রথযাত্রা: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
'''রথযাত্রা''' হিন্দুদের''' '''অন্যতম প্রধান''' '''ধর্মীয় উৎসব। এতে রথের ওপর দেবতাদের মূর্তি স্থাপন করে রথ চালানো হয়। বিভিন্ন পুরাণে বিভিন্ন দেবদেবীর রথযাত্রার উল্লেখ আছে, যেমন: ভবিষ্যপুরাণে সূর্যদেবের রথযাত্রা, দেবীপুরাণে মহাদেবীর রথযাত্রা, পদ্মপুরাণ, স্কন্দপুরাণ ও ভবিষ্যোত্তরপুরাণে বিষ্ণুর রথাযাত্রা বর্ণিত হয়েছে। বিভিন্ন দেবদেবীর রথযাত্রার সময়কালও বিভিন্ন; কোথাও বৈশাখ মাসে, কোথাও আষাঢ় মাসে, আবার কোথাও কার্তিক মাসে রথযাত্রার অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। বর্তমানে উড়িষ্যার পুরীধামে অনুষ্ঠেয় জগন্নাথদেবের রথযাত্রাই প্রচলিত। এর অনুষ্ঠান হয় আষাঢ় মাসের শুক্লা দ্বিতীয়া তিথিতে, আর একাদশী তিথিতে হয় প্রত্যাবর্তন বা ফিরতি রথ। অর্থাৎ রথটি প্রথম দিন যেখান থেকে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়, আটদিন পরে আবার সেখানেই এনে রাখা হয়। একেই বলে উল্টা রথ।
'''রথযাত্রা''' হিন্দুদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব। এতে রথের ওপর দেবতাদের মূর্তি স্থাপন করে রথ চালানো হয়। বিভিন্ন পুরাণে বিভিন্ন দেবদেবীর রথযাত্রার উল্লেখ আছে, যেমন: ভবিষ্যপুরাণে সূর্যদেবের রথযাত্রা, দেবীপুরাণে মহাদেবীর রথযাত্রা, পদ্মপুরাণ, স্কন্দপুরাণ ও ভবিষ্যোত্তরপুরাণে বিষ্ণুর রথাযাত্রা বর্ণিত হয়েছে। বিভিন্ন দেবদেবীর রথযাত্রার সময়কালও বিভিন্ন; কোথাও বৈশাখ মাসে, কোথাও আষাঢ় মাসে, আবার কোথাও কার্তিক মাসে রথযাত্রার অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। বর্তমানে উড়িষ্যার পুরীধামে অনুষ্ঠেয় জগন্নাথদেবের রথযাত্রাই প্রচলিত। এর অনুষ্ঠান হয় আষাঢ় মাসের শুক্লা দ্বিতীয়া তিথিতে, আর একাদশী তিথিতে হয় প্রত্যাবর্তন বা ফিরতি রথ। অর্থাৎ রথটি প্রথম দিন যেখান থেকে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়, আটদিন পরে আবার সেখানেই এনে রাখা হয়। একেই বলে উল্টা রথ।


[[Image:Rathyatra%20copy.jpg|thumb|right|400px|রথযাত্রা]]
জগতের নাথ বা অধীশ্বর যিনি তিনি-ই  [[জগন্নাথ|জগন্নাথ]]। জগন্নাথদেবের অনুগ্রহ পেলে মানুষের মুক্তিলাভ হয় বলে ভক্তদের বিশ্বাস। শাস্ত্রে আছে: ‘রথে চ বামনং দৃষ্ট্বা পুনর্জন্ম ন বিদ্যতে’, অর্থাৎ রথোপরি বামন বা জগন্নাথকে দেখতে পেলে জীবের আর পুনর্জন্ম হয় না। তাই মুক্তিকামী মানুষ তাঁর কৃপা প্রার্থনা করেই রথযাত্রার অনুষ্ঠান পালন করে থাকে। জগন্নাথদেবের রথযাত্রার প্রধান কেন্দ্র উড়িষ্যার সমুদ্রতীরবর্তী পুরীধাম। সেখানকার রথযাত্রার অনুসরণেই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে জগন্নাথদেবের রথযাত্রা উৎসব পালিত হয়ে থাকে।''' '''
জগতের নাথ বা অধীশ্বর যিনি তিনি-ই  [[জগন্নাথ|জগন্নাথ]]। জগন্নাথদেবের অনুগ্রহ পেলে মানুষের মুক্তিলাভ হয় বলে ভক্তদের বিশ্বাস। শাস্ত্রে আছে: ‘রথে চ বামনং দৃষ্ট্বা পুনর্জন্ম ন বিদ্যতে’, অর্থাৎ রথোপরি বামন বা জগন্নাথকে দেখতে পেলে জীবের আর পুনর্জন্ম হয় না। তাই মুক্তিকামী মানুষ তাঁর কৃপা প্রার্থনা করেই রথযাত্রার অনুষ্ঠান পালন করে থাকে। জগন্নাথদেবের রথযাত্রার প্রধান কেন্দ্র উড়িষ্যার সমুদ্রতীরবর্তী পুরীধাম। সেখানকার রথযাত্রার অনুসরণেই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে জগন্নাথদেবের রথযাত্রা উৎসব পালিত হয়ে থাকে।''' '''


বাংলাদেশে বহুকাল আগে থেকেই রথযাত্রার অনুষ্ঠান ও মেলা হয়ে আসছে। ঢাকা, ধামরাই, খুলনা, বরিশাল, গোপালগঞ্জ, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহ, রংপুর প্রভৃতি স্থানে আজও রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকার জগন্নাথদেবের রথযাত্রার ঐতিহ্য বেশ প্রাচীন। পুরানো ঢাকায় প্রতিবছর জাঁকজমকের সঙ্গে রথযাত্রার মিছিল ও মেলা অনুষ্ঠিত হয়। ধামরাই অঞ্চলে যশোমাধবের রথযাত্রাও খুব প্রসিদ্ধ।উল্লেখ্য যে, যশোমাধবের মন্দিরে উনিশ শতকের মধ্যবর্তী সময়ে সাটুরিয়া বালিয়াটির জমিদাররা ৬০ ফুট উঁচু যে রথ নির্মাণ করে দিয়েছিলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকবাহিনী তা পুড়িয়ে দেয়।#
বাংলাদেশে বহুকাল আগে থেকেই রথযাত্রার অনুষ্ঠান ও মেলা হয়ে আসছে। ঢাকা, ধামরাই, খুলনা, বরিশাল, গোপালগঞ্জ, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহ, রংপুর প্রভৃতি স্থানে আজও রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকার জগন্নাথদেবের রথযাত্রার ঐতিহ্য বেশ প্রাচীন। পুরানো ঢাকায় প্রতিবছর জাঁকজমকের সঙ্গে রথযাত্রার মিছিল ও মেলা অনুষ্ঠিত হয়। ধামরাই অঞ্চলে যশোমাধবের রথযাত্রাও খুব প্রসিদ্ধ।উল্লেখ্য যে, যশোমাধবের মন্দিরে উনিশ শতকের মধ্যবর্তী সময়ে সাটুরিয়া বালিয়াটির জমিদাররা ৬০ ফুট উঁচু যে রথ নির্মাণ করে দিয়েছিলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকবাহিনী তা পুড়িয়ে দেয়।
 
[[Image:Rathyatra%20copy.jpg|thumb|right|রথযাত্রা দৃশ্য]]


ত্রিতলবিশিষ্ট উক্ত রথটি টানতে ২৭ মন শনের দড়ি ব্যবহূত হতো। রথযাত্রা উপলক্ষে সেখানে মাসব্যাপী মেলা হতো। সমগ্র দেশ, এমনকি ভারত-নেপাল থেকেও ভক্তদের সমাগম হতো রথের দড়ি টানার জন্য। বর্তমানে নতুন নির্মিত রথ টেনে এ অনুষ্ঠান পালন করা হয়।
ত্রিতলবিশিষ্ট উক্ত রথটি টানতে ২৭ মন শনের দড়ি ব্যবহূত হতো। রথযাত্রা উপলক্ষে সেখানে মাসব্যাপী মেলা হতো। সমগ্র দেশ, এমনকি ভারত-নেপাল থেকেও ভক্তদের সমাগম হতো রথের দড়ি টানার জন্য। বর্তমানে নতুন নির্মিত রথ টেনে এ অনুষ্ঠান পালন করা হয়।

০৫:২১, ৮ মার্চ ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

রথযাত্রা হিন্দুদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব। এতে রথের ওপর দেবতাদের মূর্তি স্থাপন করে রথ চালানো হয়। বিভিন্ন পুরাণে বিভিন্ন দেবদেবীর রথযাত্রার উল্লেখ আছে, যেমন: ভবিষ্যপুরাণে সূর্যদেবের রথযাত্রা, দেবীপুরাণে মহাদেবীর রথযাত্রা, পদ্মপুরাণ, স্কন্দপুরাণ ও ভবিষ্যোত্তরপুরাণে বিষ্ণুর রথাযাত্রা বর্ণিত হয়েছে। বিভিন্ন দেবদেবীর রথযাত্রার সময়কালও বিভিন্ন; কোথাও বৈশাখ মাসে, কোথাও আষাঢ় মাসে, আবার কোথাও কার্তিক মাসে রথযাত্রার অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। বর্তমানে উড়িষ্যার পুরীধামে অনুষ্ঠেয় জগন্নাথদেবের রথযাত্রাই প্রচলিত। এর অনুষ্ঠান হয় আষাঢ় মাসের শুক্লা দ্বিতীয়া তিথিতে, আর একাদশী তিথিতে হয় প্রত্যাবর্তন বা ফিরতি রথ। অর্থাৎ রথটি প্রথম দিন যেখান থেকে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়, আটদিন পরে আবার সেখানেই এনে রাখা হয়। একেই বলে উল্টা রথ।

রথযাত্রা

জগতের নাথ বা অধীশ্বর যিনি তিনি-ই  জগন্নাথ। জগন্নাথদেবের অনুগ্রহ পেলে মানুষের মুক্তিলাভ হয় বলে ভক্তদের বিশ্বাস। শাস্ত্রে আছে: ‘রথে চ বামনং দৃষ্ট্বা পুনর্জন্ম ন বিদ্যতে’, অর্থাৎ রথোপরি বামন বা জগন্নাথকে দেখতে পেলে জীবের আর পুনর্জন্ম হয় না। তাই মুক্তিকামী মানুষ তাঁর কৃপা প্রার্থনা করেই রথযাত্রার অনুষ্ঠান পালন করে থাকে। জগন্নাথদেবের রথযাত্রার প্রধান কেন্দ্র উড়িষ্যার সমুদ্রতীরবর্তী পুরীধাম। সেখানকার রথযাত্রার অনুসরণেই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে জগন্নাথদেবের রথযাত্রা উৎসব পালিত হয়ে থাকে।

বাংলাদেশে বহুকাল আগে থেকেই রথযাত্রার অনুষ্ঠান ও মেলা হয়ে আসছে। ঢাকা, ধামরাই, খুলনা, বরিশাল, গোপালগঞ্জ, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহ, রংপুর প্রভৃতি স্থানে আজও রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকার জগন্নাথদেবের রথযাত্রার ঐতিহ্য বেশ প্রাচীন। পুরানো ঢাকায় প্রতিবছর জাঁকজমকের সঙ্গে রথযাত্রার মিছিল ও মেলা অনুষ্ঠিত হয়। ধামরাই অঞ্চলে যশোমাধবের রথযাত্রাও খুব প্রসিদ্ধ।উল্লেখ্য যে, যশোমাধবের মন্দিরে উনিশ শতকের মধ্যবর্তী সময়ে সাটুরিয়া বালিয়াটির জমিদাররা ৬০ ফুট উঁচু যে রথ নির্মাণ করে দিয়েছিলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকবাহিনী তা পুড়িয়ে দেয়।

ত্রিতলবিশিষ্ট উক্ত রথটি টানতে ২৭ মন শনের দড়ি ব্যবহূত হতো। রথযাত্রা উপলক্ষে সেখানে মাসব্যাপী মেলা হতো। সমগ্র দেশ, এমনকি ভারত-নেপাল থেকেও ভক্তদের সমাগম হতো রথের দড়ি টানার জন্য। বর্তমানে নতুন নির্মিত রথ টেনে এ অনুষ্ঠান পালন করা হয়।

বাংলাদেশে আরও কয়েকটি বিখ্যাত রথযাত্রা হচ্ছে: গাজীপুরের মাণিক্য সাধকের রথযাত্রা, কিশোরগঞ্জের ভোগবেতালের রথযাত্রা, কুমিল্লার মহারাজ বাহাদুরের রথযাত্রা, যশোরের বারৈখালি ও বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের রথযাত্রা, রংপুরের আদিতমারী কামারপাড়ার রথযাত্রা এবং চট্টগ্রামের তুলসীধামের রথযাত্রা। এসব স্থানে রথযাত্রার সময় যে মেলা ও পূজা অনুষ্ঠিত হয়, তাতে বিশাল জনসমাগম ঘটে।

রথযাত্রা উপলক্ষে হিন্দুদের মধ্যে দুটি সংস্কার প্রচলিত আছে। তাদের বিশ্বাস, এদিন কলাগাছ রোপণ করলে তাতে বেশি কলা ধরে এবং দিনের পূর্বভাগে মেঘ ডাকলে অগ্রিম বর্ষা হয়, আর পরভাগে ডাকলে বর্ষার আগমন বিলম্বিত হয়।  [পরেশচন্দ্র মন্ডল]