পাল, বিচারপতি রাধাবিনোদ ও লাঙল১: পাতাগুলির মধ্যে পার্থক্য

(পাতাগুলির মধ্যে পার্থক্য)
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
[[Image:PloughArt1.jpg|thumb|right|400px|চিরাচরিত দেশী লাঙলের বিভিন্ন অংশ]]
[[Image:PalJusticeRadhabinod.jpg|thumb|400px|right|বিচারপতি রাধাবিনোদ পাল]]
'''লাঙল১''' (Plough) ভূমি চাষে ব্যবহার্য অন্যতম দেশীয় সরঞ্জাম। বহুকাল আগে থেকেই লাঙল সনাতনী কৃষি উৎপাদনের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসেবে পরিগণিত হয়ে আসছে। সাধারণত দুটি শক্ত-সমর্থ গরু দ্বারা এটিকে টানা হয়, মাঝে মাঝে অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে মানুষও এটিকে টেনে থাকে। এখনও বিদ্যমান পোড়ামাটির প্লেটে সপ্তম শতাব্দীর প্রথমদিকে বাংলায় লাঙল ব্যবহারের নিদর্শন রয়েছে। কিন্তু নিশ্চিতভাবে এর ব্যবহার অনেক দিনের বলা যায়, লোহার ফলাসহ আধুনিক লাঙলের ব্যবহার লৌহ যুগের ঘটনা। লাঙলে লোহার ফলা ব্যবহারের পূর্বে লাঙল ছিল সম্পূর্ণ কাঠের তৈরি এবং ব্যবহারের দিক থেকে তেমন কার্যকর ছিল না।
'''পাল, বিচারপতি রাধাবিনোদ''' (১৮৮৬-১৯৬৭)  বিচারপতি, শিক্ষাবিদ। তিনি ছিলেন দূরপ্রাচ্য বিষয়ক আন্তর্জাতিক সামরিক ট্রাইব্যুনালের বিচারক (১৯৪৬-১৯৪৮), কোলকাতা হাইকোর্টের বিচারক (১৯৪১-৪৩), কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (১৯৪৪-৪৬), আন্তর্জাতিক ল’ কমিশনের চেয়ারম্যান (১৯৫৮-৬২), হেগে অবস্থিত আন্তর্জাতিক আদালতের বিচারক (১৯৫৭)।


দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ শেষে জাপানের আত্মসমর্পণের পর মিত্রশক্তি তাদের বিবেচনায় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের যুদ্ধে জাপানের সম্পৃক্ততা এবং বিশ শতকের ত্রিশ এবং চল্লিশের দশকের গোড়ার দিকে জাপানে  সমরবাদের উত্থানের জন্য যেসব জাপানী নেতা ও জেনারেল দায়ী ছিলেন তাদের বিচারের আয়োজন করে। মিত্রশক্তির সর্বাধিনায়ক ডগলাস ম্যাক আর্থার পটস-ডাম ঘোষণা দ্বারা অর্পিত ক্ষমতাবলে দূরপ্রাচ্য বিষয়ক আন্তর্জাতিক সামরিক ট্রাইব্যুনাল গঠন করেন। পরবর্তী সময়ে এই ট্রাইব্যুনালে জাপানের প্রধান প্রধান যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয় (১৯৪৬-১৯৪৮) এবং তাতে জাপানের আটজন শীর্ষস্থানীয় নেতার মৃত্যুদন্ড এবং আরো সতেরো জনকে কারাদন্ড দেয়া হয়। ট্রাইব্যুনাল গঠনে সর্বমোট ১১ জন বিচারককে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। ট্রাইব্যুনালের অধিকাংশ সদস্য যুদ্ধাপরাধের দায়ে জাপানী নেতাদের দোষী সাব্যস্ত করেন এবং আন্তর্জাতিক আইনে তাদের সাজা দেন। কিন্তু এ ট্রাইব্যুনালের ভারতীয় বিচারপতি রাধাবিনোদ পাল ট্রাইব্যুনালের অধিকাংশের রায়ের সাথে একমত হতে পারেন নি। তিনি ভিন্ন মত পোষণ করে একটি রায় প্রদান করেন এবং অধিকাংশ বিচারকের রায়ের সঙ্গে একমত পোষণ করতে অস্বীকৃতি জানান। তাঁর দীর্ঘ চারশ’ পৃষ্ঠার রায়ে রাধাবিনোদ পাল দেখিয়েছেন যে, বিবাদী পক্ষের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলো আইনের চোখে টিকে না। তিনি আরো মন্তব্য করেন যে, সব সাক্ষ্য প্রমাণাদি খুবই দুর্বল এবং তাতে বিজয়ীদের দৃষ্টিভঙ্গী ও খেয়ালখুশির প্রতিফলন ঘটেছে।
লাঙলে কয়েকটি অংশ রয়েছে যেমন: হাতের মুঠো, হাতল, প্রধান দÐ, ফলা, কীলক ইত্যাদি। লাঙল সামনের দিকে টেনে এর সরু ফলা মাটির কয়েক সেমি নিচে ভেদ করানো হয় এবং এর সাহায্যে মাটির উপরিভাগ ভেঙে ফেলা হয়। ভাঙার সময় মাটি ফলার উভয় দিকেই নিক্ষিপ্ত হয়। মাটির প্রকারের ওপর ভিত্তি করে মাটিকে ফসল বোনার উপযুক্ত করার জন্য প্রয়োজনে কয়েকবার লাঙল দ্বারা চষা হয়। প্রয়োজনীয় মেরামতসহ একটি লাঙল ৪-৫ বছর টিকে থাকে। গুণাগুণের ভিত্তিতে বাংলাদেশের মাটিকে ১৮ ভাগে বিভক্ত করা যায়। প্রতিটি লাঙল মাটির ধরনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। লাঙলের ধরন শুধু মাটির ভৌত গুণের দ্বারাই প্রভাবিত হয় নি, স্থানীয় ঐতিহ্যের দ্বারাও প্রভাবিত হয়েছে।


দূরপ্রাচ্য বিষয়ক আন্তর্জাতিক সামরিক ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি রাধাবিনোদ প্রদত্ত ভিন্নমত পোষণকারী রায়টি একদিকে আন্তর্জাতিক আইনের ইতিহাসে এবং অন্যদিকে যুদ্ধ শান্তির ইতিহাসে অসাধারণ গুরুত্ব বহন করে। এতে যুদ্ধ ও শান্তির দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর ইতিহাসের আইনগত ভিত্তির দালিলিক ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। ডঃ রাধাবিনোদের ভিন্নমত পোষণকারী রায়ের মূল প্রশ্ন ছিল, যারা জাপানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে তাদের নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী ট্রাইব্যুনাল গঠন করার এবং নিজেদের শর্তানুযায়ী পরাজিত শত্রুদের বিচার করার নৈতিক ও আইনগত এখতিয়ার আছে কিনা। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠনে জাপানের কোনো ভূমিকা ছিল না। বিচারপতি রাধাবিনোদ পাল বিজয়ী পক্ষের একতরফাভাবে প্রণীত বিচারের দিক নির্দেশনা বিধিনিয়ম দ্বারা চালিত হতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন।  নেদারল্যান্ডের একজন এবং ফিলিপাইনের একজন বিচারপতি রাধাবিনোদকে নৈতিক সমর্থন যুগিয়েছিলেন যদিও শেষ পর্যন্ত তারা সংখ্যাগরিষ্ঠের প্রদত্ত রায়কে মেনে নিয়েছেন।
[[Image:PloughArt2.jpg|thumb|right|600px|বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবহুত লাঙল]]
গবাদি পশুর উচ্চ রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়ের জন্য কলের লাঙলের মাধ্যমে চাষাবাদের তুলনায় লাঙল দ্বারা চাষাবাদ বর্তমানে ব্যয়বহুল। সে কারণে লাঙলকে এখন সেকেলে একটি সরঞ্জাম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সাধারণ লাঙলের পরিবর্তে কলের লাঙলের ব্যবহার এখন খুব দ্রæত বৃদ্ধি পাচ্ছে।  [মোঃ শহীদুল ইসলাম]
'''''লাঙলস্তর (Ploughpan)''''' চাষকৃত স্তরের নিচে অবস্থিত গাঢ় শক্ত মাটির একটি স্তর। বাংলাদেশের অধিকাংশ মৃত্তিকায় আর্দ্র বা সিক্ত অবস্থায় জমি লাঙল দিয়ে চাষ দেওয়া হলে লাঙলের তলার চাপে এ শক্ত স্তরের সৃষ্টি হয়। বছরের পর বছর দেশী লাঙল ব্যবহার করে রোপা ধান চাষ করার ফলে প্রায় ৩-৫ সেমি শক্ত লাঙলস্তর বাংলাদেশে চাষকৃত প্রায় সকল মৃত্তিকায় কিছু পরিমাণ তৈরি হতে দেখা যায়। লাঙলস্তর চাষাবাদে দুটি প্রধান সমস্যার সৃষ্টি করে। প্রথমত, শক্ত লাঙলস্তর মূলের বিস্তার এবং বাড়ন্ত ফসল কর্তৃক মাটির নিæস্তরের পুষ্টি উপাদান গ্রহণে বাঁধা সৃষ্টি করে এবং  দ্বিতীয়ত, লাঙলস্তর মাটির নিæস্তরে পানির চলাচলে বাঁধা দেয়। সেচ দেওয়া হলে বা ভারি বৃষ্টিপাত হলে লাঙলস্তরের জন্য মৃত্তিকার উপরের স্তর পানিতে সম্পৃক্ত হয়ে পড়তে পারে এবং এতে স্পর্শকাতর শুষ্কভূমির ফসলসমূহ ক্ষতির সম্মুখীন বা একেবারে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তিস্তা, গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, মেঘনা বরেন্দ্র অঞ্চলসমূহে প্রায়ই লাঙলস্তর গঠিত হতে দেখা যায়।  [সুলতানা রাজিয়া]


ট্রাইব্যুনালের অধিকাংশ বিচারক রাধাবিনোদ পালের ভিন্ন মতের রায়কে এশিয়ায় ইউরোপীয় আধিপত্যের বিরোধী একজন ভারতীয় জাতীয়তাবাদীর পাশ্চাত্য বিরোধী মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ বলে আখ্যায়িত করেন। রাধাবিনোদ পালের আরও বক্তব্য ছিল এই যে, প্রথম মহাযুদ্ধের পর থেকে বিকাশ লাভ করা আন্তর্জাতিক আইনের বেশিরভাগই টোকিও ট্রাইব্যুনাল আমলে নেয় নি।
[[en:Plough]]
 
রাধাবিনোদ পাল ১৮৮৬ সালের ২৭ জানুয়ারি বাংলাদেশে কুষ্টিয়া জেলার সলিমপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯০৩ সালে প্রবেশিকা এবং ১৯০৫ সালে রাজশাহী কলেজ হতে কৃতিত্বের সাথে এফএ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। রাধাবিনোদ কোলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ১৯০৭ সালে গণিতশাস্ত্রে বিএ (অনার্স) এবং ১৯০৮ সালে এমএ পাস করেন। ১৯১১ সালে বিএল ডিগ্রি লাভের পূর্ব পর্যন্ত তিনি এলাহাবাদ অ্যাকাউন্ট্যান্ট জেনারেলের অফিসে কিছুকাল কেরানীর চাকরি করেন। পরবর্তী সময়ে রাধাবিনোদ পাল ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজে গণিতের প্রভাষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি ময়মনসিংহ কোর্টে আইন ব্যবসায়ে নিয়োজিত ছিলেন। ময়মনসিংহে অবস্থানকালে ১৯২০ সালে তিনি কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলএম ডিগ্রি লাভ করে আইনের ক্ষেত্রে তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রসার ঘটান। তিনি এলএলএম পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করেন। এরপর তিনি কোলকাতায় গিয়ে হাইকোর্টে আইন ব্যবসায়ে নিয়োজিত হন।
 
১৯২৪ সালে রাধাবিনোদ পাল কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। তাঁর অভিসন্দর্ভের বিষয় ছিল Hindu Philosophy of Law in Vedic and Post-Vedic Times Prior to the Institute of Manu. ১৯২৩ থেকে ১৯৩৬ সাল পর্যন্ত সময়কালে তিনি ইউনিভার্সিটি ল কলেজে আইনের অধ্যাপক ছিলেন। আইন বিশারদ হিসেবে তাঁর সুখ্যাতি চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে। তিনি তিনবার মর্যাদাপূর্ণ Tagore Law Lecture প্রদান করেন, প্রথমবার ১৯২৫ সালে, দ্বিতীয়বার ১৯৩০ সালে এবং তৃতীয়বার ১৯৩৮ সালে। তাঁর বক্তৃতার বিষয়বস্ত্ত ছিল Law of Primogeniture with Special Reference to India, Ancient and Modern; History of Hindu Law in the Vedic and Post-Vedic Times Down to the Institutes of Manu;  Crimes in International Realtions.
 
রাধাবিনোদ পাল ইন্টারন্যাশনাল একাডেমী অব কমপ্যারাটিভ ল’-এর যুগ্মসভাপতি এবং ১৯৩৭ সালে  ইন্টারন্যাশনাল ল’ অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য হন। আইন বিশারদ হিসেবে তিনি এতোটাই খ্যাতিমান হন যে, ১৯৪১ সালে তাঁকে ভারত সরকারের আইন উপদেষ্টা নিয়োগ করা হয়। এর অল্প কিছুদিন পর তিনি কোলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি নিযুক্ত হন এবং ১৯৪৩ সালের জুলাই পর্যন্ত এ পদে অধিষ্ঠিত থাকেন। ১৯৪৪ সালের মার্চ মাসে রাধাবিনোদ পাল কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিযুক্ত হন। ১৯৪৬ সালে তিনি কর্মজীবন থেকে অবসর গ্রহণ করেন সলিমপুরের গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসেন।
 
গ্রামের বাড়ি সলিমপুরে অবস্থানকালে একটি ঘটনা তাঁকে তাঁর জীবনের এক অচিন্ত্যনীয় মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করে। ১৯৪৬ সালের এপ্রিল মাসে রাধাবিনোদ পাল দূরপ্রাচ্য বিষয়ক আন্তর্জাতিক সামরিক ট্রাইব্যুনালের একজন বিচারপতি হিসেবে যোগদানের আমন্ত্রণ পান। তাঁর ভিন্নমতের রায় যদিও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মিত্রশক্তির কাছে পছন্দসই ছিল না, তথাপি এ ভূমিকাই তাঁকে বিজিত ও পরাধীন এশিয়া মহাদেশের দেশগুলোর কাছে বীরের জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছিল।
 
১৯৫২ সালে রাধাবিনোদ পাল জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক আইন কমিশনের সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৫৪ সালে কমিশনের দ্বিতীয় ভাইস চেয়ারম্যান এবং ১৯৫৮ সালে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৬২ সালে পুনরায় তিনি কমিশনের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৫৭ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ তাঁকে হেগের আন্তর্জাতিক আদালতের বিচারক নির্বাচিত করেন। ১৯৫৯ সালে ভারত সরকার তাঁকে ‘পদ্মভূষণ’ উপাধিতে ভূষিত করেন এবং তাঁকে Jurisprudence-এর জাতীয় অধ্যাপক নিয়োগ করেন। একই বছর তিনি আমেরিকান সোসাইটি অব ইন্টারন্যাশনাল ল’য়ের সদস্য নির্বাচিত হন।
 
ডঃ রাধাবিনোদ পাল রচিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থাবলির মধ্যে রয়েছে, The Hindu Philosophy of Law in the Vedic Age; Law of Limitation; The Law of Income Tax; Law of Primogeniture (With special emphasis on India); Crimes in International Relations ‰es The History of Hindu Law in the Vedic Age.
 
বিচারপতি রাধাবিনোদ পাল টোকিওর যুদ্ধাপরাধ বিচারের পর কয়েকবার জাপান সফর করেন। ১৯৫২ সালের অক্টোবর মাসে তিনি জাপানের স্বনামধন্য মানবতাবাদী ইয়াসাবুরো শিমোনাকার আমন্ত্রণে জাপান গমন করেন এবং সে দেশের বিভিন্ন সমাবেশে শান্তির উপর বক্তৃতা প্রদান করেন। ১৯৫২ সালের নভেম্বর মাসে বিশ্ব ফেডারেশন ও ন্যায়বিচার বিষয়ক এশীয় সম্মেলনে তাঁকে সম্মেলনের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। সম্মেলন শেষে হিরোশিমা (শান্তি) ঘোষণা গৃহীত হয়। জাপানের নিহন বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সম্মানসূচক LL.D উপাধিতে ভূষিত করে। জাপানের সম্রাট তাঁকে First Order of the Secret Treasure উপাধিতে ভূষিত করেন। টোকিও এবং কিয়োটো শহরের মেট্রোপলিস গভর্নরগণ তাঁকে এই দুই নগরীর  Freedom of the City of Tokyo and Kyoto প্রদান করে সম্মানিত করেন। এ সময়ে (১৯৫২-১৯৬৬) বিচারপতি রাধাবিনোদ জাপানি মন্ত্রিসভায় এবং টোকিও ও ওয়াসেদা বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা দেন। বিচারপতি রাধাবিনোদ পাল ১৯৬৭ সালের ১০ জানুয়ারি কোলকাতায় তাঁর বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন।  [সিরাজুল ইসলাম]
 
 
[[en:Pal, Justice Radhabinod]]

০৫:০৪, ৬ আগস্ট ২০২১ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

চিরাচরিত দেশী লাঙলের বিভিন্ন অংশ

লাঙল১ (Plough) ভূমি চাষে ব্যবহার্য অন্যতম দেশীয় সরঞ্জাম। বহুকাল আগে থেকেই লাঙল সনাতনী কৃষি উৎপাদনের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসেবে পরিগণিত হয়ে আসছে। সাধারণত দুটি শক্ত-সমর্থ গরু দ্বারা এটিকে টানা হয়, মাঝে মাঝে অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে মানুষও এটিকে টেনে থাকে। এখনও বিদ্যমান পোড়ামাটির প্লেটে সপ্তম শতাব্দীর প্রথমদিকে বাংলায় লাঙল ব্যবহারের নিদর্শন রয়েছে। কিন্তু নিশ্চিতভাবে এর ব্যবহার অনেক দিনের বলা যায়, লোহার ফলাসহ আধুনিক লাঙলের ব্যবহার লৌহ যুগের ঘটনা। লাঙলে লোহার ফলা ব্যবহারের পূর্বে লাঙল ছিল সম্পূর্ণ কাঠের তৈরি এবং ব্যবহারের দিক থেকে তেমন কার্যকর ছিল না।

লাঙলে কয়েকটি অংশ রয়েছে যেমন: হাতের মুঠো, হাতল, প্রধান দÐ, ফলা, কীলক ইত্যাদি। লাঙল সামনের দিকে টেনে এর সরু ফলা মাটির কয়েক সেমি নিচে ভেদ করানো হয় এবং এর সাহায্যে মাটির উপরিভাগ ভেঙে ফেলা হয়। ভাঙার সময় মাটি ফলার উভয় দিকেই নিক্ষিপ্ত হয়। মাটির প্রকারের ওপর ভিত্তি করে মাটিকে ফসল বোনার উপযুক্ত করার জন্য প্রয়োজনে কয়েকবার লাঙল দ্বারা চষা হয়। প্রয়োজনীয় মেরামতসহ একটি লাঙল ৪-৫ বছর টিকে থাকে। গুণাগুণের ভিত্তিতে বাংলাদেশের মাটিকে ১৮ ভাগে বিভক্ত করা যায়। প্রতিটি লাঙল মাটির ধরনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। লাঙলের ধরন শুধু মাটির ভৌত গুণের দ্বারাই প্রভাবিত হয় নি, স্থানীয় ঐতিহ্যের দ্বারাও প্রভাবিত হয়েছে।

বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবহুত লাঙল

গবাদি পশুর উচ্চ রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়ের জন্য কলের লাঙলের মাধ্যমে চাষাবাদের তুলনায় লাঙল দ্বারা চাষাবাদ বর্তমানে ব্যয়বহুল। সে কারণে লাঙলকে এখন সেকেলে একটি সরঞ্জাম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সাধারণ লাঙলের পরিবর্তে কলের লাঙলের ব্যবহার এখন খুব দ্রæত বৃদ্ধি পাচ্ছে। [মোঃ শহীদুল ইসলাম] লাঙলস্তর (Ploughpan) চাষকৃত স্তরের নিচে অবস্থিত গাঢ় ও শক্ত মাটির একটি স্তর। বাংলাদেশের অধিকাংশ মৃত্তিকায় আর্দ্র বা সিক্ত অবস্থায় জমি লাঙল দিয়ে চাষ দেওয়া হলে লাঙলের তলার চাপে এ শক্ত স্তরের সৃষ্টি হয়। বছরের পর বছর দেশী লাঙল ব্যবহার করে রোপা ধান চাষ করার ফলে প্রায় ৩-৫ সেমি শক্ত লাঙলস্তর বাংলাদেশে চাষকৃত প্রায় সকল মৃত্তিকায় কিছু পরিমাণ তৈরি হতে দেখা যায়। লাঙলস্তর চাষাবাদে দুটি প্রধান সমস্যার সৃষ্টি করে। প্রথমত, শক্ত লাঙলস্তর মূলের বিস্তার এবং বাড়ন্ত ফসল কর্তৃক মাটির নিæস্তরের পুষ্টি উপাদান গ্রহণে বাঁধা সৃষ্টি করে এবং দ্বিতীয়ত, লাঙলস্তর মাটির নিæস্তরে পানির চলাচলে বাঁধা দেয়। সেচ দেওয়া হলে বা ভারি বৃষ্টিপাত হলে লাঙলস্তরের জন্য মৃত্তিকার উপরের স্তর পানিতে সম্পৃক্ত হয়ে পড়তে পারে এবং এতে স্পর্শকাতর শুষ্কভূমির ফসলসমূহ ক্ষতির সম্মুখীন বা একেবারে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তিস্তা, গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, মেঘনা ও বরেন্দ্র অঞ্চলসমূহে প্রায়ই লাঙলস্তর গঠিত হতে দেখা যায়। [সুলতানা রাজিয়া]