রামরাম বসু

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২২:৫৪, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)

রামরাম বসু (আনু. ১৭৫৭-১৮১৩)  মুন্সি এবং প্রথম দিকের অন্যতম গদ্যলেখক, হুগলির চুঁচুড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। জীবিকার জন্যে তিনি ফারসি শিখেছিলেন - এ ছাড়া তাঁর জীবনের প্রথম দিকের কথা তেমন কিছু জানা যায় না। পরে তিনি যখন একাধিক ইংরেজের মুন্সি হিসেবে কাজ করেন, তখন তাঁদের কাছ থেকে তিনি মৌখিক ইংরেজিও শিখেছিলেন।

এ ইংরেজ মুনিবদের মধ্যে একজন উইলিয়ম চেম্বার্স। তাঁর সুপারিশে ব্যাপটিস্ট ধর্মপ্রচারক জন টমাস ১৭৮৭ সালের ৮ মার্চ তাঁকে বাংলা মুন্সি হিসেবে নিয়োগ করেন। ১৭৯১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে টমাস ইংল্যান্ডে ফেরার আগ পর্যন্ত রামরাম তাঁর মুন্সি হিসেবে কাজ করেন। পরে ১৭৯৩ সালের নভেম্বর মাসে টমাস যখন উইলিয়ম কেরী এবং তাঁর পরিবার নিয়ে বঙ্গদেশে ফিরে আসেন, তখন তাঁর সুপারিশে কেরী রামরামকে তাঁর বাংলা মুন্সি হিসেবে নিযুক্ত করেন। এ থেকেই শুরু হয় কেরীর সঙ্গে রামরাম বসুর দীর্ঘ ভালোবাসা এবং কখনো কখনো তিক্ততার সম্পর্ক। প্রথমবার ১৭৯৬ সাল পর্যন্ত রামরাম কেরীর কাজ করেন, কিন্তু এক বিধবার সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক রাখার অভিযোগে কেরী তাঁকে চাকরি থেকে সরিয়ে দেন। কেরী তাঁর কাছ থেকে সামান্য বাংলা শিখে সে দুর্বল জ্ঞান নিয়েই তাঁর সাহায্যে বাইবেল অনুবাদ করতে আরম্ভ করেন। ১৮০০ সালে উইলিয়ম ওয়ার্ড এবং যশুয়া মার্শম্যানকে সঙ্গে নিয়ে কেরী যখন শ্রীরামপুর মিশন এবং তার প্রেস গড়ে তোলেন, তখন দ্বিতীয়বারের জন্যে রামরাম কেরীর অধীনে কাজ করতে আরম্ভ করেন। এবারে তাঁর কাজ হয় খ্রিস্টধর্ম সংক্রান্ত সাহিত্য রচনা এবং অনুবাদ করা।

১৮০১ সালের মে মাসে ফোর্ট উইলিয়ম কলেজে কেরীর অধীনে বাংলা বিভাগের সূচনা হলে, রামরাম সেখানে সহকারী মুন্সি হিসেবে নিযুক্ত হন। ৭ আগস্ট ১৮১৩ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত রামরাম এ কাজে নিযুক্ত ছিলেন।

কলেজে নিযুক্ত হওয়ার মাত্র দুমাস পরেই ছাত্রদের পাঠ্যপু্স্তক হিসেবে তিনি বারো ভুঁইয়াদের একজন - প্রতাপাদিত্যের জীবন নিয়ে একটি গ্রন্থ রচনা করেন। এর নাম রাজা প্রতাপাদিত্য চরিত্র। ১৮০১ সালের জুলাই মাসে গ্রন্থটি শ্রীরামপুর প্রেস থেকে প্রকাশিত হয়। এ গ্রন্থের জন্যে তিনি কলেজের কাউন্সিল থেকে পুরস্কৃত হয়েছিলেন। পরের বছর তিনি বিভিন্ন কাজের উপযোগী চিঠিপত্রের একটি আদর্শ সংকলন প্রকাশ করেন। এর নাম লিপিমালা। এ দুটি গ্রন্থ ছাড়া, তিনি গদ্যে-পদ্যে আরও কয়েকটি পুস্তিকা লিখেছিলেন, যেগুলিকে এক কথায় বলা যায়, খ্রিস্টীয় সাহিত্য। খ্রিস্টধর্ম সম্পর্কে তাঁর কোনো ভালোবাসা ছিলো কিনা সন্দেহের বিষয়, কিন্তু তাঁকে আগাগোড়াই খ্রিস্টধর্মে শিগগিরই দীক্ষা নিতে যাচ্ছেন - এমন ভান করতে হতো, যাতে তাঁর মুনিবরা খুশি থাকেন।

কলেজে তাঁর অন্য যেসব বাঙালি সহকর্মী ছিলেন, তাঁরা ছিলেন সংস্কৃত পন্ডিত এবং সংস্কৃত-প্রভাবিত রীতিতেই তাঁদের গ্রন্থাদি লিখেছিলেন। কিন্তু রামরাম বসুর গদ্য ছিল ফারসি-প্রভাবিত। সেকালে সাধারণ্যে প্রচলিত বাংলা গদ্যশৈলী কেমন ছিল, তার আভাস এ গদ্য থেকে পাওয়া যায়। বাংলা গদ্যে প্রথম লেখালেখি করে তিনি বাংলা সাহিত্যে একটি স্থায়ী স্থান করে নিয়েছেন।

[গোলাম মুরশিদ]