পাল, বিচারপতি রাধাবিনোদ ও উল্টোঠুঁটি: পাতাগুলির মধ্যে পার্থক্য

(পাতাগুলির মধ্যে পার্থক্য)
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
[[Image:PalJusticeRadhabinod.jpg|thumb|400px|right|বিচারপতি রাধাবিনোদ পাল]]
'''উল্টোঠুঁটি''' (Pied AvocetRecurvirostridae''' '''পরিবারের মাঝারি আকারের (৪৬ সে.মি.) কাদাচর (wader) পরিযায়ী পাখি। দেখতে সাদাকালো এবং সরু, কালো লম্বাঠোঁট উপরের দিকে বাঁকানো; স্ত্রী পাখির ঠোঁট সামান্য ছোট হলেও পুরুষ পাখির চেয়ে বেশি বাঁকানো হয়। সাদাকালো হলেও দেহে বরফ-সাদা রঙের প্রাধান্য বেশি, তবে মাথার উপর অংশ, এবং ডানায় তিনটি চওড়া কালো রেখা আছে যা উড়ন্ত পাখির ডানার গোড়ায়, মাঝবরাবর এবং আগায় দেখা যায়। তবে নিচ থেকে উড়ন্ত পাখির ডানার আগা ছাড়া সম্পূর্ণ পাখিকে সাদা বলে মনে হয়। কমবয়সী পাখির কালো অংশগুলো বাদামি হয় এবং সাদা অংশগুলোর উপর কখনও কখনও ধুসর ছোপ দেখা যায়।
'''পাল, বিচারপতি রাধাবিনোদ''' (১৮৮৬-১৯৬৭বিচারপতি, শিক্ষাবিদ। তিনি ছিলেন দূরপ্রাচ্য বিষয়ক আন্তর্জাতিক সামরিক ট্রাইব্যুনালের বিচারক (১৯৪৬-১৯৪৮), কোলকাতা হাইকোর্টের বিচারক (১৯৪১-৪৩), কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (১৯৪৪-৪৬), আন্তর্জাতিক ল’ কমিশনের চেয়ারম্যান (১৯৫৮-৬২), হেগে অবস্থিত আন্তর্জাতিক আদালতের বিচারক (১৯৫৭)।


দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ শেষে জাপানের আত্মসমর্পণের পর মিত্রশক্তি তাদের বিবেচনায় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের যুদ্ধে জাপানের সম্পৃক্ততা এবং বিশ শতকের ত্রিশ এবং চল্লিশের দশকের গোড়ার দিকে জাপানে  সমরবাদের উত্থানের জন্য যেসব জাপানী নেতা জেনারেল দায়ী ছিলেন তাদের বিচারের আয়োজন করে। মিত্রশক্তির সর্বাধিনায়ক ডগলাস ম্যাক আর্থার পটস-ডাম ঘোষণা দ্বারা অর্পিত ক্ষমতাবলে দূরপ্রাচ্য বিষয়ক আন্তর্জাতিক সামরিক ট্রাইব্যুনাল গঠন করেন। পরবর্তী সময়ে এই ট্রাইব্যুনালে জাপানের প্রধান প্রধান যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয় (১৯৪৬-১৯৪৮) এবং তাতে জাপানের আটজন শীর্ষস্থানীয় নেতার মৃত্যুদন্ড এবং আরো সতেরো জনকে কারাদন্ড দেয়া হয়। ট্রাইব্যুনাল গঠনে সর্বমোট ১১ জন বিচারককে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। ট্রাইব্যুনালের অধিকাংশ সদস্য যুদ্ধাপরাধের দায়ে জাপানী নেতাদের দোষী সাব্যস্ত করেন এবং আন্তর্জাতিক আইনে তাদের সাজা দেন। কিন্তু এ ট্রাইব্যুনালের ভারতীয় বিচারপতি রাধাবিনোদ পাল ট্রাইব্যুনালের অধিকাংশের রায়ের সাথে একমত হতে পারেন নি। তিনি ভিন্ন মত পোষণ করে একটি রায় প্রদান করেন এবং অধিকাংশ বিচারকের রায়ের সঙ্গে একমত পোষণ করতে অস্বীকৃতি জানান। তাঁর দীর্ঘ চারশ’ পৃষ্ঠার রায়ে রাধাবিনোদ পাল দেখিয়েছেন যে, বিবাদী পক্ষের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলো আইনের চোখে টিকে না। তিনি আরো মন্তব্য করেন যে, সব সাক্ষ্য প্রমাণাদি খুবই দুর্বল এবং তাতে বিজয়ীদের দৃষ্টিভঙ্গী খেয়ালখুশির প্রতিফলন ঘটেছে।
[[Image:PiedAvocet.jpg|thumb|400px|right|উল্টোঠুঁটি]]
পা নীলাভ ও বেশ লম্বাটে যা দিয়ে কাদায় হাটতে সুবিধা হয়। শীতকালে বাংলাদেশের বড় বড় নদীর তীর ও উপকূলীয় অঞ্চলে মাঝে মাঝে এদের দেখা যায়। ভাটার সময় নদীর মোহনা, প্লাবনভূমি ও চরাঞ্চলের অগভীর পানিতে চিংড়ি, ঝিনুক ও নানা পোঁকামাকড় খুঁজে বেড়ায় এবং জোয়ারের সময় নদীর পাড় কিংবা উপকূলের কর্দমাক্ত স্থানে বিশ্রাম নেয়। অগায়ক পাখি হলেও উচ্চস্বরে ক্লুইথ (Klooit) করে ডাক দেয়। তবে উড়াল দেওয়ার সময় অনবরত কুইট কুইট কুইট (Kweet...) স্বরে ডাকতে থাকে। এরা ইউরোপের উষ্ণাঞ্চল (temperate)  এবং পশ্চিম মধ্যএশিয়ায় প্রজনন করে। শীতে আফ্রিকা এবং দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে সরে পড়ে তবে কিছু পাখি ইউরোপের অপেক্ষাকৃত উষ্ণাঞ্চলে থেকে যায়। সাধারণত ছোট ছোট দলে ঘুরে বেড়ালেও শুধু প্রজনন ঋতুতে জোড়া বাঁধে এবং অনেক পাখি কাছাকাছি বাসা বানায়। এপ্রিল-আগস্ট মাসে প্রজনন করে, এসময় অগভীর জলাশয়ের ধারে, বালিতে অথবা হালকা তৃণাচ্ছাদিত জায়গায় খড়কুটো জড়ো করে বাসা বানায়। স্ত্রী পাখি ২-৩টি হালকা বাদামি রঙের ডিম পাড়ে; ২৩-২৫ দিনের মেধ্য ডিম ফুটে এভং ৫-৬ সপ্তাহে ছানারা বাসা ছেড়ে যায়। যদিও বাসা ছাড়ার পর আরও কিছুদিন বাবা-মার সান্নিধ্যে থাকে। বাসা বানানো, ডিমে তা দেওয়া এবং বাচ্ছা লালন-পালন পুরুষ স্ত্রী উভয়েই করে। গ্রীষ্মকালে প্রথমে অপ্রাপ্ত বয়স্করা দল বাঁধে পরে প্রাপ্ত বয়স্করা বাচ্ছাসহকারে এসে যোগ দেয়। দু’বছর বয়স হলে প্রজনন শুরু হয়; সাধারণত যেখানে বেড়ে উঠে সেখান থেকে ভিন্ন কোনো স্থানে প্রথম প্রজনন করে। এ পাখি Royal Society for Protection of Birds (RSPB) নামক পৃথিবীর বিখ্যাত পাখি সংরক্ষণ সংস্থার লোগো হিসেবে ব্যবহূত হয়।  [সুপ্রিয় চাকমা]


দূরপ্রাচ্য বিষয়ক আন্তর্জাতিক সামরিক ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি রাধাবিনোদ প্রদত্ত ভিন্নমত পোষণকারী রায়টি একদিকে আন্তর্জাতিক আইনের ইতিহাসে এবং অন্যদিকে যুদ্ধ ও শান্তির ইতিহাসে অসাধারণ গুরুত্ব বহন করে। এতে যুদ্ধ ও শান্তির দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর ইতিহাসের আইনগত ভিত্তির দালিলিক ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। ডঃ রাধাবিনোদের ভিন্নমত পোষণকারী রায়ের মূল প্রশ্ন ছিল, যারা জাপানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে তাদের নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী ট্রাইব্যুনাল গঠন করার এবং নিজেদের শর্তানুযায়ী পরাজিত শত্রুদের বিচার করার নৈতিক ও আইনগত এখতিয়ার আছে কিনা। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠনে জাপানের কোনো ভূমিকা ছিল না। বিচারপতি রাধাবিনোদ পাল বিজয়ী পক্ষের একতরফাভাবে প্রণীত বিচারের দিক নির্দেশনা ও বিধিনিয়ম দ্বারা চালিত হতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন।  নেদারল্যান্ডের একজন এবং ফিলিপাইনের একজন বিচারপতি রাধাবিনোদকে নৈতিক সমর্থন যুগিয়েছিলেন যদিও শেষ পর্যন্ত তারা সংখ্যাগরিষ্ঠের প্রদত্ত রায়কে মেনে নিয়েছেন।
[[en:Pied Avocet]]
 
ট্রাইব্যুনালের অধিকাংশ বিচারক রাধাবিনোদ পালের ভিন্ন মতের রায়কে এশিয়ায় ইউরোপীয় আধিপত্যের বিরোধী একজন ভারতীয় জাতীয়তাবাদীর পাশ্চাত্য বিরোধী মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ বলে আখ্যায়িত করেন। রাধাবিনোদ পালের আরও বক্তব্য ছিল এই যে, প্রথম মহাযুদ্ধের পর থেকে বিকাশ লাভ করা আন্তর্জাতিক আইনের বেশিরভাগই টোকিও ট্রাইব্যুনাল আমলে নেয় নি।
 
রাধাবিনোদ পাল ১৮৮৬ সালের ২৭ জানুয়ারি বাংলাদেশে কুষ্টিয়া জেলার সলিমপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯০৩ সালে প্রবেশিকা এবং ১৯০৫ সালে রাজশাহী কলেজ হতে কৃতিত্বের সাথে এফএ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। রাধাবিনোদ কোলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ১৯০৭ সালে গণিতশাস্ত্রে বিএ (অনার্স) এবং ১৯০৮ সালে এমএ পাস করেন। ১৯১১ সালে বিএল ডিগ্রি লাভের পূর্ব পর্যন্ত তিনি এলাহাবাদ অ্যাকাউন্ট্যান্ট জেনারেলের অফিসে কিছুকাল কেরানীর চাকরি করেন। পরবর্তী সময়ে রাধাবিনোদ পাল ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজে গণিতের প্রভাষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি ময়মনসিংহ কোর্টে আইন ব্যবসায়ে নিয়োজিত ছিলেন। ময়মনসিংহে অবস্থানকালে ১৯২০ সালে তিনি কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলএম ডিগ্রি লাভ করে আইনের ক্ষেত্রে তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রসার ঘটান। তিনি এলএলএম পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করেন। এরপর তিনি কোলকাতায় গিয়ে হাইকোর্টে আইন ব্যবসায়ে নিয়োজিত হন।
 
১৯২৪ সালে রাধাবিনোদ পাল কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। তাঁর অভিসন্দর্ভের বিষয় ছিল Hindu Philosophy of Law in Vedic and Post-Vedic Times Prior to the Institute of Manu. ১৯২৩ থেকে ১৯৩৬ সাল পর্যন্ত সময়কালে তিনি ইউনিভার্সিটি ল কলেজে আইনের অধ্যাপক ছিলেন। আইন বিশারদ হিসেবে তাঁর সুখ্যাতি চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে। তিনি তিনবার মর্যাদাপূর্ণ Tagore Law Lecture প্রদান করেন, প্রথমবার ১৯২৫ সালে, দ্বিতীয়বার ১৯৩০ সালে এবং তৃতীয়বার ১৯৩৮ সালে। তাঁর বক্তৃতার বিষয়বস্ত্ত ছিল Law of Primogeniture with Special Reference to India, Ancient and Modern; History of Hindu Law in the Vedic and Post-Vedic Times Down to the Institutes of Manu;  Crimes in International Realtions.
 
রাধাবিনোদ পাল ইন্টারন্যাশনাল একাডেমী অব কমপ্যারাটিভ ল’-এর যুগ্মসভাপতি এবং ১৯৩৭ সালে  ইন্টারন্যাশনাল ল’ অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য হন। আইন বিশারদ হিসেবে তিনি এতোটাই খ্যাতিমান হন যে, ১৯৪১ সালে তাঁকে ভারত সরকারের আইন উপদেষ্টা নিয়োগ করা হয়। এর অল্প কিছুদিন পর তিনি কোলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি নিযুক্ত হন এবং ১৯৪৩ সালের জুলাই পর্যন্ত এ পদে অধিষ্ঠিত থাকেন। ১৯৪৪ সালের মার্চ মাসে রাধাবিনোদ পাল কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিযুক্ত হন। ১৯৪৬ সালে তিনি কর্মজীবন থেকে অবসর গ্রহণ করেন সলিমপুরের গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসেন।
 
গ্রামের বাড়ি সলিমপুরে অবস্থানকালে একটি ঘটনা তাঁকে তাঁর জীবনের এক অচিন্ত্যনীয় মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করে। ১৯৪৬ সালের এপ্রিল মাসে রাধাবিনোদ পাল দূরপ্রাচ্য বিষয়ক আন্তর্জাতিক সামরিক ট্রাইব্যুনালের একজন বিচারপতি হিসেবে যোগদানের আমন্ত্রণ পান। তাঁর ভিন্নমতের রায় যদিও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মিত্রশক্তির কাছে পছন্দসই ছিল না, তথাপি এ ভূমিকাই তাঁকে বিজিত ও পরাধীন এশিয়া মহাদেশের দেশগুলোর কাছে বীরের জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছিল।
 
১৯৫২ সালে রাধাবিনোদ পাল জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক আইন কমিশনের সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৫৪ সালে কমিশনের দ্বিতীয় ভাইস চেয়ারম্যান এবং ১৯৫৮ সালে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৬২ সালে পুনরায় তিনি কমিশনের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৫৭ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ তাঁকে হেগের আন্তর্জাতিক আদালতের বিচারক নির্বাচিত করেন। ১৯৫৯ সালে ভারত সরকার তাঁকে ‘পদ্মভূষণ’ উপাধিতে ভূষিত করেন এবং তাঁকে Jurisprudence-এর জাতীয় অধ্যাপক নিয়োগ করেন। একই বছর তিনি আমেরিকান সোসাইটি অব ইন্টারন্যাশনাল ল’য়ের সদস্য নির্বাচিত হন।
 
ডঃ রাধাবিনোদ পাল রচিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থাবলির মধ্যে রয়েছে, The Hindu Philosophy of Law in the Vedic Age; Law of Limitation; The Law of Income Tax; Law of Primogeniture (With special emphasis on India); Crimes in International Relations ‰es The History of Hindu Law in the Vedic Age.
 
বিচারপতি রাধাবিনোদ পাল টোকিওর যুদ্ধাপরাধ বিচারের পর কয়েকবার জাপান সফর করেন। ১৯৫২ সালের অক্টোবর মাসে তিনি জাপানের স্বনামধন্য মানবতাবাদী ইয়াসাবুরো শিমোনাকার আমন্ত্রণে জাপান গমন করেন এবং সে দেশের বিভিন্ন সমাবেশে শান্তির উপর বক্তৃতা প্রদান করেন। ১৯৫২ সালের নভেম্বর মাসে বিশ্ব ফেডারেশন ও ন্যায়বিচার বিষয়ক এশীয় সম্মেলনে তাঁকে সম্মেলনের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। সম্মেলন শেষে হিরোশিমা (শান্তি) ঘোষণা গৃহীত হয়। জাপানের নিহন বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সম্মানসূচক LL.D উপাধিতে ভূষিত করে। জাপানের সম্রাট তাঁকে First Order of the Secret Treasure উপাধিতে ভূষিত করেন। টোকিও এবং কিয়োটো শহরের মেট্রোপলিস গভর্নরগণ তাঁকে এই দুই নগরীর  Freedom of the City of Tokyo and Kyoto প্রদান করে সম্মানিত করেন। এ সময়ে (১৯৫২-১৯৬৬) বিচারপতি রাধাবিনোদ জাপানি মন্ত্রিসভায় এবং টোকিও ও ওয়াসেদা বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা দেন। বিচারপতি রাধাবিনোদ পাল ১৯৬৭ সালের ১০ জানুয়ারি কোলকাতায় তাঁর বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন।  [সিরাজুল ইসলাম]
 
 
[[en:Pal, Justice Radhabinod]]

০৪:৪২, ৬ আগস্ট ২০২১ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

উল্টোঠুঁটি (Pied Avocet)  Recurvirostridae পরিবারের মাঝারি আকারের (৪৬ সে.মি.) কাদাচর (wader) পরিযায়ী পাখি। দেখতে সাদাকালো এবং সরু, কালো লম্বাঠোঁট উপরের দিকে বাঁকানো; স্ত্রী পাখির ঠোঁট সামান্য ছোট হলেও পুরুষ পাখির চেয়ে বেশি বাঁকানো হয়। সাদাকালো হলেও দেহে বরফ-সাদা রঙের প্রাধান্য বেশি, তবে মাথার উপর অংশ, এবং ডানায় তিনটি চওড়া কালো রেখা আছে যা উড়ন্ত পাখির ডানার গোড়ায়, মাঝবরাবর এবং আগায় দেখা যায়। তবে নিচ থেকে উড়ন্ত পাখির ডানার আগা ছাড়া সম্পূর্ণ পাখিকে সাদা বলে মনে হয়। কমবয়সী পাখির কালো অংশগুলো বাদামি হয় এবং সাদা অংশগুলোর উপর কখনও কখনও ধুসর ছোপ দেখা যায়।

উল্টোঠুঁটি

পা নীলাভ ও বেশ লম্বাটে যা দিয়ে কাদায় হাটতে সুবিধা হয়। শীতকালে বাংলাদেশের বড় বড় নদীর তীর ও উপকূলীয় অঞ্চলে মাঝে মাঝে এদের দেখা যায়। ভাটার সময় নদীর মোহনা, প্লাবনভূমি ও চরাঞ্চলের অগভীর পানিতে চিংড়ি, ঝিনুক ও নানা পোঁকামাকড় খুঁজে বেড়ায় এবং জোয়ারের সময় নদীর পাড় কিংবা উপকূলের কর্দমাক্ত স্থানে বিশ্রাম নেয়। অগায়ক পাখি হলেও উচ্চস্বরে ক্লুইথ (Klooit) করে ডাক দেয়। তবে উড়াল দেওয়ার সময় অনবরত কুইট কুইট কুইট (Kweet...) স্বরে ডাকতে থাকে। এরা ইউরোপের উষ্ণাঞ্চল (temperate)  এবং পশ্চিম ও মধ্যএশিয়ায় প্রজনন করে। শীতে আফ্রিকা এবং দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে সরে পড়ে তবে কিছু পাখি ইউরোপের অপেক্ষাকৃত উষ্ণাঞ্চলে থেকে যায়। সাধারণত ছোট ছোট দলে ঘুরে বেড়ালেও শুধু প্রজনন ঋতুতে জোড়া বাঁধে এবং অনেক পাখি কাছাকাছি বাসা বানায়। এপ্রিল-আগস্ট মাসে প্রজনন করে, এসময় অগভীর জলাশয়ের ধারে, বালিতে অথবা হালকা তৃণাচ্ছাদিত জায়গায় খড়কুটো জড়ো করে বাসা বানায়। স্ত্রী পাখি ২-৩টি হালকা বাদামি রঙের ডিম পাড়ে; ২৩-২৫ দিনের মেধ্য ডিম ফুটে এভং ৫-৬ সপ্তাহে ছানারা বাসা ছেড়ে যায়। যদিও বাসা ছাড়ার পর আরও কিছুদিন বাবা-মার সান্নিধ্যে থাকে। বাসা বানানো, ডিমে তা দেওয়া এবং বাচ্ছা লালন-পালন পুরুষ ও স্ত্রী উভয়েই করে। গ্রীষ্মকালে প্রথমে অপ্রাপ্ত বয়স্করা দল বাঁধে পরে প্রাপ্ত বয়স্করা বাচ্ছাসহকারে এসে যোগ দেয়। দু’বছর বয়স হলে প্রজনন শুরু হয়; সাধারণত যেখানে বেড়ে উঠে সেখান থেকে ভিন্ন কোনো স্থানে প্রথম প্রজনন করে। এ পাখি Royal Society for Protection of Birds (RSPB) নামক পৃথিবীর বিখ্যাত পাখি সংরক্ষণ সংস্থার লোগো হিসেবে ব্যবহূত হয়।  [সুপ্রিয় চাকমা]