারা র‌্যামোনা আনোয়ার নামে (সুইডেন প্রবাসী) ১ কন্যা সন্তান রয়েছে।  [শফিউদ্দিন তালুকদার]
আনোয়ার উল আলম শহীদ খেলাধুলা ও সাহিত্যকর্মে উৎসাহী ছিলেন। তিনি ১৯৬১ সালে সিলেটের মুরারী চাঁদ কলেজ মাঠে, ১৯৬২ সালে রংপুর কারমাইকেল কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত প্রাদেশিক স্কাউট জাম্বুরিতে এবং ১৯৬৩ সালে পাকিস্তান দলের সদস্য হয়ে গ্রিসে অনুষ্ঠিত বিশ্ব স্কাউট জাম্বুরিতে অংশ নেন। বিন্দুবাসিনী হাইস্কুলে অধ্যয়নকালে ‘মুকুল’, করটিয়া সা’দত কলেজে অধ্যয়নকালে পাক্ষিক ‘আয়না’, ‘সূর্য্যের গান’ প্রভৃতি লিটল ম্যাগাজিন সম্পাদনা করেন। তিনি একজন সুলেখক ছিলেন। তাঁর রচিত গ্রন্থের মধ্যে ‘গ্রীস ঘুরে এলাম’ (১৯৬৪), ‘একাত্তর আমার শ্রেষ্ঠ সময়’ (২০০৯), ‘রক্ষীবাহিনীর সত্যি-মিথ্যা’ (২০১৪), ‘আজীবন সংগ্রামী মৌলবী আব্দুর রাহীম ইছাপুরী’ (২০১৪) প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। তিনি টাঙ্গাইলে ব্যক্তিগত উদ্যোগে ‘শহীদ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর’ প্রতিষ্ঠা করেন। আনোয়ার উল আলম শহীদ ২০২০ সালের ১০ই ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর স্ত্রীর নাম ডা. সাঈদা খান। এ দম্পতির সাঈদ আনোয়ার রিশাদ নামে (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী) ১ পুত্র ও সারা র‌্যামোনা আনোয়ার নামে (সুইডেন প্রবাসী) ১ কন্যা সন্তান রয়েছে।  [শফিউদ্দিন তালুকদার]


'''তথ্যসূত্র''' আনোয়ার উল আলম শহীদ, ''একাত্তর আমার শ্রেষ্ঠ সময়'', (ঢাকা : সাহিত্য প্রকাশ, ২০০৯); শফিউদ্দিন তালুকদার, ''একাত্তরের বয়ান'' তৃতীয় খণ্ড, (ঢাকা : কথাপ্রকাশ, ২০১৬); জুলফিকার হায়দার ও সবুজ মাহমুদ (সম্পা.), ''চতুর্মাসিক যমুনা'', মার্চ-জুলাই, ২০১৫।
'''তথ্যসূত্র''' আনোয়ার উল আলম শহীদ, ''একাত্তর আমার শ্রেষ্ঠ সময়'', (ঢাকা : সাহিত্য প্রকাশ, ২০০৯); শফিউদ্দিন তালুকদার, ''একাত্তরের বয়ান'' তৃতীয় খণ্ড, (ঢাকা : কথাপ্রকাশ, ২০১৬); জুলফিকার হায়দার ও সবুজ মাহমুদ (সম্পা.), ''চতুর্মাসিক যমুনা'', মার্চ-জুলাই, ২০১৫।


[[en:Shaheed, Anwar Ul Alam]]
[[en:Shaheed, Anwar Ul Alam]]

১৮:০২, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

আনোয়ার উল আলম শহীদ

শহীদ, আনোয়ার উল আলম (১৯৪৭-২০২০) ষাটের দশকের ছাত্রনেতা, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, বিখ্যাত কাদেরিয়া বাহিনীর বেসামরিক প্রধান, জাতীয় রক্ষীবাহিনীর উপপ্রধান, সাবেক রাষ্ট্রদূত ও লেখক। ডাকনামÑ শহীদ। পুরো নাম আনোয়ার উল আলম শহীদ। তিনি ১৯৪৭ সালে টাঙ্গাইল জেলা শহরের থানাপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈত্রিক নিবাস টাঙ্গাইল জেলার কালিহাতী উপজেলার ইছাপুর গ্রামে। তাঁর পিতার নাম মৌলবী আব্দুর রাহীম ইছাপুরী এবং মাতার নাম মোছাম্মৎ ইদন্নেছা রাহীম। আনোয়ার উল আলম শহীদ ১৯৬৪ সালে টাঙ্গাইল বিন্দুবাসিনী হাইস্কুল থেকে এস.এস.সি পাস করেন। ১৯৬৬ সালে করটিয়া সা’দত কলেজ থেকে এইচ.এস.সি এবং ১৯৬৮ সালে একই কলেজ থেকে স্নাতক পাস করেন। তিনি ১৯৭০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞান বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ১৯৬৭ সালে টাঙ্গাইল মহকুমা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৬৯-৭০ ও ১৯৭০-৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এসময় তিনি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদস্য ছিলেন।

বিন্দুবাসিনী হাইস্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র থাকা অবস্থায় আনোয়ার উল আলম শহীদ ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত হন। তিনি ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত বাঙালির মুক্তির সনদ ‘আমাদের বাঁচার দাবী’ ৬ দফার আন্দোলন, ছাত্র সমাজের ১১ দফার আন্দোলন ও ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন তিনি কাদেরিয়া বাহিনীর বেসামরিক প্রধান হিসেবে টাঙ্গাইলের মুক্ত এলাকায় প্রশাসন পরিচালনা করেন। এসময় তিনি ‘রণদূত’ ছদ্মনামে কাদেরিয়া বাহিনীর মুখপত্র ‘রণাঙ্গন’ সাপ্তাহিক পত্রিকা সম্পাদনা করেন। ১৯৭২ সালে তিনি জাতীয় মিলিশিয়া বাহিনীতে যোগদান করেন এবং পরবর্তীকালে জাতীয় রক্ষীবাহিনীর উপপরিচালক (প্রশিক্ষণ) নিযুক্ত হন।

১৯৭৫ সালের অক্টোবর মাসে জাতীয় রক্ষীবাহিনীকে সেনাবাহিনীতে একত্রিকরণ করা হলে আনোয়ার উল আলম শহীদ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদমর্যাদায় সেনাসদরে জেনারেল স্টাফ অফিসার গ্রেড-১ হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। ১৯৭৮ সালে তাঁকে কর্নেল পদে পদোন্নতি দেয়া হয় এবং একই বছর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিচালক নিযুক্ত করা হয়। তিনি ১৯৮১ সালে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনে কাউন্সিলর হিসেবে চাকরিতে যোগদান করেন। ১৯৯১ সালে তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক নিযুক্ত হন। ১৯৯৪ সালে কানাডার অটোয়ায় বাংলাদেশ হাই কমিশনে ডেপুটি হাই কমিশনার হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৯৮ সালে তিনি বাহরাইনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ পান। ২০০১ সালে তাঁকে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বদলি করা হয় এবং অতিরিক্ত পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে পদোন্নতি দেয়া হয়। ২০০৩ সালে তিনি স্পেনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত নিযুক্ত হন এবং এসময় তিনি জাতিসংঘের বিশ্ব পর্যটন সংস্থায় বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৭ সালে অবসর গ্রহণের মাধ্যমে তাঁর কূটনৈতিক জীবনের অবসান ঘটে।

আনোয়ার উল আলম শহীদ খেলাধুলা ও সাহিত্যকর্মে উৎসাহী ছিলেন। তিনি ১৯৬১ সালে সিলেটের মুরারী চাঁদ কলেজ মাঠে, ১৯৬২ সালে রংপুর কারমাইকেল কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত প্রাদেশিক স্কাউট জাম্বুরিতে এবং ১৯৬৩ সালে পাকিস্তান দলের সদস্য হয়ে গ্রিসে অনুষ্ঠিত বিশ্ব স্কাউট জাম্বুরিতে অংশ নেন। বিন্দুবাসিনী হাইস্কুলে অধ্যয়নকালে ‘মুকুল’, করটিয়া সা’দত কলেজে অধ্যয়নকালে পাক্ষিক ‘আয়না’, ‘সূর্য্যের গান’ প্রভৃতি লিটল ম্যাগাজিন সম্পাদনা করেন। তিনি একজন সুলেখক ছিলেন। তাঁর রচিত গ্রন্থের মধ্যে ‘গ্রীস ঘুরে এলাম’ (১৯৬৪), ‘একাত্তর আমার শ্রেষ্ঠ সময়’ (২০০৯), ‘রক্ষীবাহিনীর সত্যি-মিথ্যা’ (২০১৪), ‘আজীবন সংগ্রামী মৌলবী আব্দুর রাহীম ইছাপুরী’ (২০১৪) প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। তিনি টাঙ্গাইলে ব্যক্তিগত উদ্যোগে ‘শহীদ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর’ প্রতিষ্ঠা করেন। আনোয়ার উল আলম শহীদ ২০২০ সালের ১০ই ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর স্ত্রীর নাম ডা. সাঈদা খান। এ দম্পতির সাঈদ আনোয়ার রিশাদ নামে (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী) ১ পুত্র ও সারা র‌্যামোনা আনোয়ার নামে (সুইডেন প্রবাসী) ১ কন্যা সন্তান রয়েছে। [শফিউদ্দিন তালুকদার]

তথ্যসূত্র আনোয়ার উল আলম শহীদ, একাত্তর আমার শ্রেষ্ঠ সময়, (ঢাকা : সাহিত্য প্রকাশ, ২০০৯); শফিউদ্দিন তালুকদার, একাত্তরের বয়ান তৃতীয় খণ্ড, (ঢাকা : কথাপ্রকাশ, ২০১৬); জুলফিকার হায়দার ও সবুজ মাহমুদ (সম্পা.), চতুর্মাসিক যমুনা, মার্চ-জুলাই, ২০১৫।