লোহাগড়া উপজেলা (নড়াইল)

লোহাগড়া উপজেলা (নড়াইল জেলা) আয়তন: ২৮৪.৯১ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৩°০৫´ থেকে ২৩°১৯´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°২৯´ থেকে ৮৯°৪৬´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে মোহাম্মদপুর উপজেলা, দক্ষিণে কালিয়া উপজেলা, পূর্বে আলফাডাঙ্গা, কাশিয়ানী ও গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা, পশ্চিমে নড়াইল সদর উপজেলা।

জনসংখ্যা ২২৮৫৯৪; পুরুষ ১০৯৪৫০, মহিলা ১১৯১৪৪। মুসলিম ২০২৯৩৩, হিন্দু ২৫৬১৮, বৌদ্ধ ১, খ্রিস্টান ৪ এবং অন্যান্য ৩৮।

জলাশয় প্রধান নদী: নবগঙ্গা, মধুমতি, ইছামতি। ছাতরা খাল, গণ্ডব খাল এবং নলদী বিল, কুমরী বিল ও আমাদার বিল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন লোহাগড়া থানা গঠিত হয় ১৮৬১ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৪ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
১২ ১৩৪ ২১৭ ২৫২৯০ ২০৩৩০৪ ৮০২ ৭৬.১ ৬০.০
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
১৭.১ ২৫২৯০ ১৪৭৯ ৭৬.১
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
ইতনা ১৫ ৭৩৮৬ ১০৪২২ ১১৮৫৪ ৬০.৬
কাশিপুর ৩১ ৪৮০৭ ৬৭২৩ ৭১১৮ ৬৫.১
কোটাকোল ৩৯ ৪১২৫ ৫৭৮৬ ৬৩৫৫ ৬০.৫
জয়পুর ২৩ ৪৭৯৯ ৯৪৫৭ ১০৬৬২ ৬৮.০
দিঘলিয়া ০৭ ৬৯০৭ ১০৭৬৭ ১১৬৯৩ ৬৪.৬
নলদী ৭৯ ৯৮৫৩ ১০৩৫১ ১০৪০৯ ৫১.০
নোয়াগ্রাম ৮৭ ৬২৫০ ৮০০৪ ৮৭০০ ৬৫.০
মল্লিকপুর ৭১ ৪৩৫৪ ৭২৬৪ ৮০২৪ ৬৫.৯
লক্ষীপাশা ৫৫ ৩৭৪৬ ৪৪০৬ ৪৭৫৮ ৬৭.৬
লাহুড়িয়া ৪৭ ৭১১৬ ১২০৬১ ১২৯৮৩ ৪৬.৬
লোহাগড়া ৬৩ ১৪১৫ ৩৫৮৭ ৩৯৮৪ ৬৫.৭
শালনগর ৯৪ ৫৪৪৬ ৮৪২৯ ৯৫০৭ ৫৩.৬

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ নলদী গাজীর দরগাহ ও রাধা গোবিন্দের মন্দির (জোড়বাংলা)।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালে এ উপজেলার কালনায় পাকসেনা ও রাজাকারদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধদের লড়াইয়ে ৮ জন পাকসেনা নিহত হয় এবং ২ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ২৩ মে পাকসেনারা ইতনা গ্রামে ৩৯ জন লোককে হত্যা করে এবং ব্যাপক লুটতরাজ ও অগ্নিসংযোগ করে। ৮ ডিসেম্বর এ উপজেলা শত্রুমুক্ত হয়।

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন গণকবর ১ (ইতনা)। উপজেলার ইতনায় ১টি গণকবর রয়েছে।

বিস্তারিত দেখুন লোহাগড়া উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৯।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৫২৫, মন্দির ১০, মাযার ৫, তীর্থস্থান ৩। উলেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: লোহাগড়া থানা জামে মসজিদ, লক্ষ্মীপাশা কালীবাড়ি মন্দির।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৬১.৯%; পুরুষ ৬৩.৩%, মহিলা ৬০.৬%। কলেজ ৬, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৩৪, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৫১, মাদ্রাসা ৬৮। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: নবগঙ্গা ডিগ্রি কলেজ, ইতনা স্কুল এন্ড কলেজ (১৯০০), লোহাগড়া আদর্শ মহাবিদ্যালয় (১৯৬৮), লক্ষ্মীপাশা আদর্শ মহাবিদ্যালয়, সিডি উচ্চ বিদ্যালয়, এলএসজেএন উচ্চ বিদ্যালয়, ইতনা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯০০), দিঘলিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬৬), লোহাগড়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০৬), নলদী বিএসএস মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯১৬), কেডিআরকে মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯২০), কাশিপুর এসি মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯১৬), ইতনা মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯৩০), লক্ষ্মীপাশা আদর্শ বিদ্যালয় (১৮৮৯), কুমরী তালবাড়ীয়া হামিদিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা (১৯৬০), লাহুড়িয়া সিদ্দিকিয়া ফাজিল মাদ্রাসা, এসএইচবিআর আলিম মাদ্রাসা।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী বারুজীবী সম্প্রদায় (অবলুপ্ত), শতাব্দীর আলো (অনিয়মিত)।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ৩, কাব ১৩৮, নাট্যদল ৬, সাহিত্য সংগঠন ২, মহিলা সংগঠন ৯০, যাত্রাপার্টি ৪, খেলার মাঠ ৩০, সিনেমা হল ২।

বিনোদন কেন্দ্র ‘নিরিবিলি’ পিকনিক স্পট এবং শিশুদের জন্য ‘নিরিবিলি’ খামারবাড়ি।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৫৮.০৭%, অকৃষি শ্রমিক ২.৭৬%, শিল্প ১.১৬%, ব্যবসা ১৩.২৮%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৩.৬২%, চাকরি ১২.৭২%, নির্মাণ ১.১৭%, ধর্মীয় সেবা ০.২১%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.৪৪% এবং অন্যান্য ৬.৫২%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৬২.২২%, ভূমিহীন ৩৭.৭৮%। শহরে ৪৬.৬৯% এবং গ্রামে ৬২.৫৮% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, পাট, গম, সরিষা, পান, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি চীনা, তিসি, কাউন, অড়হর, তিল, ছোলা, যব।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, লিচু, কলা, পেঁপে, জামরুল, জাম, নারিকেল, সুপারি, বাতাবিলেবু, আমড়া।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ৪০১৫, গবাদিপশু ৪৩, হাঁস-মুরগি ৪৭।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১৮৮.০৬ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৪৯.১৯ কিমি, কাঁচারাস্তা ৪১৯.১১ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, ঘোড়া ও গরুর গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা বিস্কুট ফ্যাক্টরি, কলম ফ্যাক্টরি, আইস ফ্যাক্টরি, স’মিল, ওয়েল্ডিং কারখানা।

কুটিরশিল্প তাঁতশিল্প, বাঁশের কাজ, সেলাই কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৪০, মেলা ৪। লোহাগড়া বাজার, বড়দিয়া বাজার, এড়েন্দা বাজার, নলদী বাজার, দিঘলিয়া বাজার, রায়গ্রাম বাজার, মিঠাপুর বাজার, মণ্ডলবাগ বাজার, ইতনা হাট ও মানিকগঞ্জ হাট এবং রথের মেলা (রাধানগর), চৈত্র সংক্রান্তির মেলা (লোহাগড়া, দিঘলিয়া ও বড়দিয়া) উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য পান, সুপারি, কলা, পেঁপে, শাকসবজি।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৪৩.৯% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৮.১%, ট্যাপ ০.৩% এবং অন্যান্য ১.৬%। এ উপজেলার অগভীর নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৮৫.৬% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ১২.৫% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ১.৯% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ১২, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ৩, হাসপাতাল ১, দাতব্য চিকিৎসালয় ৪, ক্লিনিক ৫, পশু চিকিৎসালয় ২।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৯৫৪ সালের বন্যা ও ১৯৫৭ সালের খরা এবং ১৯৬১ ও ১৯৮৮ সালের প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড়ে এ উপজেলার বহু লোক প্রাণ হারায় এবং ঘরবাড়ি, গবাদিপশু, ফসল ও অন্যান্য মূল্যবান সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়।

এনজিও ব্র্যাক, আশা, প্রশিকা। [বিল্লাল হুসাইন]

তথ্যসূূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; লোহাগড়া উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।