রাবার গাছ

রাবার গাছ  Euphorbiaceae গোত্রের দুধের মতো কষযুক্ত বৃক্ষ Hevea brasiliensis। দক্ষিণ আমেরিকার লম্বা গড়নের এই বৃক্ষের দুধকষ থেকে প্রাকৃতিক রাবার তৈরি হয়। মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কাসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেকগুলি দেশে এবং পশ্চিম আফ্রিকার কোন কোন অঞ্চলে এখন ব্যাপকভাবে রাবার চাষ চলছে। গাছের কান্ডের ছালে কোনাকুনিভাবে কাটা কয়েক মিলিমিটার গভীর গর্ত থেকে কষ সংগ্রহ করা হয়। গাছের প্রয়োজন পর্যাপ্ত রৌদ্রসহ উষ্ণ আর্দ্র জলবায়ু। সাধারণত ২ বছর বয়সী গাছ থেকে প্রথম কষ সংগ্রহ শুরু হয়। হেক্টরপ্রতি ২৫০টি গাছই যথেষ্ট। লাগানো গাছের মধ্যে কিছুটা ফাঁক থাকা প্রয়োজন যাতে নিচে নানা জাতের উদ্ভিদ জন্মানোর জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণ আলো পৌঁছয়। গাছপ্রতি বছরে গড়পড়তা উৎপাদন প্রায় ২ কিলোগ্রাম রাবার।

রাবার বাগান মধ্যমাকৃতি এই গাছের কান্ড লম্বা, পাতা পুরু, গাঢ়-সবুজ। এক হেক্টর জমিতে প্রায় ২৫০টি গাছ লাগানো যায়। গাছের বৃদ্ধি ও জাত অনুযায়ী রাবার উৎপাদনে তারতম্য ঘটে। হেক্টরপ্রতি বার্ষিক গড় উৎপাদন প্রায় ৫০০ কিলোগ্রাম, গাছপ্রতি ২ কিলোগ্রাম, কিন্তু উচ্চফলনশীল জাতও আছে, তাতে বার্ষিক ফলন হয় হেক্টরপ্রতি প্রায় ২২০০ কিলোগ্রাম।

রাবার বাগান

বাংলাদেশে রারার চাষের প্রচেষ্টা মিশ্র সাফল্যের। উষ্ণ ও ক্রান্তীয় জলবায়ুূ, গ্রীষ্মে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতসহ বাংলাদেশের আবহাওয়া রাবার চাষের উপযুক্ত বিবেচিত হলেও এই আবাদ অপেক্ষাকৃত জমিঘন বিধায় পাহাড়ি এলাকায় পরীক্ষামূলকভাবে অনাবাদি জমির সন্ধান চালানো হয়েছিল। ষাটের দশকের গোড়ার দিকে চট্টগ্রামের বনাঞ্চলে পরীক্ষামূলক রাবার চাষের সূচনা ঘটে। স্থানীয় জলবায়ুতে পরীক্ষামূলক গাছগুলির বৃদ্ধির হার এবং প্রাথমিক ফলাফল আশাপ্রদ হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ায় এ কর্মসূচি তখন আর এগোতে পারে নি। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভের পর আবার রাবার চাষের উদ্যোগ গৃহীত হয় এবং ১৯৮০ সালে সরকার আমদানির বিকল্প হিসেবে রাবার উৎপাদন শুুরু করলে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক আর্থিক সহায়তাদানে এগিয়ে আসে। ইতোমধ্যে প্রায় ৫,১০০ হেক্টর জমি রাবার চাষের আওতাধীন এবং নতুন কর্মসূচিতে আরও ৫০৪৮ হেক্টর জমি অন্তর্ভুক্ত হয়। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন  বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশন এসব রাবার বাগান পরিচালনা করত। বাংলাদেশে রাবার চাষের বাণিজ্যিক সম্ভাবনা পরীক্ষার জন্য মূলত পাইলট প্রকল্প হিসেবে উদ্যোগটি আরও দশককাল চালু ছিল।

নিরীক্ষার ফলাফল মূল্যায়িত হচ্ছে, তবে প্রাথমিক ইঙ্গিত হলো প্রকল্প আশানুরূপ ফলপ্রসূ হয়নি। মধুুপুর বনাঞ্চলে ১৯৮৭ সালে লাগানো ২৫ লক্ষ চারাগাছের মধ্যে এখন (১৯৯৯) মাত্র প্রায় ১৫ লক্ষ টিকে আছে। গাছগুলি এখন সংগ্রহযোগ্য হলেও ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার কারণে রাবার পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।

রাবার গাছ

মনে করা হয় যে, দেশে ১১০০০ হেক্টর অনাবাদি জমিতে গড়ে তোলা সুপরিচালিত রাবার বাগানে অনুকূল পরিস্থিতিতে বছরে হেক্টরপ্রতি ১ টন শুষ্ক রাবার (মোট ১১০০০ মে টন) উৎপাদন সম্ভব। কিন্তু রাবার বাগান সুপরিচালনার খরচ এবং রাবারের আন্তর্জাতিক বাজার দরের হিসাবে বাংলাদেশে রাবার চাষের ভবিষ্যৎ তেমন উজ্জ্বল বলা যাবে না। এই নেতিবাচক দিকের একটি বড় কারণ জমির মারাত্মক অভাব।

উৎপাদন ব্যয়সাশ্রয়ী ও প্রতিযোগিতামূলক করার জন্য যে পরিমাণ রাবার উৎপাদন প্রয়োজন, রাবার বাগানের জন্য সেই পরিমাণ জমি সংগ্রহ এখন অসম্ভব। দেশে রাবার চাষকে অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক কর্মোদ্যোগ হিসেবে গড়ে তোলা যাবে কিনা এ নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। তবে ব্যক্তিগত খাত কোনভাবে ক্ষুদ্রায়তন উদ্যোগ হিসাবে রাবার চাষকে ব্যয়সাশ্রয়ী করতে পারে কিনা সেই পরীক্ষা আকর্ষণীয় হতে পারে। কিন্তু এজন্য প্রয়োজন দেশের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতিতে রাবার চাষের কৃষিতাত্ত্বিক নানা দিকের বৈজ্ঞানিক নিরীক্ষা ও ব্যয়সাশ্রয়ী অনুসন্ধানী বিশে­ষণ। [জিয়া উদ্দিন আহমেদ]