লোহাগাড়া উপজেলা (চট্টগ্রাম)

লোহাগাড়া উপজেলা (চট্টগ্রাম জেলা) আয়তন: ২৫৮.৮৭ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২১°৫৪´ থেকে ২২°০৫´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯২°০০´ থেকে ৯২°১৩´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে সাতকানিয়া উপজেলা, দক্ষিণে চকোরিয়া ও লামা উপজেলা, পূর্বে বান্দরবান সদর এবং লামা উপজেলা, পশ্চিমে বাঁশখালী উপজেলা।

জনসংখ্যা ২৭৯৯১৩; পুরুষ ১৩৫৭১৭, মহিলা ১৪৪১৯৬। মুসলিম ২৫১২২৯, হিন্দু ২২৬০৯, বৌদ্ধ ৬০৩৮, খ্রিস্টান ২২ এবং অন্যান্য ১৫।

জলাশয় টংকাবতী, দলু, হাদর ও হাঁকার খাল এবং জিলাইছড়া ও ধলাই বিল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন লোহাগাড়া থানা গঠিত হয় ১৯৮১ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
- ৪০ ৪৩ ৩০৮১৫ ২৪৯০৯৮ ১০৮১ ৬০.২ ৪৮.৬
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৯.৭৮ ৩০৮১৫ ৩১৫১ ৬০.২
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
আধুনগর ৩ ৪৫৭৪ ৯৬৯৬ ১১০৯২ ৫৩.৭
আমিরাবাদ ১০ ৪৩৬১ ১৮০১৮ ১৯২৮৫ ৫৮.৭
কলাউজান ৪৩ ৩৯৯৬ ১৩৩৩৪ ১৫০১৩ ৪৫.২
চরম্বা ২৫ ৮০২৭ ১২৪৯৬ ১২৯৭৪ ৪০.৮
চুনতি ৩২ ১৫১২৮ ১৬৫১৩ ১৬৯০২ ৪৩.০
পদুয়া ৭৩ ৬৬৪০ ১৯৮১৮ ২১০২৪ ৪৯.১
পুটিবিলা ৮০ ১০৯২০ ১২৪৪৪ ১৩৩৩৯ ৩৩.৭
বড়হাতিয়া ১৮ ৭৫৪৮ ১৫৬৪৮ ১৭৩০৭ ৫২.৩
লোহাগাড়া ৬২ ২৭৭৬ ১৭৭৫০ ১৭২৬০ ৫৯.৫

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ মছদিয়া বৌদ্ধ মন্দির (আধুনগর, আঠারো শতক), চেঁদিরপুনি বৌদ্ধ মন্দির ও রাজস্থাপত্য, গুপ্ত জমিদার বাড়ি (পদুয়া), আধুনগর বৌদ্ধ মন্দির, মগদীঘি মগদেশ্বরী মন্দির।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালে পাকসেনারা এ উপজেলায় ব্যাপক অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালায়। আমিরাবাদ বণিক পাড়ায় ১৫ জন গ্রামবাসীকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। রাজাকাররা চুনতি ডেপুটি বাজারের হিন্দু পাড়া থেকে ১২ জনকে চন্দনাইশ থানার দোহাজারিতে নিয়ে হত্যা করে। জোটপুকুরিয়ায় মুক্তিযোদ্ধারা ১৭ জন রাজাকারকে হত্যা করে। উপজেলার মুক্তিযোদ্ধারা আমিরাদ রাজাকার ক্যাম্প, বটতলী রাজাকার ক্যাম্প ও অন্যান্য কয়েকটি স্থানে সফল অপারেশন পরিচালনা করে। পুটিবিলা ইউনিয়নের জোটপুকুরিয়ায় ১টি গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে।

বিস্তারিত দেখুন লোহাগাড়া উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৯।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৬২, মাযার ৪, মন্দির ৯, গির্জা ২, প্যাগাডো ৬। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: লোহাগাড়া মসজিদ, চুনতি জামে মসজিদ, বড়হাতিয়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, হযরত শাহ পীর আউলিয়ার মাযার, চুনতি শাহ সাহেব কেবলার মাযার, বার আউলিয়ার মাযার, মছদিয়া বৌদ্ধ মন্দির, আধুনগর মন্দির।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪৯.২%; পুরুষ ৪৯.৯%, মহিলা ৪৮.৬%। কলেজ ৩, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২৫ প্রাথমিক বিদ্যালয় ৯৭, মাদ্রাসা ২২। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: বার আউলিয়া ডিগ্রি কলেজ (১৯৮৩), চুনতি মহিলা কলেজ (১৯৮৯), উত্তর আমিরাবাদ এম বি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৩২), উত্তর আমিরাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯৩৫), গোলামবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৩৭), চুনতি কলাউজান গৌরসুন্দর হাইস্কুল (১৯৪৫), চুনতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯১৯), সুখছড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯২৯), কলাউজান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯২৯), সেনেরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯৩২), হাকিমিয়া কামিল মাদ্রাসা (১৯৩৭)।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান কাব ৩২, লাইব্রেরি ১১, খেলার মাঠ ২০, সাংস্কৃতিক সংগঠন ২।

দর্শনীয় স্থান চুনতি অভয়ারণ্য, পদুয়া ফরেস্ট এলাকা, গৌড়স্থানের প্রকৃতি।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৩৯.২৯%, অকৃষি শ্রমিক ৫.৪০%, শিল্প ০.৮২%, ব্যবসা ১৭.৭১%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৩.৪৩%, চাকরি ১৪.৫৮%, নির্মাণ ১.৫৯%, ধর্মীয় সেবা ০.৪৯%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ৫.১৯% এবং অন্যান্য ১১.৫০%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৬৩.৮৮%, ভূমিহীন ৩৬.১২%। শহরে ৬৪.১৩% এবং গ্রামে ৬১.৭৪% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, আলু, আখ, মরিচ, ফেলং।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি তিল, তিসি, তরমুজ।

প্রধান ফল-ফলাদি কলা, পেঁপে, পেয়ারা, আমড়া, বরই।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ২৩২২ (পুকুর), হ্যাচারি (মৎস্য) ২২, গবাদিপশু ৫, হাঁস-মুরগি ১৩৯।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৮৩ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ১১৪ কিমি, কাঁচারাস্তা ৯১৭ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি।

শিল্প ও কলকারখানা চালকল, বরফকল, বিস্কুট ফ্যাক্টরি, টেক্সটাইল মিল, প্লাইউড কারখানা।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, পাটি তৈরি, জাল বুনন, বাঁশের কাজ, কাঁঠের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ২৪, মেলা ৩। দরবেশ হাট, তেওয়ারি হাট, খা’র হাট, হিন্দুর হাট, সেনের হাট ও মনুফকির হাট উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য চাল, জাল, তৈরি পোশাক।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৬০.১% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৮৯.৪%, ট্যাপ ৩.১% এবং অন্যান্য ৭.৫%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৬৪.২% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৩০.৮% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৫.০% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র ১, পরিবার-পরিকল্পনা কেন্দ্র ৫, ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র ৪, ক্লিনিক ৫।

এনজিও ব্র্যাক, আশা, উদ্দীপন। [মোহাম্মদ আবুল মঞ্জুর]

তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; লোহাগাড়া উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।