রুমা উপজেলা

রুমা উপজেলা (বান্দরবান জেলা)  আয়তন: ৪৯২.০৯ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২১°৫৩´ থেকে ২২°১০´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯২°১৭´ থেকে ৯২°৩৪´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে রোয়াংছড়ি উপজেলা, দক্ষিণে থানচি উপজেলা, পূর্বে বিলাইছড়ি উপজেলা, পশ্চিমে বান্দরবান সদর ও লামা উপজেলা।

জনসংখ্যা ২৯০৯৮; পুরুষ ১৫৪৬৯, মহিলা ১৩৬২৯। মুসলিম ১৬৯৪, হিন্দু ৪৯৫, বৌদ্ধ ১১৩২৬, খ্রিস্টান ১১১২৪ এবং অন্যান্য ৪৪৫৯।

জলাশয় প্রধান নদী: সাঙ্গু।

প্রশাসন রুমা থানা গঠিত হয় ১৯৭৬ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৫ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
- ১৪ ২২৫ ৬৮৪৮ ২২২৫০ ৫৯ ৫৪.০১ (২০০১) ২৭.৮
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৩৪.০৬ ২ (২০০১) ৬৮৪৮ ২০১ ৫৪.০১ (২০০১)
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
ঘালঙ্গা ১৯ ৩৫২০০ ২৯৫৩ ২৭৬৫ ১৬.৪
পাইন্দু ৩৮ ৩৩২৮০ ২৯৬৫ ২৮৩৮ ২১.০
রুমা ৭৬ ১২১৬০০ ৬৯৩৬ ৫৪৮১ ৩৮.৮
রেমাক্রীপ্রাংসা ৫৭ ২০৪৮০ ২৬১৫ ২৫৪৫ ২৫.৬

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

রুমা উপজেলা

ঐতিহাসিক ঘটনাবলি  আরাকানের অন্যতম রাজা মেং বেং (সুলতান জাবুকশাহ নামে পরিচিত) এ অঞ্চলে ২১ বছর (১৫৩২-৫৩) শাসন করেন। ১৬৬৬ সালে মুগলরা এ অঞ্চল দখল করে এবং ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রণের পূর্ব পর্যন্ত রাজত্ব করে। ১৭৮৪ সাল পর্যন্ত এ অঞ্চলটি ম্রকু রাজবংশের শাসনাধীন ছিল।

মুক্তিযুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে পাকবাহিনী রুমা উপজেলায় প্রবেশ করেনি। এই এলাকায় বিদ্রোহী মিজো বাহিনীর সদস্যরা তৎপর ছিল। পাকবাহিনী ও তাদের দোসরদের একটি দল একসময় রুমা সীমান্ত পেরিয়ে কেসিংঘাটায় এম্বুশ করেছিল। মুক্তিযোদ্ধারা তাদের উপর হামলা চালিয়ে তাদেরকে সেখান থেকে বিতাড়িত করে।

বিস্তারিত দেখুন রুমা উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৯।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৬, মন্দির ১, মঠ ৭, কেয়াং ৩৫, আশ্রম ১। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: মিনঝিড়িপাড়া বৌদ্ধ মন্দির।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ২৮.৯%; পুরুষ ৩৫.১%, মহিলা ২১.৮%। কলেজ ১, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৬, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৩৭, কমিউনিটি বিদ্যালয় ৬, কিনডার গার্টেন ১। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: রুমা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, পাইন্দু হেডম্যান পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চাইন্দা হেডম্যান পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রুমা বাজার আদর্শ পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ১, ক্লাব ১, সংগীত একাডেমি ১, সাংস্কৃতিক সংগঠন ৩, মহিলা সংগঠন ২, অডিটোরিয়াম ১, খেলার মাঠ ২।

দর্শনীয় স্থান বগা লেক, তাজিনডং পাহাড়, কেওক্রাডং পাহাড়, রিজুক ঝর্না, মিঝিড়িপাড়া বৌদ্ধ মন্দির।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৮৪.৭৯%, অকৃষি শ্রমিক ০.৮৮%, শিল্প ০.৪২%, ব্যবসা ৫.৭%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ০.১%, চাকরি ৩%, নির্মাণ ০.১৫%, ধর্মীয় সেবা ০.১৫%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.১৩% এবং অন্যান্য ৪.৬৮%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৪০.৭৪%, ভূমিহীন ৫৯.২৬%। শহরে ৪৩.২৬% এবং গ্রামে ৪০.০৬% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, তিল, তুলা, হলুদ, আদা, বাদাম, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি  সরিষা।

প্রধান ফল ফলাদি  কলা, কাঁঠাল, কমলা, আনারস, পেঁপে।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১.২০ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৩৭ কিমি, কাঁচারাস্তা ৭৫ কিমি।

শিল্প ও কলকারখানা করাত কল, ইটভাটা।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৪। রুমা বাজার, মুরুম ঘাট বাজার ও ঘালঙ্গা বাজার উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য কলা, পেঁপে, আনারস।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৩৩.৫% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

প্রাকৃতিক সম্পদ বাঁশ, পাথর।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৬.৫%, ট্যাপ ১১.৭% এবং অন্যান্য ৮১.৮%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৭.৫% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৩৬.৫% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৫৬.০% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র ১, আর্মি মেডিকেল সেন্টার ১, স্বাস্থ্য কেন্দ্র ১, পশু চিকিৎসা কেন্দ্র ১।

এনজিও ব্র্যাক, কারিতাস।  [আতিকুর রহমান]

তথ্যসূত্র  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; রুমা উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।