রাজবংশী, ইন্দ্রমোহন

Mukbil (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ১৭:৩৩, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ ("right|thumbnail|200px|ইন্দ্রমোহন রাজবংশী '''রাজবংশী, ইন্দ্রমোহন''' (১৯৪৬-২০২১) গীতিকার, সুরকার, শিক্ষক ও মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৪৬ সালের ২৬শে জানুয়ারি ঢাকার খিলগাঁও থানাধীন দ..." দিয়ে পাতা তৈরি)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)
ইন্দ্রমোহন রাজবংশী

রাজবংশী, ইন্দ্রমোহন (১৯৪৬-২০২১) গীতিকার, সুরকার, শিক্ষক ও মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৪৬ সালের ২৬শে জানুয়ারি ঢাকার খিলগাঁও থানাধীন দাশেরকান্দি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম নবীনচন্দ্র রাজবংশী, মাতা পূর্ণচন্দ্র শশী। ৫ ভাই এবং এক বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়। খিলগাঁওয়ের ত্রিমোহনী স্কুল, কে.এল জুবলি হাইস্কুল এবং সংগীত কলেজে তিনি পড়াশুনা করেন। লেখাপড়া শেষে তিনি খিলগাঁও হাইস্কুলে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। প-িত বারীন মজুমদারের সহযোগিতায় ১৯৭৪ সালে তিনি সংগীত কলেজে লোকসংগীত বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি সরকারি সংগীত কলেজে অধ্যাপক এবং অধ্যক্ষর দায়িত্ব পালন শেষে চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন।

ইন্দ্রমোহন রাজবংশীর ৫ পুরুষ সংগীতের সঙ্গে সম্পর্কিত থাকায় ছোটবেলা থেকেই তিনি সংগীতের প্রতি আকৃষ্ট হন। ৫ বছর বয়সে গ্রামের কেষ্ট দাদুর কাছে সংগীতে তার হাতেখড়ি। ১৯৫৮ থেকে ১৯৬২ সময়বৃত্তে তিনি বুলবুল ললিতকলা একাডেমিতে সংগীত চর্চা করেন। এ সময় তিনি ওস্তাদ মুন্সী রইসউদ্দিন, প-িত বারীন মজুমদার, বেদারউদ্দীন আহমেদ খান, হাসান আলী খান, হরলাল রায়, আবদুল আলীম প্রমুখের সান্নিধ্যে আসেন। ফলশ্রুতিতে সংগীতের সকল শাখায় তিনি বিচরণ করেছেন।

ইন্দ্রমোহন রাজবংশী ঢাকা বেতারে ১৯৫৭ সালে শিশুশিল্পী হিসেবে এবং ১৯৬৫ সালে বড়দের আসরে লোকসংগীত শিল্পী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। একই বছর পাাকিস্তান টিভির ঢাকা কেন্দ্রে আবদুল লতিফের উপস্থাপনায় গান পরিবেশন করেন। ছয়দফা আন্দোলন চলাকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে গান রচনা করে বিভিন্ন স্থানে তা পরিবেশন করেন। ৬০-এর দশকে তাঁর বিখ্যাত গান ছিলÑ ৬ দাঁড়েতে নৌকা চলে মুখে আল্লাজি, দেখ পাছা নায়ে হাল ধইরাছে গোপালগঞ্জের মাঝি। আমার বাংলাদেশের মাঝি ভাই, জয়বাংলা বলে রঙিন পাল ওড়াই। ১৯৭০ সালের নির্বাচনের সময় তিনি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অনেক গান লিখে তাতে সুর দিয়ে বিভিন্ন স্থানে পরিবেশন করেন। এজন্য তিনি বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্যও লাভ করেন। মায়ের প্রেরণায় তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য মে মাসে ভারতের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করেন। পথিমধ্যে নরসিংদী শহরে পাকিস্তানি বাহিনীর নিকট ধরা পড়লে উর্দু ভাষায় কথা বলে এবং নিজেকে মুসলমান পরিচয় দিয়ে ছাড়া পান। ভারতে গিয়ে প্রথমেই এইচ টি ইমামের সঙ্গে পরিচয় হলে তিনি তাকে কলকাতায় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে কাজ করার জন্য উৎসাহ দেন। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী অংশুমান রায়ের সঙ্গে পরিচয়ের মাধ্যমে ৬ই জুন থেকে গান পরিবেশন শুরু করেন। স্বাধীন বাংলা বেতারে তাঁর প্রথম গান ছিল আবদুল লতিফের লেখা ও সুরে ‘এসো ভাই দেশের গান গাই’।

মুক্তিযুদ্ধের পর ইন্দ্রমোহন রাজবংশী বেতার, টিভি এবং চলচিত্রের গানে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তাঁর উল্লেখযোগ্য গানগুলো হলো- কে কে যাবি আয়রে চল যাইরে আয় বাঙালি, বিড়াল রুই মাছের মাথা খাইওনা, মাটির কোলে খাঁটি মানুষ খুঁজে পাওয়া দায়, মায়ের চেয়ে বড় কেউরে নাইরে দুনিয়ায় ইত্যাদি। ২০০৭ সালে ইন্দ্রমোহন রাজবংশীকে দক্ষিণ কোরিয়ায় ওয়ার্ল্ড মাস্টার খেতাব দেয়া হয়। এ সময় তিনি বাংলা ও ইংরেজিতে ‘সময় পাইলে বাংলাদেশে আইও ভীনদেশি বন্ধুরে’ (If you have time visit Bangladesh o my foreigners friend) গানটি লিখে সুর করে এবং গেয়ে সকলের মনযোগ আকর্ষণ করেন।

লোকসঙ্গীতকে সকলের নিকট জনপ্রিয় করার জন্য তিনি ‘বাংলাদেশ লোকসংগীত পরিষদ’ নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। গান গাওয়ার পাশপাশি তিনি বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এক হাজারের বেশি শিল্পীর কয়েক লাখ লোকসঙ্গীত সংগ্রহ করেন। শিল্পী আব্বাসউদ্দীনের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ‘কালজয়ী আব্বাস উদ্দীন’ গ্রন্থের সম্পাদনা করেন ইন্দ্রমোহন রাজবংশী। এছাড়া বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে তাঁর জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে ১০১টি গান লিখে ও সুর করে ‘নীতিতে সংস্কৃতিতে তুমি জাতির পিতা শেখ মুজিব’ শীর্ষক একটি বই রচনা করেছেন।

সংগীতে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশ সরকার ২০১৮ সালে ইন্দ্রমোহন রাজবংশীকে একুশে পদকে ভূষিত করে। তাঁর স্ত্রী সংগীত শিল্পী দীপ্তি রাজবংশী, পুত্র রবীন রাজবংশী, কন্যা সংগীতা রাজবংশী। ২০২১ সালের ৭ই এপ্রিল শিল্পী ইন্দ্রমোহন রাজবংশী মৃত্যুবরণ করেন। [মনিরুজ্জামান শাহীন]