রোগবিষয়ক রূপরেখা: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
'''রোগবিষয়ক রূপরেখা''' (Disease Profile)'''  '''একটি দেশ বা একটি ভৌগোলিক অঞ্চলে বিদ্যমান সুনির্দিষ্ট সাধারণ রোগের ব্যাপকতা। গ্রীষ্মমন্ডলীয় দেশের অনেক রোগ নাতিশীতোষ্ণ মন্ডলের দেশে সচরাচর দেখা যায় না। একইভাবে উন্নয়নশীল দেশগুলিতে ভৌগোলিক অবস্থান নির্বিশেষে এমন কিছু রোগ দেখা যায় যা জলবায়ু, স্বাস্থ্য বা পরিচ্ছন্নতা অপেক্ষা অপুষ্টির সঙ্গেই অধিকতর ঘনিষ্ঠ, যদিও আবহাওয়া ও অন্যান্য নিয়ামক রোগের তীব্রতা ও বিস্তারে যথেষ্ট ভূমিকা রাখে। এমনকি একই দেশে আর্থ-সামাজিক স্তর, পেশা বা বয়সভেদে এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টির অভাবে রোগের প্রকারভেদ ও প্রকোপ লক্ষণীয়ভাবে ভিন্ন হয়ে থাকে। দেহে খনিজের অভাব, যেমন খাদ্যে আয়োডিনের ঘাটতি ঘটলে গলগন্ড রোগ হতে পারে। অন্যদিকে ক্ষতিকর অতিরিক্ত খনিজ দ্রব্য, যেমন আর্সেনিক গ্রহণের ফলে আর্সেনিকজনিত (arsenicosis) বিষক্রিয়া ঘটে।
'''রোগবিষয়ক রূপরেখা''' (Disease Profile) একটি দেশ বা একটি ভৌগোলিক অঞ্চলে বিদ্যমান সুনির্দিষ্ট সাধারণ রোগের ব্যাপকতা। গ্রীষ্মমন্ডলীয় দেশের অনেক রোগ নাতিশীতোষ্ণ মন্ডলের দেশে সচরাচর দেখা যায় না। একইভাবে উন্নয়নশীল দেশগুলিতে ভৌগোলিক অবস্থান নির্বিশেষে এমন কিছু রোগ দেখা যায় যা জলবায়ু, স্বাস্থ্য বা পরিচ্ছন্নতা অপেক্ষা অপুষ্টির সঙ্গেই অধিকতর ঘনিষ্ঠ, যদিও আবহাওয়া ও অন্যান্য নিয়ামক রোগের তীব্রতা ও বিস্তারে যথেষ্ট ভূমিকা রাখে। এমনকি একই দেশে আর্থ-সামাজিক স্তর, পেশা বা বয়সভেদে এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টির অভাবে রোগের প্রকারভেদ ও প্রকোপ লক্ষণীয়ভাবে ভিন্ন হয়ে থাকে। দেহে খনিজের অভাব, যেমন খাদ্যে আয়োডিনের ঘাটতি ঘটলে গলগন্ড রোগ হতে পারে। অন্যদিকে ক্ষতিকর অতিরিক্ত খনিজ দ্রব্য, যেমন আর্সেনিক গ্রহণের ফলে আর্সেনিকজনিত (arsenicosis) বিষক্রিয়া ঘটে।


বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক ও ভৌগোলিক অবস্থার কয়েকটি অনন্য বৈশিষ্ট্য আছে। এখানে জনসংখ্যার ঘনত্ব পৃথিবীতে সর্বোচ্চ, মাথাপিছু আয় খুবই কম এবং মানুষ ও জমির অনুপাত অত্যধিক। অপুষ্টি, ভগ্নস্বাস্থ্য ও নিম্নপর্যায়ের পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা থেকে স্পষ্টতই প্রতীয়মান যে, অপুষ্টিজনিত বৈকল্য এবং  ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও পরজীবিঘটিত নানা সংক্রামক রোগের ভারবহনই যেন এদেশের জন্য স্বাভাবিক।
বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক ও ভৌগোলিক অবস্থার কয়েকটি অনন্য বৈশিষ্ট্য আছে। এখানে জনসংখ্যার ঘনত্ব পৃথিবীতে সর্বোচ্চ, মাথাপিছু আয় খুবই কম এবং মানুষ ও জমির অনুপাত অত্যধিক। অপুষ্টি, ভগ্নস্বাস্থ্য ও নিম্নপর্যায়ের পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা থেকে স্পষ্টতই প্রতীয়মান যে, অপুষ্টিজনিত বৈকল্য এবং  ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও পরজীবিঘটিত নানা সংক্রামক রোগের ভারবহনই যেন এদেশের জন্য স্বাভাবিক।
৮ নং লাইন: ৮ নং লাইন:
এভাবে আরও অনেক সাধারণ রোগ অনুলি­খিত থেকে গেছে। এটা প্রমাণিত যে, জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে রোগের রূপরেখারও পরিবর্তন ঘটে। একটি বিকাশমান অর্থনীতি ধীরে ধীরে পূর্ণবিকশিত অর্থনীতির পথে অগ্রসর হয় এবং একইভাবে রোগের রূপরেখাও উত্তরণপূর্ব অর্থনীতি ও উত্তরণোত্তর অর্থনীতি থেকে যথেষ্ট আলাদা হয়ে থাকে। উন্নয়নশীল দেশের অনুন্নয়ন সরাসরি নিম্নস্তরের ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা ও পয়ঃনিষ্কাশনের সঙ্গে যুক্ত এবং এতে আছে দূষিত পানি যা ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও পরজীবীর বিস্তারে সহায়তা যোগায়। দূষিত বাতাস এবং ঘন বাসস্থান একইভাবে বায়ুবাহিত রোগ বিস্তারের সহায়ক। এভাবে উত্তরণপূর্ব অর্থনীতিতে সংক্রামক রোগের চাপ অনেক বেশি থাকে, যেমনটি বর্তমানে আছে বাংলাদেশে। কিন্তু উত্তরণকালীন ব্যাপারটা আমাদের দেশে, বিশেষত স্বচ্ছল শহুরে জনগণের মধ্যে প্রকটিত হচ্ছে। উত্তরণোত্তর পর্যায়ের রোগগুলির মধ্যে উলে­খযোগ্য মানসিক রোগ, স্নায়ুরোগ, ক্যান্সার, হূদরোগ, বহুমূত্র এবং অন্যান্য বিপাকীয় রোগ। ঔষধের অপব্যবহারজনিত রোগ এখন বেশি বেশি ধরা পড়ছে। আবশ্যকীয় অবকাঠামোর অপ্রতুলতার দরুন উপরের সারণিতে এই রোগগুলির ততটা নথিভুক্তি সম্ভব হয়নি।  [জিয়া উদ্দিন আহমেদ]
এভাবে আরও অনেক সাধারণ রোগ অনুলি­খিত থেকে গেছে। এটা প্রমাণিত যে, জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে রোগের রূপরেখারও পরিবর্তন ঘটে। একটি বিকাশমান অর্থনীতি ধীরে ধীরে পূর্ণবিকশিত অর্থনীতির পথে অগ্রসর হয় এবং একইভাবে রোগের রূপরেখাও উত্তরণপূর্ব অর্থনীতি ও উত্তরণোত্তর অর্থনীতি থেকে যথেষ্ট আলাদা হয়ে থাকে। উন্নয়নশীল দেশের অনুন্নয়ন সরাসরি নিম্নস্তরের ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা ও পয়ঃনিষ্কাশনের সঙ্গে যুক্ত এবং এতে আছে দূষিত পানি যা ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও পরজীবীর বিস্তারে সহায়তা যোগায়। দূষিত বাতাস এবং ঘন বাসস্থান একইভাবে বায়ুবাহিত রোগ বিস্তারের সহায়ক। এভাবে উত্তরণপূর্ব অর্থনীতিতে সংক্রামক রোগের চাপ অনেক বেশি থাকে, যেমনটি বর্তমানে আছে বাংলাদেশে। কিন্তু উত্তরণকালীন ব্যাপারটা আমাদের দেশে, বিশেষত স্বচ্ছল শহুরে জনগণের মধ্যে প্রকটিত হচ্ছে। উত্তরণোত্তর পর্যায়ের রোগগুলির মধ্যে উলে­খযোগ্য মানসিক রোগ, স্নায়ুরোগ, ক্যান্সার, হূদরোগ, বহুমূত্র এবং অন্যান্য বিপাকীয় রোগ। ঔষধের অপব্যবহারজনিত রোগ এখন বেশি বেশি ধরা পড়ছে। আবশ্যকীয় অবকাঠামোর অপ্রতুলতার দরুন উপরের সারণিতে এই রোগগুলির ততটা নথিভুক্তি সম্ভব হয়নি।  [জিয়া উদ্দিন আহমেদ]


''আরও দেখুন'' স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাবিজ্ঞান।
''আরও দেখুন'' [[স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাবিজ্ঞান|স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাবিজ্ঞান]]।


[[en:Disease Profile]]
[[en:Disease Profile]]

০৬:২৩, ১০ মার্চ ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

রোগবিষয়ক রূপরেখা (Disease Profile) একটি দেশ বা একটি ভৌগোলিক অঞ্চলে বিদ্যমান সুনির্দিষ্ট সাধারণ রোগের ব্যাপকতা। গ্রীষ্মমন্ডলীয় দেশের অনেক রোগ নাতিশীতোষ্ণ মন্ডলের দেশে সচরাচর দেখা যায় না। একইভাবে উন্নয়নশীল দেশগুলিতে ভৌগোলিক অবস্থান নির্বিশেষে এমন কিছু রোগ দেখা যায় যা জলবায়ু, স্বাস্থ্য বা পরিচ্ছন্নতা অপেক্ষা অপুষ্টির সঙ্গেই অধিকতর ঘনিষ্ঠ, যদিও আবহাওয়া ও অন্যান্য নিয়ামক রোগের তীব্রতা ও বিস্তারে যথেষ্ট ভূমিকা রাখে। এমনকি একই দেশে আর্থ-সামাজিক স্তর, পেশা বা বয়সভেদে এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টির অভাবে রোগের প্রকারভেদ ও প্রকোপ লক্ষণীয়ভাবে ভিন্ন হয়ে থাকে। দেহে খনিজের অভাব, যেমন খাদ্যে আয়োডিনের ঘাটতি ঘটলে গলগন্ড রোগ হতে পারে। অন্যদিকে ক্ষতিকর অতিরিক্ত খনিজ দ্রব্য, যেমন আর্সেনিক গ্রহণের ফলে আর্সেনিকজনিত (arsenicosis) বিষক্রিয়া ঘটে।

বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক ও ভৌগোলিক অবস্থার কয়েকটি অনন্য বৈশিষ্ট্য আছে। এখানে জনসংখ্যার ঘনত্ব পৃথিবীতে সর্বোচ্চ, মাথাপিছু আয় খুবই কম এবং মানুষ ও জমির অনুপাত অত্যধিক। অপুষ্টি, ভগ্নস্বাস্থ্য ও নিম্নপর্যায়ের পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা থেকে স্পষ্টতই প্রতীয়মান যে, অপুষ্টিজনিত বৈকল্য এবং  ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও পরজীবিঘটিত নানা সংক্রামক রোগের ভারবহনই যেন এদেশের জন্য স্বাভাবিক।

বাংলাদেশে উদরাময়ের প্রকোপ সর্বাধিক, তারপরই আন্ত্রিক কৃমিরোগ। এ অবস্থা প্রধানত ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য সম্পর্কে অজ্ঞতার জন্যই, কারণ এসব জীবাণু ও পরজীবী মল-মুখ-সংক্রমণ পথে শরীরে প্রবেশ করে ও রোগ ছড়ায়।

এভাবে আরও অনেক সাধারণ রোগ অনুলি­খিত থেকে গেছে। এটা প্রমাণিত যে, জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে রোগের রূপরেখারও পরিবর্তন ঘটে। একটি বিকাশমান অর্থনীতি ধীরে ধীরে পূর্ণবিকশিত অর্থনীতির পথে অগ্রসর হয় এবং একইভাবে রোগের রূপরেখাও উত্তরণপূর্ব অর্থনীতি ও উত্তরণোত্তর অর্থনীতি থেকে যথেষ্ট আলাদা হয়ে থাকে। উন্নয়নশীল দেশের অনুন্নয়ন সরাসরি নিম্নস্তরের ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা ও পয়ঃনিষ্কাশনের সঙ্গে যুক্ত এবং এতে আছে দূষিত পানি যা ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও পরজীবীর বিস্তারে সহায়তা যোগায়। দূষিত বাতাস এবং ঘন বাসস্থান একইভাবে বায়ুবাহিত রোগ বিস্তারের সহায়ক। এভাবে উত্তরণপূর্ব অর্থনীতিতে সংক্রামক রোগের চাপ অনেক বেশি থাকে, যেমনটি বর্তমানে আছে বাংলাদেশে। কিন্তু উত্তরণকালীন ব্যাপারটা আমাদের দেশে, বিশেষত স্বচ্ছল শহুরে জনগণের মধ্যে প্রকটিত হচ্ছে। উত্তরণোত্তর পর্যায়ের রোগগুলির মধ্যে উলে­খযোগ্য মানসিক রোগ, স্নায়ুরোগ, ক্যান্সার, হূদরোগ, বহুমূত্র এবং অন্যান্য বিপাকীয় রোগ। ঔষধের অপব্যবহারজনিত রোগ এখন বেশি বেশি ধরা পড়ছে। আবশ্যকীয় অবকাঠামোর অপ্রতুলতার দরুন উপরের সারণিতে এই রোগগুলির ততটা নথিভুক্তি সম্ভব হয়নি।  [জিয়া উদ্দিন আহমেদ]

আরও দেখুন স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাবিজ্ঞান