রব, সৈয়দ আবদুর: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
৪ নং লাইন: ৪ নং লাইন:
বিশ শতকের ত্রিশ এবং চল্লিশের দশকের শুরুর দিকে আবদুর রব গঠিত খাদেমুল এনছান সমিতি এবং এর দুটি মুখপাত্র মোয়াজ্জিন ও সার্ভেন্ট অব হিউম্যানিটি দেশব্যাপী গঠনমূলক কর্মকান্ডে যে অবদান রাখে সেজন্য তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে।
বিশ শতকের ত্রিশ এবং চল্লিশের দশকের শুরুর দিকে আবদুর রব গঠিত খাদেমুল এনছান সমিতি এবং এর দুটি মুখপাত্র মোয়াজ্জিন ও সার্ভেন্ট অব হিউম্যানিটি দেশব্যাপী গঠনমূলক কর্মকান্ডে যে অবদান রাখে সেজন্য তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে।


[[Image:RabbSyedAbdur.jpg|thumb|right|সৈয়দ আবদুর রব]]
সমাজসেবা ও সমাজ উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের নিরিখে ১৯২৮ সালে ফেব্রুয়ারিতে সৈয়দ আবদুর রব প্রতিষ্ঠিত খাদেমুল এনছান সমিতি আজকের দিনের এনজিও-সমূহের সমতূল্য বলা যায়। স্থানীয় জমিদার মোহাম্মদ ইউসুফ আলী ছিলেন এর সভাপতি। তবে সমিতির সম্পাদক হিসেবে রবই ছিলেন এর প্রাণপুরুষ ও প্রধান সংগঠক। এই সমিতির গঠণতন্ত্র অনুযায়ী এর উদ্দেশ্য ছিল: সমাজসেবা, শিক্ষার প্রসার, সামাজিক সুসম্পর্কের বিকাশ, সামাজিক অন্ধত্ব ও ধর্মীয় কুসংস্কার থেকে মুক্তি, হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতির বিকাশ এবং সামাজিক সংগঠনসমূহ শক্তিশালীকরণ। বাংলার বেশ কয়েকটি জেলায় এই সমিতির শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়। কাজের সমন্বয় ও যোগাযোগের সুবিধার্থে এর প্রধান কার্যালয় ১৯৩২ সালে কলকাতায় স্থানান্তর করা হয় এবং এর নতুন নাম দেওয়া হয় কেন্দ্রীয় খাদেমুল এনছান সমিতি।
সমাজসেবা ও সমাজ উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের নিরিখে ১৯২৮ সালে ফেব্রুয়ারিতে সৈয়দ আবদুর রব প্রতিষ্ঠিত খাদেমুল এনছান সমিতি আজকের দিনের এনজিও-সমূহের সমতূল্য বলা যায়। স্থানীয় জমিদার মোহাম্মদ ইউসুফ আলী ছিলেন এর সভাপতি। তবে সমিতির সম্পাদক হিসেবে রবই ছিলেন এর প্রাণপুরুষ ও প্রধান সংগঠক। এই সমিতির গঠণতন্ত্র অনুযায়ী এর উদ্দেশ্য ছিল: সমাজসেবা, শিক্ষার প্রসার, সামাজিক সুসম্পর্কের বিকাশ, সামাজিক অন্ধত্ব ও ধর্মীয় কুসংস্কার থেকে মুক্তি, হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতির বিকাশ এবং সামাজিক সংগঠনসমূহ শক্তিশালীকরণ। বাংলার বেশ কয়েকটি জেলায় এই সমিতির শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়। কাজের সমন্বয় ও যোগাযোগের সুবিধার্থে এর প্রধান কার্যালয় ১৯৩২ সালে কলকাতায় স্থানান্তর করা হয় এবং এর নতুন নাম দেওয়া হয় কেন্দ্রীয় খাদেমুল এনছান সমিতি।


কেন্দ্রীয় খাদেমুল এনছান সমিতির আদর্শ ও কর্মতৎপরতার সপক্ষে জনমত সৃষ্টির লক্ষ্যে আবদুর রব প্রথমে মোয়াজ্জিন (১৩৩৫ বাংলা) নামে একটি বাংলা ত্রৈমাসিক ও পরবর্তীকালে সার্ভেন্ট অব হিউম্যানিটি (১৯৩৫) নামে একটি ইংরেজি ত্রৈমাসিক পত্রিকা প্রকাশ করেন। বাংলার বিভিন্ন জেলায় খাদেমুল এনছান সমিতির যত শাখা ছিল আবদুর রব সেগুলির সবকটিতেই নিয়মিত পরিদর্শনে যেতেন এবং সমিতির উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে স্থানীয় জনগণকে সংগঠিত করতেন। সামাজিক কর্মকান্ডে সৈয়দ আবদুর রবের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলার সরকার ১৯৩৭ সালে তাঁকে ‘হিজ ম্যাজেস্টি দ্য কিং এম্পেরর’ পদকে সম্মানিত করেন।হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা এবং মানবতা ও সততার ভিত্তিতে সামাজিত সুসম্পর্ক দৃঢ়করণের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে রব যে কাজ করছিলেন তা ১৯৪৬-এর ১৬ আগস্ট কলকাতা দাঙ্গা শুরু হলে তার সকল সম্ভাবনা তিরোহিত হয়ে যায়।
কেন্দ্রীয় খাদেমুল এনছান সমিতির আদর্শ ও কর্মতৎপরতার সপক্ষে জনমত সৃষ্টির লক্ষ্যে আবদুর রব প্রথমে মোয়াজ্জিন (১৩৩৫ বাংলা) নামে একটি বাংলা ত্রৈমাসিক ও পরবর্তীকালে সার্ভেন্ট অব হিউম্যানিটি (১৯৩৫) নামে একটি ইংরেজি ত্রৈমাসিক পত্রিকা প্রকাশ করেন। বাংলার বিভিন্ন জেলায় খাদেমুল এনছান সমিতির যত শাখা ছিল আবদুর রব সেগুলির সবকটিতেই নিয়মিত পরিদর্শনে যেতেন এবং সমিতির উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে স্থানীয় জনগণকে সংগঠিত করতেন। সামাজিক কর্মকান্ডে সৈয়দ আবদুর রবের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলার সরকার ১৯৩৭ সালে তাঁকে ‘হিজ ম্যাজেস্টি দ্য কিং এম্পেরর’ পদকে সম্মানিত করেন।হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা এবং মানবতা ও সততার ভিত্তিতে সামাজিত সুসম্পর্ক দৃঢ়করণের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে রব যে কাজ করছিলেন তা ১৯৪৬-এর ১৬ আগস্ট কলকাতা দাঙ্গা শুরু হলে তার সকল সম্ভাবনা তিরোহিত হয়ে যায়।
[[Image:RabbSyedAbdur.jpg|thumb|right|সৈয়দ আবদুর রব]]


আবদুর রব নিজে আহত হন, কলেজ স্ট্রিটে তার অফিসও পুড়িয়ে দেওয়া হয়। সকল সম্পত্তি হারিয়ে এবং প্রধান রাজনৈতিক দলগুলি সাম্প্রদায়িক নীতিতে বীতশ্রদ্ধ হয়ে সৈয়দ আবদুর রব সক্রিয় জীবন থেকে অবসর গ্রহণ করেন। ১৯৪৭-এর দেশভাগের পর তিনি স্বগ্রামে ফিরে আসেন। আদর্শ অর্জনের এই ব্যর্থতার সঙ্গে যোগ হয় তার আর্থিক দৈন্যদশা। ১৯৫৪ সালে নদীভাঙ্গনে তিনি সমস্ত জমিজমা হারিয়ে একেবারে নিঃস্ব হয়ে পড়েন। সৈয়দ আবদুর রব ১৯৬৯ সালের ২১ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন।  [মুহাম্মদ শাহীনূল কবীর]
আবদুর রব নিজে আহত হন, কলেজ স্ট্রিটে তার অফিসও পুড়িয়ে দেওয়া হয়। সকল সম্পত্তি হারিয়ে এবং প্রধান রাজনৈতিক দলগুলি সাম্প্রদায়িক নীতিতে বীতশ্রদ্ধ হয়ে সৈয়দ আবদুর রব সক্রিয় জীবন থেকে অবসর গ্রহণ করেন। ১৯৪৭-এর দেশভাগের পর তিনি স্বগ্রামে ফিরে আসেন। আদর্শ অর্জনের এই ব্যর্থতার সঙ্গে যোগ হয় তার আর্থিক দৈন্যদশা। ১৯৫৪ সালে নদীভাঙ্গনে তিনি সমস্ত জমিজমা হারিয়ে একেবারে নিঃস্ব হয়ে পড়েন। সৈয়দ আবদুর রব ১৯৬৯ সালের ২১ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন।  [মুহাম্মদ শাহীনূল কবীর]

০৫:২৯, ৮ মার্চ ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

রব, সৈয়দ আবদুর (১৯০৩-১৯৬৯)  সমাজকর্মী, সংস্কারক, সাংবাদিক। তিনি ফরিদপুর জেলার গেরদা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। খুব অল্প বয়স থেকেই তিনি সমাজ উন্নয়ন, মুসলিম পুনর্জাগরণ ও হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতির কাজে আত্মনিয়োগ করেন।

বিশ শতকের ত্রিশ এবং চল্লিশের দশকের শুরুর দিকে আবদুর রব গঠিত খাদেমুল এনছান সমিতি এবং এর দুটি মুখপাত্র মোয়াজ্জিন ও সার্ভেন্ট অব হিউম্যানিটি দেশব্যাপী গঠনমূলক কর্মকান্ডে যে অবদান রাখে সেজন্য তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে।

সৈয়দ আবদুর রব

সমাজসেবা ও সমাজ উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের নিরিখে ১৯২৮ সালে ফেব্রুয়ারিতে সৈয়দ আবদুর রব প্রতিষ্ঠিত খাদেমুল এনছান সমিতি আজকের দিনের এনজিও-সমূহের সমতূল্য বলা যায়। স্থানীয় জমিদার মোহাম্মদ ইউসুফ আলী ছিলেন এর সভাপতি। তবে সমিতির সম্পাদক হিসেবে রবই ছিলেন এর প্রাণপুরুষ ও প্রধান সংগঠক। এই সমিতির গঠণতন্ত্র অনুযায়ী এর উদ্দেশ্য ছিল: সমাজসেবা, শিক্ষার প্রসার, সামাজিক সুসম্পর্কের বিকাশ, সামাজিক অন্ধত্ব ও ধর্মীয় কুসংস্কার থেকে মুক্তি, হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতির বিকাশ এবং সামাজিক সংগঠনসমূহ শক্তিশালীকরণ। বাংলার বেশ কয়েকটি জেলায় এই সমিতির শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়। কাজের সমন্বয় ও যোগাযোগের সুবিধার্থে এর প্রধান কার্যালয় ১৯৩২ সালে কলকাতায় স্থানান্তর করা হয় এবং এর নতুন নাম দেওয়া হয় কেন্দ্রীয় খাদেমুল এনছান সমিতি।

কেন্দ্রীয় খাদেমুল এনছান সমিতির আদর্শ ও কর্মতৎপরতার সপক্ষে জনমত সৃষ্টির লক্ষ্যে আবদুর রব প্রথমে মোয়াজ্জিন (১৩৩৫ বাংলা) নামে একটি বাংলা ত্রৈমাসিক ও পরবর্তীকালে সার্ভেন্ট অব হিউম্যানিটি (১৯৩৫) নামে একটি ইংরেজি ত্রৈমাসিক পত্রিকা প্রকাশ করেন। বাংলার বিভিন্ন জেলায় খাদেমুল এনছান সমিতির যত শাখা ছিল আবদুর রব সেগুলির সবকটিতেই নিয়মিত পরিদর্শনে যেতেন এবং সমিতির উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে স্থানীয় জনগণকে সংগঠিত করতেন। সামাজিক কর্মকান্ডে সৈয়দ আবদুর রবের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলার সরকার ১৯৩৭ সালে তাঁকে ‘হিজ ম্যাজেস্টি দ্য কিং এম্পেরর’ পদকে সম্মানিত করেন।হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা এবং মানবতা ও সততার ভিত্তিতে সামাজিত সুসম্পর্ক দৃঢ়করণের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে রব যে কাজ করছিলেন তা ১৯৪৬-এর ১৬ আগস্ট কলকাতা দাঙ্গা শুরু হলে তার সকল সম্ভাবনা তিরোহিত হয়ে যায়।

আবদুর রব নিজে আহত হন, কলেজ স্ট্রিটে তার অফিসও পুড়িয়ে দেওয়া হয়। সকল সম্পত্তি হারিয়ে এবং প্রধান রাজনৈতিক দলগুলি সাম্প্রদায়িক নীতিতে বীতশ্রদ্ধ হয়ে সৈয়দ আবদুর রব সক্রিয় জীবন থেকে অবসর গ্রহণ করেন। ১৯৪৭-এর দেশভাগের পর তিনি স্বগ্রামে ফিরে আসেন। আদর্শ অর্জনের এই ব্যর্থতার সঙ্গে যোগ হয় তার আর্থিক দৈন্যদশা। ১৯৫৪ সালে নদীভাঙ্গনে তিনি সমস্ত জমিজমা হারিয়ে একেবারে নিঃস্ব হয়ে পড়েন। সৈয়দ আবদুর রব ১৯৬৯ সালের ২১ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন।  [মুহাম্মদ শাহীনূল কবীর]