শরফনামাহ

শরফনামাহ  ইবরাহিম কাওয়াম ফারুকী বিরচিত ফারসি ভাষায় লিখিত একটি অভিধান। গ্রন্থকার বাংলায় অবস্থানকালে এটি রচনা করেন। লেখকের নামানুসারে একে ফারহাঙ-ই-ইবরাহিমীও বলা হয়। শেখ শরফউদ্দীন ইয়াহিয়া মানেরীর নামে বইটি উৎসর্গীকৃত বলে এটি শরফনামাহ নামে খ্যাত। গ্রন্থকার ইবরাহিম কাওয়াম ফারুকী জৌনপুরে জন্মগ্রহণ করেন, পরে তিনি বাংলায় চলে আসেন। বাংলার সুলতান রুকনুদ্দীন বারবক শাহের (১৪৫৯-১৪৭৪) প্রশংসায় তিনি কবিতা লিখেন। এর থেকে ধারণা করা যায় যে তিনি শুধু সুলতানের সমসাময়িকই নন বরং তাঁর সভাসদও ছিলেন।

বিভিন্ন কারণে বাংলা অঞ্চলে রচিত ফারসি সাহিত্যের মধ্যে শরফনামাহ খুবই গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে আছে। এটি ভারত উপমহাদেশে সংকলিত প্রথম অভিধান, বাংলায় লিখিত ফারসি ভাষার তৃতীয় গ্রন্থ। এটি একটি সাহিত্য কর্ম এবং এতে অনেক ফারসি কবির নাম দেওয়া আছে। তাঁদের মধ্যে অন্তত একজন ছিলেন অভিধান প্রণেতা। শরফনামাহ-র পূর্বে বাহর-উল-হায়াত এবং নাম-ই-হক নামে অপর দুটি ফারসি বই বাংলা মুলুকে রচিত হয়।

শরফনামাহ গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত কবিদের নামের তালিকা বেশ গুরুত্বপূর্ণ এই কারণে যে, এ থেকে রুকনুদ্দীন বারবক শাহের দরবারে কবি-সাহিত্যিকদের সাহিত্যকর্ম বিষয়ে ধারণা পাওয়া যায়। তাঁদের নামগুলি নিম্নে দেওয়া হলো: (১) আমীর জৈনুদ্দীন হারভী, তিনি একাধারে সভাকবি, সমসাময়িক বাংলার কবিদের মধ্যে প্রধান এবং সরকারের উচ্চপদে অধিষ্ঠিত ছিলেন; (২) আমীর শাহাবুদ্দীন হাকিম কিরমানী, তিনি ফারহাঙ-ই-আমীর শাহাবুদ্দীন হাকিম কিরমানী নামে আর একটি ফারসি অভিধান রচনা করেন। তিনি আমীর বা রাষ্ট্রের উচ্চপদস্থ লোক এবং বিখ্যাত হাকিম বা চিকিৎসকও ছিলেন। হাকিম হিসেবে তিনি এত খ্যাতিমান ছিলেন যে তাঁকে চিকিৎসকদের অহঙ্কার বলা হতো; (৩-৭) মনসুর শিরাজী, মালীক ইউসুফ বিন হামিদ, সৈয়দ জালাল, সৈয়দ মুহম্মদ রুকন, এবং সৈয়দ হাসান - এঁরা সবাই ছিলেন কবি; (৮) শেখ ওয়াহেদী, তিনি হাবল-মতিন নামে একটি বই রচনা করেন, সম্ভবত এটির বিষয়বস্ত্ত ছিল তাস্ওয়াফ। দুর্ভাগ্যবশত এঁদের লেখা বই আমাদের কাছে পৌঁছায় নি। ঢাকা আলীয়া মাদ্রাসা গ্রন্থাগারে শরফনামাহ-র একটি পান্ডুলিপি সংরক্ষিত আছে।

রুকনুদ্দীন বারবক শাহ অনেক হিন্দু কবির পৃষ্ঠপোষক ছিলেন বলে জানা যায়। শরফনামাহ গ্রন্থে দেখান হয় যে, তিনি আরও ফারসি কবি ও অভিধান প্রণেতাদের পৃষ্ঠপোষকতা করেন।  [আবদুল করিম]