রূপগঞ্জ উপজেলা

রূপগঞ্জ উপজেলা (নারায়ণগঞ্জ জেলা)  আয়তন: ১৭৬.৪৮ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৩°৪২´ থেকে ২৩°৫৪´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°২৮´ থেকে ৯০°৩৭´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে কালীগঞ্জ (গাজীপুর) ও পলাশ উপজেলা, দক্ষিণে সোনারগাঁও উপজেলা, পূর্বে আড়াইহাজার ও নরসিংদী সদর উপজেলা, পশ্চিমে ডেমরা, খিলগাঁও, বাড্ডা এবং খিলক্ষেত থানা।

জনসংখ্যা ৫৩৪৮৬৮; পুরুষ ২৭৯৫৪৪, মহিলা ২৫৫৩২৪। মুসলিম ৫০৬৪২৩, হিন্দু ২৮১৭৯, বৌদ্ধ ৪০, খ্রিস্টান ১৬৪ এবং অন্যান্য ৬২।

জলাশয় প্রধান নদী: শীতলক্ষ্যা, বালু।

প্রশাসন রূপগঞ্জ থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
১১৬ ২২৪ ২৩২৩৫৬ ৩০২৫১২ ৩০৩১ ৪৯.৮ (২০০১) ৫৩.১
কাঞ্চন পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
১৬.৯৭ ২৯ ৪৯৪৬৮ ২৯১৫ ৫৩.০
তারাব পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
১৯.৩৯ ২১ ১৫০৭০৯ ৭৭৭৩ ৫৬.৩
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
২৫.৫৯ (২০০১) ৩২১৭৯ ২৭৯৫ (২০০১) ৫৯.৯
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
কায়েতপাড়া ৫৫ ৬৪৯৪ ৩৩৫৮০ ৩২৬২০ ৫৩.৫
গোলাকান্দাইল ৩৯ ৪৫৮৭ ৩৩৪৭০ ২৯২৭৭ ৫৫.৩
দাউদপুর ৩১ ৬৯১২ ২১৯০১ ২০০২০ ৫০.৩
বুলতা ১৫ ২৩৮১ ২৬৫৯৬ ২৩৩৮০ ৫৬.২
ভোলাব ২২ ৪২৫৯ ১৬৬৮১ ১৭৩২৭ ৪৯.৮
মুড়াপাড়া ৬৩ ২১৮৪ ১৬৯৪৬ ১৫৬৪৭ ৫৯.৮
রূপগঞ্জ ৭৯ ৭২২২ ২৪০৭৩ ২৩১৭৩ ৫১.২

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ বজরা মসজিদ, মুড়াপাড়া জমিদার বাড়ি, মুড়াপাড়া শাহী মসজিদ, গন্ধর্বপুর আটা আনি মসজিদ, গন্ধর্বপুর তারা মসজিদ, ব্রাহ্মণগাঁও জামে মসজিদ, গোলাকান্দাইল কলিম শাহ জামে মসজিদ, বাবা সালেহ মসজিদ ও মাযার।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালে পাকবাহিনী এ উপজেলায় ব্যাপক হত্যা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালায়। ২১ নভেম্বর ভোলাব নামক স্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকবাহিনীর সম্মুখ লড়াইয়ে একজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। তাঁর স্মরণে রূপসী কাঞ্চন সড়কের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে ‘শহীদ বকুল সড়ক’। উপজেলায় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে ২টি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়েছে।

বিস্তারিত দেখুন রূপগঞ্জ উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৯।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ২৯০, মন্দির ১০, মাযার ৩। মুড়াপাড়া শাহী মসজিদ, গর্ন্ধপুর আটা আনি মসজিদ, গর্ন্ধপুর তারা মসজিদ, ব্রাহ্মণগাঁও জামে মসজিদ, গোলাকান্দাইল কালিম শাহ জামে মসজিদ, বাবা সালেহ মসজিদ ও মাযার (১৫০৪)।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৫৪.৮%; পুরুষ ৫৭.৫%, মহিলা ৫১.৯%। কলেজ ৩, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২৭, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৮২, কলেজিয়েট স্কুল ১, ভোকেশনাল স্কুল ২, কিন্ডার গার্টেন ৩, মাদ্রাসা ৪৭। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: মুড়াপাড়া ডিগ্রি কলেজ (১৯০১), মুড়াপাড়া পাইলট হাইস্কুল (১৯০১), কাঞ্চন ভারতচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৯)।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ৪, ক্লাব ১২, সিনেমা হল ৪, মহিলা সংগঠন ৭, খেলার মাঠ ৭।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ২২.৭২%, অকৃষি শ্রমিক ৩.১৪%, শিল্প ৯.১৯%, ব্যবসা ২১%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৬.৫৮%, চাকরি ১৯.৭৫%, নির্মাণ ১.৯৮%, ধর্মীয় সেবা ০.১৮%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ৩% এবং অন্যান্য ১২.৪৬%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৪৪.০৭%, ভূমিহীন ৫৫.৯৩%। শহরে ৪৬.৯৭% এবং গ্রামে ৪৩.৪৪% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, পাট, গম, আখ, সরিষা, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি  কাউন, যব, দাতই, চীনা।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, লিচু, কলা, পেঁপে, জাম, পেয়ারা।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ৮৪, গবাদিপশু ৮, হাঁস-মুরগি ৯০।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১৭৬.৫৮ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ১৪৮.৭৪ কিমি, কাঁচারাস্তা ৩৮৮.৬৬ কিমি; নৌপথ ৪৩.৪৭ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরুর গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা রাইসমিল, ফ্লাওয়ার মিল, জুটমিল, কটনমিল, পেপারমিল, গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিজ, হোসিয়ারি শিল্প, বিস্কুট ফ্যাক্টরি, বিড়ি ফ্যাক্টরি।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, মসলিনশিল্প, জামদানিশিল্প, বুননশিল্প, কাসা-পিতলশিল্প, দারুশিল্প, সূচিশিল্প।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৪২, মেলা ৫। কাঞ্চন হাট, গোলাকান্দাইল হাট, ভোলাব হাট,  মুড়াপাড়া হাট, তারাবো হাট এবং কাঞ্চন মেলা, মুড়াপাড়া দশমী মেলা, গোলাকান্দাইল মেলা, পশ্চিমগাঁও বাউল মেলা ও সাবাসপুর কালী মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য শাকসবজি, হোসিয়ারি দ্রব্য সামগ্রী, মসলিন কাপড়।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৯৩.১% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

প্রাকৃতিক সম্পদ এ উপজেলার কান্তা নামক স্থানে প্রাকৃতিক গ্যাসের সন্ধান পাওয়া গেছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৪.৭%, ট্যাপ ১.৮% এবং অন্যান্য ৩.৫%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৬৬.০% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৩১.৯% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ২.১% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র হাসপাতাল ২, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৯, হেলথ কমপ্লেক্স ১, ক্লিনিক ২, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ৩।

এনজিও ব্র্যাক, কারিতাস, আশা, কেয়ার, পিদিম। [খায়রুল আলম পুলক]

তথ্যসূত্র   আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; রূপগঞ্জ উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।