রাউজান উপজেলা

রাউজান উপজেলা (চট্টগ্রাম জেলা)  আয়তন: ২৪৬.৫৯ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২২°২৫´ থেকে ২২°৪০´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°৫১´ থেকে ৯১°৫৯´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে ফটিকছড়ি ও কাউখালী, দক্ষিণে বোয়ালখালী উপজেলা ও কর্ণফুলি নদী, পূর্বে রাঙ্গুনিয়া এবং কাউখালী উপজেলা (রাঙ্গামাটি), পশ্চিমে হাটহাজারী ও ফটিকছড়ি উপজেলা।

জনসংখ্যা ৩২২৮৪০; পুরুষ ১৫৬২৫৫, মহিলা ১৬৬৫৮৫। মুসলিম ২৪৭২৪৮, হিন্দু ৫৪৪০৮, বৌদ্ধ ২১০৯৫, খ্রিস্টান ৩২ এবং অন্যান্য ৫৭। এ উপজেলায় মারমা, ত্রিপুরা, মগ প্রভৃতি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।

জলাশয় প্রধান নদী: কর্ণফুলি ও হালদা নদী।

প্রশাসন রাউজান থানা গঠিত হয় ১৯৪৭ সালে। থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৪ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
১৪ ৫৬ ৬৬ ৫৯১৪৮ ২৬৩৬৯২ ১৩০৯ ৬৩.৩ ৬২.১
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
২৭.১৫ ১৭ ৫৯১৪৮ ২১৭৯ ৬৩.৩
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
উড়কিরচর ৮৮ ৩২৭৫ ১১২২৩ ১১৪০৯ ৬৪.২
কদলপুর ৫০ ২৫৫৮ ৮৪৬২ ৯৭২৪ ৫৯.৯
গহিরা ৩৭ ১৩০৯ ৪৩৮৭ ৫২৪৫ ৬০.৫
চিকদাইর ১৮ ২০৭৭ ৬৪৪৪ ৬৯৯৪ ৫৭.১
ডাবুয়া ২৫ ৫৫৮৪ ১০২৮৫ ১০৫৫৭ ৫৭.২
নোয়াজিশপুর ৫৬ ১৬২০ ৫৪৭০ ৬৪২৫ ৫৯.৪
নোয়াপাড়া ৬৩ ৩৫৪৮ ১৬১৯০ ১৭০৫৩ ৬৩.২
পশ্চিম গুজরা ৯৪ ৩২৯৫ ১০৬৪৭ ১১০৪৩ ৬৭.৪
পাহাড়তলী ৬৯ ৩৮১৫ ৮৩৯৭ ৯১৬১ ৬৯.৫
পূর্ব গুজরা ৩১ ৩৮৪২ ১০৪৯৬ ১২১৭৯ ৬৫.১
বাগোয়ান ১১ ২৭২৪ ৯৪৯৯ ১০১৪৯ ৬৪.৮
বিনাজুরী ১২ ২৫১৯ ৪৪৫৮ ৪৮৩৫ ৭০.১
রাউজান ৭৫ ৪৪৫১ ১০৫৩৭ ১০৭৯৫ ৬০.৫
হলদিয়া ৪৪ ১১৬৪৮ ১০২১৪ ১১৪১৪ ৫০.৭

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ জগন্নাথ দেবালয় ও তোড়ন (ডাবুয়া), কৈলাসেশ্বর শিবমন্দির ও শিবমূর্তি (ডাবুয়া, উনিশ শতক), মহামুনি বৌদ্ধ মন্দির (পাহাড়তলী), চুলামনি বৌদ্ধ বিহার (লাঠিছড়ি), আবুরখীল বৌদ্ধ বিহার, আর্যমৈত্রেয় বৌদ্ধ বিহার (শায়িত মূর্তি), ঈশা খাঁর দিঘি (নোয়াজিশপুর), লস্কর উজিড়ের দিঘি (কদলপুর), নবীন চন্দ্র সেনের বাস্ত্তভিটা ও স্মৃতিসৌধ (গুজরা, নওয়াপাড়া), জগৎপুর আশ্রম।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের ১৩ এপ্রিল পাকবাহিনী উপজেলার পাহাড়তলী ইউনিয়নের ঊনসত্তরপাড়া গ্রামে ব্যাপক লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ চালায় এবং ৪৮ জন নিরীহ লোককে হত্যা করে। একই দিন রাউজানস্থ চট্টগ্রাম ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের (বর্তমানে চুয়েট) সামনে সম্মুখযুদ্ধে পাকবাহিনীর হাতে শহীদ হন সাইফুদ্দিন খালেদ চৌধুরী, অধ্যাপক দিলীপ কুমার চৌধুরী, শেখ মোজাফ্ফর আহমদ, আবদুর রব ও ইউনূস। উক্ত স্থানে শহীদদের স্মৃতি ফলক উন্মোচন করা হয়েছে। ১৩ এপ্রিল ১৯৭১ সালে কুন্ডেশ্বরী ঔষধালয়ের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ নূতন চন্দ্র সিংহকে তাঁর প্রতিষ্ঠানের সামনে পাকবাহিনী ও রাজাকাররা নৃশংসভাবে হত্যা করে। এছাড়াও রাউজান পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের জগৎমল্লাপাড়ার ৩৫ জনকে পাকবাহিনীরা নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করে। উপজেলার ৩টি স্থানে (ঊনসত্তরপাড়া, জগৎমল্লাপাড়া, গহিরা-শিলাপাড়া) বধ্যভূমির সন্ধান পাওয়া গেছে, এবং পৌরসভা চত্তরে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের নামফলকসহ ১টি স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপিত হয়েছে।

বিস্তারিত দেখুন রাউজান উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৯।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান  মসজিদ ৩৩৩, মন্দির ১১৮, তীর্থস্থান ১, মাযার ৫। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: হযরত ইয়াছিন শাহ মাযার, হযরত সেকান্দার শাহ মাযার, আকবর শাহ মাযার, হযরত আব্দুল আজিজ নকশবন্দী মাযার, কৈলাশেশ্বর শিব মন্দির, ডাবুয়া জগন্নাথ মন্দির, লাঠিছড়ি বৌদ্ধ মন্দির, মহামুনি বৌদ্ধ মন্দির, ডাবুয়া গীতা জ্ঞান মন্দির, সুলতানপুর কালীমন্দির।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৬২.৩%; পুরুষ ৬২.৮%, মহিলা ৬১.৯%। বিশ্ববিদ্যালয় ১, কলেজ ৯, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৫৯, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৬৮, কমিউনিটি স্কুল ৬, কেজি স্কুল ১১, মাদ্রাসা ২১, মক্তব ৩৫৫। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৬৮), রামগতি রামধন আব্দুল বারী চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৯৮), রাউজান আর আর এসি মডেল পাইলট হাইস্কুল (১৮৯৮), কোয়েপাড়া জগৎ চন্দ্র সেন কৃষি ও শিল্প উচ্চ বিদ্যালয়, মহামুনি এংলো-পালি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০২), নোয়াপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০৪), উত্তর গুজরা বিশ্বাস সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৮১১), কেউটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৮২০), কদলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৮৫০), রাউজান আর্যমৈত্রেয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৮৫১), উত্তরা নবতারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৮৬৮), রাউজান আর্যমৈত্রেয় ইনিস্টিটিউশন (১৯৩১), কাগতিয়া এশাতুল উলুম ফাজিল মাদ্রাসা (১৯৩২)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী  মাসিক: সুপ্রভাত রাউজান; বার্ষিক: কম্পাস, সন্তর্পণ, সম্ভাবা; অবলুপ্ত: মাসিক অঙ্গীকার, পাক্ষিক রাউজান, মাসিক শুকতারা, ত্রৈমাসিক আবির্ভাব, পাক্ষিক রাউজান বার্তা, লুম্বিনী, নব সমতট, কল্যাণ, বোধন, অগ্রসার বার্তা, বোধি।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ২, ক্লাব ১০৪, খেলার মাঠ ৫১, মহিলা সংগঠন ২৯।

দর্শনীয় স্থান মাস্টারদা সূর্যসেনের বাস্ত্তভিটা ও স্মৃতিসৌধ, মহামুনি মন্দির প্রাঙ্গণ, জগৎপুর আশ্রম, মহাকবি নবীনচন্দ্র সেনের বাস্ত্তভিটা ও স্মৃতিসৌধ।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ২১.০২%, অকৃষি শ্রমিক ৩.২৩%, শিল্প ০.৪০%, ব্যবসা ১৫.৭১%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৩.৩৯%, চাকরি ১৮.৮২%, নির্মাণ ১.১৫%, ধর্মীয় সেবা ০.৪৯%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ১২.৮৩% এবং অন্যান্য ২২.৯৬%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৪৬.৮৬%, ভূমিহীন ৫৩.১৪%। শহরে ৪৪.০৬% এবং গ্রামে ৪৭.৪০% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, আলু, আখ, মরিচ, চীনাবাদাম, শাকসবজি, সরিষা, তিল, ডাল।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি কাউন, তিসি, খেসারি।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, জাম, কাঁঠাল, পেঁপে, লিচু, কলা, নারিকেল, বাংগী, পেয়ারা, আমড়া, তাল।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ২৬৫২, গবাদিপশু ৩৫, হাঁস-মুরগি ৯৮, হ্যাচারি ৪, মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র ১।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৪৭ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৭৬ কিমি, কাঁচারাস্তা ৩৯১ কিমি; নৌপথ ১০ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরুর গাড়ি, ঘোড়ার গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র, রাবার উৎপাদন কেন্দ্র, ঔষধ তৈরির কারখানা।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, মৃৎশিল্প, লৌহশিল্প, বুনন শিল্প, কাঠের কাজ, বাঁশের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ২৬, মেলা ৮। ফকির হাট, আমীর হাট, জগন্নাথ হাট, কাগতিয়া হাট, গৌরী শঙ্কর হাট, নতুন চৌধুরী হাট, লাম্বুর হাট, রামগতির হাট, পিকে সেন হাট ও কালা চাঁদের হাট এবং চৈত্র সংক্রান্তি মেলা, মাঘী পূর্ণিমার মেলা, মহামুনি মেলা (পাহাড়তলী), বারুণী স্নান মেলা (রাউজান), রথের মেলা, গোবিন্দ ঠাকুরের মেলা (ইদিলপুর) ও মহাপরিনির্বাণ মেলা (রাউজান) উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য রাবার, ঔষধ।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৯০.৩% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯১.০%, ট্যাপ ৫.৫% এবং অন্যান্য ৩.৫%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৮৩.৯% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ১৪.৫% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। তবে ১.৬% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ৮, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ৩।

এনজিও ব্র্যাক, আশা, প্রশিকা।  [পার্থ প্রতীম ধর]

তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; রাউজান উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।