রূপসা উপজেলা

রূপসা উপজেলা (খুলনা জেলা)  আয়তন: ১২০.১৫ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২২°৪৩´ থেকে ২২°৫২´ উত্তর অক্ষাংশ এবং  ৮৯°৩৩´ থেকে ৮৯°৪১´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে তেরখাদা উপজেলা, দক্ষিণে ফকিরহাট ও বটিয়াঘাটা উপজেলা, পূর্বে মোল্লাহাট ও ফকিরহাট উপজেলা, পশ্চিমে কোতোয়ালী (খুলনা) থানা ও খালিশপুর থানা।

জনসংখ্যা ১৭৯৫১৯; পুরুষ ৯০১৮৯, মহিলা ৮৯৩৩০। মুসলিম ১৫২৬৪১, হিন্দু ২৬৪৯৪, খ্রিস্টান ৩৪৫ এবং অন্যান্য ৩৯।

জলাশয় প্রধান নদী: রূপসা, ভৈরব, নবগঙ্গা, বাসুখালী।

প্রশাসন রূপসা উপজেলা গঠিত হয় ১৯৮৩ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
- ৬৪ ৭৮ ৭১০১ ১৭২৪১৮ ১৪৯৪ - ৫৮.২
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
২.৯৩ - ৭১০১ ২৪২৪ -
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
আইজগাঁতি ১৩ ২৩৮৩ ২২৩১৩ ২২০০৫ ৬০.৬
ঘাটভোগ ২৭ ১২৬৫২ ১৬৮৯৪ ১৬৮৯২ ৫৩.৭
টি এস বাহিরদিয়া ৮১ ৪০৮৬ ৯১০২ ৮৭৭২ ৬৪.৬
নৈহাটি ৫৪ ৬৭১৩ ২৯০৮৪ ২৯২১৫ ৫৯.৭
শ্রীফলতলা ৬৭ ৩৮৭০ ১২৭৯৬ ১২৪৪৬ ৫২.১

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালে পাকবাহিনী রূপসা উপজেলায় ব্যাপক গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালায়। ১০ নভেম্বর ভারতীয় বিমান বাহিনী ভুলক্রমে হামলা চালিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের দুটি জাহাজ পদ্মা ও পলাশ বিধ্বস্ত করে। পলাশের আর্র্টিফিসার রুহুল আমিন অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং সাঁতরে কূলে উঠার সময় রাজাকাররা তাকে হত্যা করে। উপজেলায় অবস্থিত মুক্তিযুদ্ধের ২টি উল্লেখযোগ্য স্মৃতিস্মারক হচ্ছে বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন ও বীরবিক্রম মহিবুল্লাহর সমাধি।

বিস্তারিত দেখুন রূপসা উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৯।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ১৭৫, মন্দির ৫৬, গির্জা ২। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: রূপসা জামে মসজিদ, আইজগাঁতি জামে মসজিদ, সেনেরপুকুর জামে মসজিদ।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৫৮.২%; পুরুষ ৬০.৯%, মহিলা ৫৫.৬%। কলেজ ৭, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৫, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৬৫, ব্র্যাক পরিচালিত স্কুল ৩৮, স্যাটেলাইট বিদ্যালয় ৫, অন্যান্য ২৩, মাদ্রাসা ১১, এতিমখানা ৬। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: বঙ্গবন্ধু কলেজ (১৯৭২), রূপসা কলেজ (১৯৮৬), অজগড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৮৯৮), নৈহাটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯২০), বেফুলিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯৪৭), রূপসা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, কাজদিয়া মাদ্রাসা, বাগমারা আল আকসা দাখিল মাদ্রাসা, নন্দনপুর দাখিল মাদ্রাসা।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ৫, সিনেমা হল ১, নাট্যমঞ্চ ২, ক্লাব ২১, মহিলা সংগঠন ২৫।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ২৪.৯৯%, অকৃষি শ্রমিক ১৬.৫৭%, শিল্প ১.৮৬%, ব্যবসা ২১.১৪%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৫.৯৭%, চাকরি ১৩.৮৭%, নির্মাণ ২.২৬%, ধর্মীয়  সেবা ০.২১%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.৪৮% এবং অন্যান্য ১২.৬৫%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৩৭.৭৫%, ভূমিহীন ৬২.২৫%।

প্রধান কৃষিফসল ধান, পাট, মাষকলাই, সরিষা, চীনাবাদাম, আলু, আদা, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি   তামাক, আখ।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, জাম, কলা, পেঁপে, আনারস, নারিকেল, সুপারি, পেয়ারা, লিচু, লেবু।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ১২১, গবাদিপশু  ৪০, হাঁস-মুরগি ৬৫।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১৪৯ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ১২৫ কিমি, কাঁচারাস্তা ৪৪৬ কিমি; রূপসা সেতু উল্লেখযোগ্য।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরু ও ঘোড়ার গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা ডকইর্য়াড ১৫, করাত কারখানা ২৫, ইটভাটা ৩০, লবন কারখানা ১১, চালকল ২১, বরফকল ১০।

কুটিরশিল্প র্স্বণশিল্প ২১, লৌহশিল্প ২১, মৃৎশিল্প ৬১, শাঁখাশিল্প ৭৩, দারুশিল্প ২১।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ১৫, মেলা ৩। সেনের বাজার, পালের বাজার, নৈহাটির নতুন হাট, রূপসা বাজার, সামন্তসেনা বাজার, মোছাববরপুর বাজার, আলাইপুর হাট এবং শিয়ালী মেলা ও বান্ধা খালের মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রাধান রপ্তানিদ্রব্য  চিংড়ি, সুপারি, শাকসবজি।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৭৫.৮% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৭.৭%, ট্যাপ ০.৭% এবং অন্যান্য ১.৬%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৭৬.৪% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ২১.৯% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ১.৭% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র হাসপাতাল ২, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা ক্লিনিক ১, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ৫, কমিউনিটি ক্লিনিক ২০।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৯৮৮ ও ১৯৯৮ সালের বন্যা ও ঘুর্ণিঝড়ে এ উপজেলার মৎস্য, গবাদিপশু ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়।

এনজিও আশা, ব্র্যাক, প্রশিকা, জাগ্রত যুব সংঘ।  [আশরাফুল ইসলাম গোলদার]

তথ্যসূত্র   আদমশুমারি রির্পোট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; রূপসা উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।