রাসমেলা

রাসমেলা মণিপুরীদের প্রধান উৎসব। এটি রাসলীলা নামেও পরিচিত। বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যেও এ উৎসব পালিত হয়। কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে  মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ, সুন্দবনের দুবলার চর এবং কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে এ উৎসব পালিত হয়। ‘রস’ থেকে রাস কথাটির উৎপত্তি; আর রস-আস্বাদনের জন্য পালিত হয় বলে এর এরূপ নামকরণ হয়েছে। বৃন্দাবনে রাধা-কৃষ্ণের আধ্যাত্মিক রাসলীলা অনুকরণে রাসমেলার উদ্ভব।

মণিপুরী সমাজে রাস উৎসবের প্রবর্তক মণিপুরের রাজা মহারাজ জয়সিংহ (রাজত্ব: ১৭৬৪-১৭৯৯ খ্রি.)। বাংলাদেশে মণিপুরীরা স্থায়ী বসতি স্থাপনের পর ১৮৪২ খ্রিস্টাব্দ থেকে মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর জোড়ামন্ডপে নিয়মিতভাবে এ উৎসব পালিত হচ্ছে। বর্তমানে আদমপুরের তেতইগাও ও হবিগঞ্জের জয়শ্রী গ্রামেও এ উৎসব পালিত হচ্ছে।

রাসমেলার প্রধান দিক হলো চিরাচরিত মণিপুরী পোশাকে শিশুদের রাখাল নাচ ও তরুণীদের রাসনৃত্য। মণিপুরী সঙ্গীত ও নৃত্যনাট্যের মাধ্যমে কৃষ্ণ-অভিসার, রাধা-গোপী অভিসার, রাগ আলাপন ইত্যাদি অভিনীত হয়। দেশ-বিদেশ থেকে আগত বহু সংখ্যক দর্শনার্থীর ভিড়ে এ এলাকা তখন মহোৎসবে পরিণত হয়।

পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা ও সুন্দরবনের দুবলার চরেও তিনদিন ব্যাপী রাসমেলা অনুষ্ঠিত হয়। এ উপলক্ষে হাজার হাজার পুণ্যার্থী আর সমুদ্র দর্শনার্থীর পদভরে মুখরিত হয়ে ওঠে সমুদ্র সৈকত। মেলার শেষ দিন প্রত্যূষে প্রথম জোয়ারে পুণ্যস্নান সমাপনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় রাসমেলা। সুন্দরবনে মাছ ধরার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয় এই মেলার মাধ্যমে।  [মোঃ হাফিজুর রহমান]