রাঙ্গুনিয়া উপজেলা

রাঙ্গুনিয়া উপজেলা (চট্টগ্রাম জেলা) আয়তন: ৩৬১.৫৩ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২২°১৮´ থেকে ২২°৩৭´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°৫৮´ থেকে ৯২°০৮´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে কাউখালী উপজেলা (রাঙ্গামাটি), দক্ষিণে চন্দনাইশ, পটিয়া ও বোয়ালখালী উপজেলা, পূর্বে কাপ্তাই, রাজস্থলী ও বান্দরবান সদর উপজেলা, পশ্চিমে রাউজান ও কাউখালী উপজেলা।

জনসংখ্যা ৩৩৯০০৪; পুরুষ ১৬৮৪১২, মহিলা ১৭০৫৯২। মুসলিম ২৮০৩৫৯, হিন্দু ৪২৬২৬, বৌদ্ধ ১৫৬২১, খ্রিস্টান ৩৩২ এবং অন্যান্য ৬৬। এ উপজেলায় চাকমা ও মারমা আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।

জলাশয় কর্ণফুলি নদী এবং কুলফুলমাই, চন্দ্রঘোনা, কাটাখালী, মুনধারী, শিলকখাল ও কোদালার খাল এবং বাঘা বিল, লাইগ্যার বিল ও ভাগুইনা বিল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন রাঙ্গুনিয়া থানা গঠিত হয় ২৪ জানুয়ারি ১৯৬২ সালে। থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে। পৌরসভা গঠিত হয় ৪ জুলাই ২০০০ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
১৫ ৭৪ ১৩৮ ৬০৩৮৫ ২৭৮৬১৯ ৯৩৮ ৬৩.৫ (২০০১) ৪৭.১
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
২১.৬৮ (২০০১) ২২ ৩২৬৪১ ১৩৮৪(২০০১) ৬০.২
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
১৫.৪০ (২০০১) ২৭৭৪৪ ১৪৯৬ (২০০১) ৫৩.৮
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
ইসলামপুর ২৭ ৩২১৪ ১১৬৬৭ ৭৩৭৭ ৪২.৫
কোদালা ৩০ ২৪১৩ ৯৬৬৯ ৯২৯৬ ৩৫.৪
চন্দ্রঘোণা কদমতলী ১৭ ১৯৪০ ১৫৪৯৯ ১৪৭২২ ৫৭.০
দক্ষিণ রাজানগর ৩৫১৩ ৮৯৩০ ৮৯৯০ ৪০.৮
পদুয়া ৪৩ ৯৬৯৮ ১৭৬২৯ ১৮০৩৯ ৩৮.৪
পারুয়া ৫১ ৪২০২ ৬৯৬৬ ৭৪৫৭ ৪০.৬
পোমরা ৬০ ৩৩৫৫ ১২২৫৬ ১৩৪০৩ ৫২.৯
বেতাগী ১৫ ২২৫৭ ৯৭৮৮ ১০৭২২ ৫৫.৩
মরিয়মনগর ৩৪ ৫৬০ ৯০৫৯ ৯৫৯৯ ৬১.৬
রাঙ্গুনিয়া ৭৭ ২৪০১ ৬৪৪৫ ৬৯০৯ ৫৯.৮
রাজানগর ৬৯ ৩৫১২ ৯৭১৩ ৯৪৫৯ ৩৭.৪
লালানগর ৩২ ২৪৯৫ ৬৬৪৮ ৭৮৯৭ ৪৬.১
শিলক ৯৪ ২৯৬০ ৮৪৮৭ ৯৫২২ ৫০.৮
সরফভাটা ৮৬ ৩২০৯ ১২০২৬ ১৩৩১৮ ৪৭.৬
হোসেনাবাদ ২৫ ৩২০৭ ৭৫১৫ ৭৩৫৬ ৫১.২

উৎস আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্মসম্পদ সুখবিলাস রাজবাড়ির ধ্বংসাবশেষ (আঠারো শতক), রানীর পুকুর (রাজাহাট), পাগলা মামার দরগা (উনিশ শতক), সাহেন শাহ্’র দরগা (পোমরা), ধর্মচক্র বিহার (১৭৫০), জগৎদাত্রী মন্দির, শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ মন্দির (শান্তিনিকেতন), শিব চতুর্দশী মন্দির (পারুয়া), কৃষ্ণ মন্দির (মজুমদারখীল), সাগরদিঘী (রাজানগর), মহামুনি বৌদ্ধ বিহার, সীমাঘর।

ঐতিহাসিক ঘটনা ১৭৫৭ সাল থেকে চাকমা রাজন্যবর্গ শুকদেব রায়, শেরদৌলত খাঁ, জানবক্স খাঁ, টব্বর খাঁ, জব্বর খাঁ, ধরম বক্স খাঁ, রাণী কালীন্দি, হরিশ্চন্দ্র রায় প্রমুখ এ অঞ্চলে রাজত্ব করেছেন। ১৮৭৪ সালে চাকমা রাজা হরিশ্চন্দ্র রাজধানী রাঙ্গুনিয়ার রাজানগর হতে রাঙ্গামাটিতে স্থানান্তরিত করেন।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালে রানীরহাট, রোজারহাট ও রাঙ্গুনিয়ায় পাকবাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের সংঘর্ষ হয়। পাকবাহিনী উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক গণহত্যা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ চালায়। উপজেলায় ২টি বধ্যভূমির সন্ধান পাওয়া গেছে এবং রাঙ্গুনিয়া কলেজ, রাঙ্গুনিয়া আদর্শ বহুমুখী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় ও ইছাখালীতে ৩টি স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপিত হয়েছে।

বিস্তারিত দেখুন রাঙ্গুনিয়া উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৯।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৩৫৯, মন্দির ৪২, প্যাগোডা ৪১, মাযার ৩, তীর্থস্থান ১। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: রাজানগর জামে মসজিদ, ধর্মচক্র বৌদ্ধ বিহার (সৈয়দ বাড়ি), বেদীর মন্দির।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪৮.৯%; পুরুষ ৪৮.৭%, মহিলা ৪৯.১%। কলেজ ৯, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৪১, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৪৮, মাদ্রাসা ১৫। উলেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: রাঙ্গুনিয়া মহাবিদ্যালয় (১৯৬৩), রাঙ্গুনিয়া আদর্শ বহুমুখী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৫), রাঙ্গুনিয়া খিলমোগল রসিক উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৬), রাঙ্গুনিয়া মজুমদারখীল উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৭), পোমরা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৮), উত্তর রাঙ্গুনিয়া উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪২), কদমতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৮৮৭), উত্তর পাদুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯০২), ঘাগড়া-সাতঘরিয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯৩০), রাঙ্গুনিয়া নুরুল উলুম ফাজিল মাদ্রাসা (১৯৩৬)। পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী রাঙ্গুনিয়া, রূপালী রাঙ্গুনিয়া, আশার আলো।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ১, কাব ১০, মহিলা সংগঠন ২, খেলার মাঠ ৩০।

দর্শনীয় স্থান চাকমা রাজবাড়ির ধ্বংসাবশেষ (সুখবিলাস, পাদুয়া), মহামুনি মন্দির, চা বাগান (আগুনিয়া, কোদলা ও ঠাণ্ডাছড়ি)।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৩৯.৭১%, অকৃষি শ্রমিক ৪.৩০%, শিল্প ০.৫৮%, ব্যবসা ১৬.২৪%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৩.৫৭%, চাকরি ১২.৩১%, নির্মাণ ১.০৩%, ধর্মীয় সেবা ০.৪৯%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ১০.৯১% এবং অন্যান্য ১০.৮৬%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৪১.১৯%, ভূমিহীন ৫৮.৮১%। শহরে ৩৮.২১% এবং গ্রামে ৪১.৮১% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, তামাক, গম, আলু, পিঁয়াজ, রসুন, পান, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি আউশ ধান, তিল, সরিষা, কাউন।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, জাম, নারিকেল, কলা, লিচু, পেঁপে, আমড়া, জলপাই।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ৪৫, গবাদিপশু ৭, হাঁস-মুরগি ৬৫।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ২০ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৫ কিমি, কাঁচারাস্তা ২২ কিমি; নৌপথ ২৪ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরুর গাড়ি, ঘোড়ার গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা জুট মিল, কার্পেট মিল, স’মিল, কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ, ওয়েল্ডিং কারখানা।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, মৃৎশিল্প, লৌহশিল্প, তাঁতশিল্প, বাঁশের কাজ, কাঠের কাজ, সেলাই কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ২২, মেলা ৮। ধামাইর হাট, মোগলের হাট, রোয়াজার হাট, রানীর হাট, শান্তির হাট ও মরিয়মনগর হাট এবং চৈত্র সংক্রান্তি মেলা (রাজানগর), মহররম মেলা (রাঙ্গুনিয়া), সূর্যব্রত মেলা (মজুমদারখীল কদমতলী), রথযাত্রা মেলা ও বিজয় মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য পান, পেঁপে, শাকসবজি।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৯৬.৫% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

প্রাকৃতিক সম্পদ এ উপজেলার চুনাপাথরের সন্ধান পাওয়া গেছে ।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৮০.৫%, ট্যাপ ১৭.০% এবং অন্যান্য ২.৫%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৭১.৬% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ২৩.৬% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। তবে ৪.৮% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ১১, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ২।

এনজিও কারিতাস, পল্লি প্রগতি উন্নয়ন সংস্থা। [সুনীতি রঞ্জন বড়ুয়া]

তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; রাঙ্গুনিয়া সদর উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।