লট্টন মসজিদ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
২ নং লাইন: ২ নং লাইন:
'''লট্টন মসজিদ'''  পশ্চিমবঙ্গের মালদাহ জেলায় অবস্থিত একটি সুলতানী মসজিদ। এর অবস্থান [[তাঁতীপাড়া মসজিদ|তাঁতীপাড়া মসজিদ]] এবং পাঁচখিলান বিশিষ্ট সেতুর মধ্যবর্তী স্থানে। এটি প্রাচীন সংরক্ষিত নগরী গৌড়ের স্থাপত্য নিদর্শনের অন্যতম। মসজিদটি পনেরো শতকের শেষে অথবা ষোল শতকে নির্মিত বলে ধারণা করা হয়। সম্ভবত এটি হোসেনশাহী আমলের একটি ইমারত।
'''লট্টন মসজিদ'''  পশ্চিমবঙ্গের মালদাহ জেলায় অবস্থিত একটি সুলতানী মসজিদ। এর অবস্থান [[তাঁতীপাড়া মসজিদ|তাঁতীপাড়া মসজিদ]] এবং পাঁচখিলান বিশিষ্ট সেতুর মধ্যবর্তী স্থানে। এটি প্রাচীন সংরক্ষিত নগরী গৌড়ের স্থাপত্য নিদর্শনের অন্যতম। মসজিদটি পনেরো শতকের শেষে অথবা ষোল শতকে নির্মিত বলে ধারণা করা হয়। সম্ভবত এটি হোসেনশাহী আমলের একটি ইমারত।


[[Image:LattanMosque.jpg|thumb|right|400px|লট্টন মসজিদ, পশ্চিমবঙ্গ]]
সম্পূর্ণরূপে ইট দ্বারা নির্মিত এ ইমারতের অভ্যন্তরে প্রতিপার্শ্বে ১০.৩৬ মিটার আয়তনের একটি বর্গাকার নামাযঘর এবং ১০.৩৬ মিটার × ৩.৩৫ মিটার আয়তনের একটি বারান্দা রয়েছে, যা মসজিদটিকে পূর্ব-পশ্চিমে ২১.৯৫ মিটার এবং উত্তর-দক্ষিণে ১৫.৫৪ মিটার আয়তনের আয়তাকার রূপ দিয়েছে। নামাযঘরের কিবলা দেয়াল ব্যতীত প্রতি পার্শ্বেই ৩টি খিলান দ্বারা নির্মিত প্রবেশপথ রয়েছে। মসজিদের কিবলা দেয়ালে তিনটি মিহরাব কুলুঙ্গি রয়েছে, যা পূর্বদিকের ৩টি প্রবেশপথের মুখোমুখি করে নির্মিত হয়েছে। কেন্দ্রীয় মিহরাব ও কেন্দ্রীয় প্রবেশপথ সবদিক দিয়েই পার্শ্ববর্তীগুলি থেকে বড়। কেন্দ্রীয় মিহরাবটি বাইরের দিকে একটি আয়তাকার অভিক্ষিপ্ত ফ্রেমের মধ্যে স্থাপিত, যা শিরতোলা কলাম দ্বারা আবদ্ধ।
সম্পূর্ণরূপে ইট দ্বারা নির্মিত এ ইমারতের অভ্যন্তরে প্রতিপার্শ্বে ১০.৩৬ মিটার আয়তনের একটি বর্গাকার নামাযঘর এবং ১০.৩৬ মিটার × ৩.৩৫ মিটার আয়তনের একটি বারান্দা রয়েছে, যা মসজিদটিকে পূর্ব-পশ্চিমে ২১.৯৫ মিটার এবং উত্তর-দক্ষিণে ১৫.৫৪ মিটার আয়তনের আয়তাকার রূপ দিয়েছে। নামাযঘরের কিবলা দেয়াল ব্যতীত প্রতি পার্শ্বেই ৩টি খিলান দ্বারা নির্মিত প্রবেশপথ রয়েছে। মসজিদের কিবলা দেয়ালে তিনটি মিহরাব কুলুঙ্গি রয়েছে, যা পূর্বদিকের ৩টি প্রবেশপথের মুখোমুখি করে নির্মিত হয়েছে। কেন্দ্রীয় মিহরাব ও কেন্দ্রীয় প্রবেশপথ সবদিক দিয়েই পার্শ্ববর্তীগুলি থেকে বড়। কেন্দ্রীয় মিহরাবটি বাইরের দিকে একটি আয়তাকার অভিক্ষিপ্ত ফ্রেমের মধ্যে স্থাপিত, যা শিরতোলা কলাম দ্বারা আবদ্ধ।


সংলগ্ন বারান্দায় প্রবেশ করতে পূর্বদিকে রয়েছে তিনটি খিলানযুক্ত প্রবেশপথ, যদিও উত্তর-দক্ষিণেও একটি করে প্রবেশপথ রয়েছে। বারান্দার কেন্দ্রীয় প্রবেশপথ পার্শ্বস্থ প্রবেশপথগুলি থেকে বড় এবং প্রার্থনা কক্ষের কেন্দ্রীয় প্রবেশপথের একই অক্ষে নির্মিত। চারকোণে চারটি গোলাকার শিরতোলা বুরুজ রয়েছে। এগুলি মল্ডেড ব্যান্ড নকশা দ্বারা ভাগ করা এবং ছাদপর্যন্ত উঠে গেছে। ইমারতটির কার্নিস ও ব্যাটেলমেন্ট সুন্দরভাবে বাঁকানো।
সংলগ্ন বারান্দায় প্রবেশ করতে পূর্বদিকে রয়েছে তিনটি খিলানযুক্ত প্রবেশপথ, যদিও উত্তর-দক্ষিণেও একটি করে প্রবেশপথ রয়েছে। বারান্দার কেন্দ্রীয় প্রবেশপথ পার্শ্বস্থ প্রবেশপথগুলি থেকে বড় এবং প্রার্থনা কক্ষের কেন্দ্রীয় প্রবেশপথের একই অক্ষে নির্মিত। চারকোণে চারটি গোলাকার শিরতোলা বুরুজ রয়েছে। এগুলি মল্ডেড ব্যান্ড নকশা দ্বারা ভাগ করা এবং ছাদপর্যন্ত উঠে গেছে। ইমারতটির কার্নিস ও ব্যাটেলমেন্ট সুন্দরভাবে বাঁকানো।


বর্গাকার নামাযঘর একটি গম্বুজ দ্বারা আচ্ছাদিত। চারটি প্রধান দিকের প্রতিদেয়ালে দুটি করে সংযুক্ত স্তম্ভ দ্বারা উত্থিত বদ্ধ খিলানের উপরের কোণে তৈরি অর্ধগম্বুজাকৃতি স্কুইঞ্চের ভিত্তির উপর গম্বুজটি প্রতিষ্ঠিত। স্কুইঞ্চ ও বদ্ধ খিলানের মধ্যবর্তী অংশে ইটনির্মিত পেন্ডেন্টিভ রয়েছে।  
বর্গাকার নামাযঘর একটি গম্বুজ দ্বারা আচ্ছাদিত। চারটি প্রধান দিকের প্রতিদেয়ালে দুটি করে সংযুক্ত স্তম্ভ দ্বারা উত্থিত বদ্ধ খিলানের উপরের কোণে তৈরি অর্ধগম্বুজাকৃতি স্কুইঞ্চের ভিত্তির উপর গম্বুজটি প্রতিষ্ঠিত। স্কুইঞ্চ ও বদ্ধ খিলানের মধ্যবর্তী অংশে ইটনির্মিত পেন্ডেন্টিভ রয়েছে। সংলগ্ন বারান্দা তিনটি ছোট ভল্ট দ্বারা আচ্ছাদিত, যার কেন্দ্রীয়টি ‘চারচালা’ আকৃতির এবং পার্শ্বস্থ দুটি পেয়ালাকৃতির। ছোট পেন্ডেন্টিভ সহযোগে নির্মিত দুটি বৃহৎ ‘ট্রান্সভার্স’ বা আড়াআড়ি খিলান (যা বারান্দাকে তিনটি ভাগে ভাগ করেছে) ভল্টের ভার বহন করে আছে।
 
[[Image:LattanMosque.jpg|thumb|right|লট্টন মসজিদ, পশ্চিমবঙ্গ]]
 
সংলগ্ন বারান্দা তিনটি ছোট ভল্ট দ্বারা আচ্ছাদিত, যার কেন্দ্রীয়টি ‘চারচালা’ আকৃতির এবং পার্শ্বস্থ দুটি পেয়ালাকৃতির। ছোট পেন্ডেন্টিভ সহযোগে নির্মিত দুটি বৃহৎ ‘ট্রান্সভার্স’ বা আড়াআড়ি খিলান (যা বারান্দাকে তিনটি ভাগে ভাগ করেছে) ভল্টের ভার বহন করে আছে।


পূর্বদিকের সম্মুখভাগের তিনটি প্রবেশপথের অন্তর্বর্তী অংশ উল­ম্ব প্যানেল দ্বারা সজ্জিত। প্রতিটি প্যানেলে সুন্দর কুলুঙ্গি রয়েছে, যাতে অলঙ্কৃত স্তম্ভের উপর বহুখাঁজ বিশিষ্ট খিলানের প্রতিকৃতি রয়েছে। নামাযঘরের উপরে নির্মিত গম্বুজের ড্রামের বাইরের দিক বদ্ধ মেরলোনের একটি সারি দ্বারা সজ্জিত। গম্বুজের অভ্যন্তরভাগ আটটি রিব (ribs) দ্বারা নকশা করা। এগুলির মধ্যবর্তী স্থান ঝুলন্ত মোটিফ দ্বারা একের পর এক সুচারুরূপে নকশা করা এবং চূড়া প্রস্ফুটিত পদ্ম দ্বারা সুন্দরভাবে অলঙ্কৃত। মসজিদটির ভিতর ও বাইরে একসময় নানা রঙের চকচকে টালির বিভিন্ন নকশা দ্বারা শোভিত ছিল। অলঙ্করণের বেশিরভাগ অংশই ইতোমধ্যে ধ্বংস হয়ে গেছে, খুব সামান্য বিলুপ্ত-প্রায় অবস্থায় মিহরাবে অলঙ্করণ এখনও বিদ্যমান।  [এম.এ বারি]
পূর্বদিকের সম্মুখভাগের তিনটি প্রবেশপথের অন্তর্বর্তী অংশ উল­ম্ব প্যানেল দ্বারা সজ্জিত। প্রতিটি প্যানেলে সুন্দর কুলুঙ্গি রয়েছে, যাতে অলঙ্কৃত স্তম্ভের উপর বহুখাঁজ বিশিষ্ট খিলানের প্রতিকৃতি রয়েছে। নামাযঘরের উপরে নির্মিত গম্বুজের ড্রামের বাইরের দিক বদ্ধ মেরলোনের একটি সারি দ্বারা সজ্জিত। গম্বুজের অভ্যন্তরভাগ আটটি রিব (ribs) দ্বারা নকশা করা। এগুলির মধ্যবর্তী স্থান ঝুলন্ত মোটিফ দ্বারা একের পর এক সুচারুরূপে নকশা করা এবং চূড়া প্রস্ফুটিত পদ্ম দ্বারা সুন্দরভাবে অলঙ্কৃত। মসজিদটির ভিতর ও বাইরে একসময় নানা রঙের চকচকে টালির বিভিন্ন নকশা দ্বারা শোভিত ছিল। অলঙ্করণের বেশিরভাগ অংশই ইতোমধ্যে ধ্বংস হয়ে গেছে, খুব সামান্য বিলুপ্ত-প্রায় অবস্থায় মিহরাবে অলঙ্করণ এখনও বিদ্যমান।  [এম.এ বারি]

১০:০৩, ১০ মার্চ ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

লট্টন মসজিদ  পশ্চিমবঙ্গের মালদাহ জেলায় অবস্থিত একটি সুলতানী মসজিদ। এর অবস্থান তাঁতীপাড়া মসজিদ এবং পাঁচখিলান বিশিষ্ট সেতুর মধ্যবর্তী স্থানে। এটি প্রাচীন সংরক্ষিত নগরী গৌড়ের স্থাপত্য নিদর্শনের অন্যতম। মসজিদটি পনেরো শতকের শেষে অথবা ষোল শতকে নির্মিত বলে ধারণা করা হয়। সম্ভবত এটি হোসেনশাহী আমলের একটি ইমারত।

লট্টন মসজিদ, পশ্চিমবঙ্গ

সম্পূর্ণরূপে ইট দ্বারা নির্মিত এ ইমারতের অভ্যন্তরে প্রতিপার্শ্বে ১০.৩৬ মিটার আয়তনের একটি বর্গাকার নামাযঘর এবং ১০.৩৬ মিটার × ৩.৩৫ মিটার আয়তনের একটি বারান্দা রয়েছে, যা মসজিদটিকে পূর্ব-পশ্চিমে ২১.৯৫ মিটার এবং উত্তর-দক্ষিণে ১৫.৫৪ মিটার আয়তনের আয়তাকার রূপ দিয়েছে। নামাযঘরের কিবলা দেয়াল ব্যতীত প্রতি পার্শ্বেই ৩টি খিলান দ্বারা নির্মিত প্রবেশপথ রয়েছে। মসজিদের কিবলা দেয়ালে তিনটি মিহরাব কুলুঙ্গি রয়েছে, যা পূর্বদিকের ৩টি প্রবেশপথের মুখোমুখি করে নির্মিত হয়েছে। কেন্দ্রীয় মিহরাব ও কেন্দ্রীয় প্রবেশপথ সবদিক দিয়েই পার্শ্ববর্তীগুলি থেকে বড়। কেন্দ্রীয় মিহরাবটি বাইরের দিকে একটি আয়তাকার অভিক্ষিপ্ত ফ্রেমের মধ্যে স্থাপিত, যা শিরতোলা কলাম দ্বারা আবদ্ধ।

সংলগ্ন বারান্দায় প্রবেশ করতে পূর্বদিকে রয়েছে তিনটি খিলানযুক্ত প্রবেশপথ, যদিও উত্তর-দক্ষিণেও একটি করে প্রবেশপথ রয়েছে। বারান্দার কেন্দ্রীয় প্রবেশপথ পার্শ্বস্থ প্রবেশপথগুলি থেকে বড় এবং প্রার্থনা কক্ষের কেন্দ্রীয় প্রবেশপথের একই অক্ষে নির্মিত। চারকোণে চারটি গোলাকার শিরতোলা বুরুজ রয়েছে। এগুলি মল্ডেড ব্যান্ড নকশা দ্বারা ভাগ করা এবং ছাদপর্যন্ত উঠে গেছে। ইমারতটির কার্নিস ও ব্যাটেলমেন্ট সুন্দরভাবে বাঁকানো।

বর্গাকার নামাযঘর একটি গম্বুজ দ্বারা আচ্ছাদিত। চারটি প্রধান দিকের প্রতিদেয়ালে দুটি করে সংযুক্ত স্তম্ভ দ্বারা উত্থিত বদ্ধ খিলানের উপরের কোণে তৈরি অর্ধগম্বুজাকৃতি স্কুইঞ্চের ভিত্তির উপর গম্বুজটি প্রতিষ্ঠিত। স্কুইঞ্চ ও বদ্ধ খিলানের মধ্যবর্তী অংশে ইটনির্মিত পেন্ডেন্টিভ রয়েছে। সংলগ্ন বারান্দা তিনটি ছোট ভল্ট দ্বারা আচ্ছাদিত, যার কেন্দ্রীয়টি ‘চারচালা’ আকৃতির এবং পার্শ্বস্থ দুটি পেয়ালাকৃতির। ছোট পেন্ডেন্টিভ সহযোগে নির্মিত দুটি বৃহৎ ‘ট্রান্সভার্স’ বা আড়াআড়ি খিলান (যা বারান্দাকে তিনটি ভাগে ভাগ করেছে) ভল্টের ভার বহন করে আছে।

পূর্বদিকের সম্মুখভাগের তিনটি প্রবেশপথের অন্তর্বর্তী অংশ উল­ম্ব প্যানেল দ্বারা সজ্জিত। প্রতিটি প্যানেলে সুন্দর কুলুঙ্গি রয়েছে, যাতে অলঙ্কৃত স্তম্ভের উপর বহুখাঁজ বিশিষ্ট খিলানের প্রতিকৃতি রয়েছে। নামাযঘরের উপরে নির্মিত গম্বুজের ড্রামের বাইরের দিক বদ্ধ মেরলোনের একটি সারি দ্বারা সজ্জিত। গম্বুজের অভ্যন্তরভাগ আটটি রিব (ribs) দ্বারা নকশা করা। এগুলির মধ্যবর্তী স্থান ঝুলন্ত মোটিফ দ্বারা একের পর এক সুচারুরূপে নকশা করা এবং চূড়া প্রস্ফুটিত পদ্ম দ্বারা সুন্দরভাবে অলঙ্কৃত। মসজিদটির ভিতর ও বাইরে একসময় নানা রঙের চকচকে টালির বিভিন্ন নকশা দ্বারা শোভিত ছিল। অলঙ্করণের বেশিরভাগ অংশই ইতোমধ্যে ধ্বংস হয়ে গেছে, খুব সামান্য বিলুপ্ত-প্রায় অবস্থায় মিহরাবে অলঙ্করণ এখনও বিদ্যমান।  [এম.এ বারি]