মোহাম্মদপুর উপজেলা

মোহাম্মদপুর উপজেলা (মাগুরা জেলা)  আয়তন: ২৩৩.৭০ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৩°১৭´ থেকে ২৩°৩১´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°২৯´ থেকে ৮৯°৪২´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে মধুখালী উপজেলা, দক্ষিণে লোহাগড়া উপজেলা, পূর্বে বোয়ালমারী ও আলফাডাঙ্গা উপজেলা, পশ্চিমে মাগুরা সদর, শালিখা ও মধুখালী উপজেলা।

জনসংখ্যা ২০৭৯০৫; পুরুষ ১০২০৯৯, মহিলা ১০৫৮০৬। মুসলিম ১৮৬৬৭২, হিন্দু ২১১৪২, খ্রিস্টান ৬ এবং অন্যান্য ৮৫।

জলাশয় গড়াই-মধুমতি, নবগঙ্গা ও নির্বিষখালী নদী এবং ওয়াপাড়া ও তিতাদহ বিল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন মোহাম্মদপুর থানা গঠিত হয় ১৯২৪ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
- ১৩১ ১৮৮ ১০০১০ ১৯৭৮৯৫ ৮৯০ ৫৫.৭ ৪৭.৩
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৬.৩০ ১০০১০ ১৫৮৯ ৫৫.৭
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
দিঘা ৪২ ৫৩৯৮ ১০৩৪৮ ১০৬৫৯ ৪৯.২
নহাটা ৬৩ ৮৮২২ ১৩৮৭২ ১৪৪৪৭ ৪৬.৭
পলাশবাড়িয়া ৭৩ ৮৩০৬ ১৩৩৬২ ১৪৩৮৩ ৪৯.৬
বাবুখালী ১০ ৮৪৮২ ১২৮৪৭ ১২৯০৪ ৪৬.৭
বালিদিয়া ২১ ৭৪৪৭ ১৪০৩২ ১৪৮০৫ ৪৭.৯
বিনোদপুর ৩১ ৭২৬২ ১৫৩১১ ১৫৫৫৮ ৪৫.৮
মোহাম্মদপুর ৫২ ৬১৫৮ ১৩৫১৪ ১৩৯১৯ ৫০.৮
রাজাপুর ৮৪ ৫৮৭৪ ৮৮১৩ ৯১৩১ ৪৪.৮

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ দশভুজার কালীমন্দির (১৬৯৯), লক্ষ্মী নারায়ণ মন্দির (নারায়ণপুর, ১৭০৪), রাজা সীতারাম রায়ের প্রাসাদ ও সংলগ্ন স্থাপনা, নীলকুঠি।

ঐতিহাসিক ঘটনাবলি  মুগল সম্রাট জাহাঙ্গীরের শাসনামলে সীতারাম রায় এই অঞ্চলের জমিদার ছিলেন। তিনি সম্রাটকে কর দেওয়া বন্ধ করে নিজেকে স্বাধীন রাজা বলে ঘোষণা করেন। স্থানীয় মুসলিম ফকির মোহাম্মদ শাহের নামানুসারে পুরাতন নাম বাগজানের পরিবর্তে রাজধানীর নাম রাখেন মোহাম্মদপুর।

মুক্তিযুদ্ধ মোহাম্মদপুর উপজেলার নহাটা, বিনোদপুর, জয়রামপুর ও মোহাম্মদপুর সদরে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ হয়। ২১ আগস্ট নহাটায় সংঘটিত যুদ্ধে পাকবাহিনীর একজন মেজর ও একজন ক্যাপ্টেনসহ প্রায় এক কোম্পানি সৈন্য নিহত হয়। বিনোদপুরের যুদ্ধে ৬ জন রাজাকার নিহত হয়।

বিস্তারিত দেখুন মহম্মদপুর উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৭।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ২৯১, মন্দির ৫০।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪৭.৭%; পুরুষ ৪৯.২%, মহিলা ৪৬.৩%। কলেজ ৬, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২৯, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৬০, কমিউনিটি স্কুল ১২৪, ব্র্যক স্কুল ১২৪, স্যাটেলাইট স্কুল ১৬, মাদ্রাসা ৪২। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: বিনোদপুর বসন্ত কুমার বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯০৪), নহাটা রাণী পতিত পাবনী মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯২৪), ধূলজোড়া চুড়ার গাতী প্রতাপচন্দ্র মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯২৭), বড়রিয়া এ ডব্লিউ সিনিয়র মাদ্রাসা (১৯০৭), নহাটা এ.জি ফাজিল মাদ্রাসা (১৯২১)।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ১, ক্লাব ৩২।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৬৮.৪৬%, অকৃষি শ্রমিক ২.৬০%, শিল্প ১.০২%, ব্যবসা ১০.৯৩%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৩.১০%, চাকরি ৮.১৫%, নির্মাণ ১.০৭%, ধর্মীয় সেবা ০.১৭%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.৩১% এবং অন্যান্য ৪.১৯%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৬৫.৪৯%, ভূমিহীন ৩৪.৫১%। শহরে ৫৪.৯৭% এবং গ্রামে ৬৬.০৩% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, পাট, গম, পিঁয়াজ, রসুন।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি অড়হর, তিসি, যব, নীল।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, কলা, তাল, নারিকেল।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ৮৯০, গবাদিপশু ৪৬, হাঁস-মুরগি ৪২।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১৬৬ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৫৭ কিমি, কাঁচারাস্তা ৪২৫ কিমি; নৌপথ ৩০ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পালকি, গরুর গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা ধানকল, বরফকল, ওয়েল্ডিং কারখানা।

কুটিরশিল্প লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, তাঁতশিল্প, বাঁশের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৪০, মেলা ২। মোহাম্মদপুর হাট, বিনোদপুর হাট, শিরগ্রাম হাট, বাবুখালী হাট, বালিদিয়া হাট, নহাটা হাট ও পলাশবাড়িয়া হাট এবং বেরলি মেলা ও মোহাম্মদপুর দুর্গাপূজার মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য ধান, পাট, পিঁয়াজ, রসুন।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবকটি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৩৫.০% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয় জলের উৎস নলকূপ ৯৭.০%, ট্যাপ ০.৩% এবং অন্যান্য ২.৭%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৮০.৫% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ১৬.৭% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। তবে ২.৮% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ৪, পশু হাসপাতাল ১।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৯০৯, ১৯৬১ ও ১৯৬৩ সালের ঝড় এবং ১৯৭১ সালের বন্যায় এ উপজেলার ঘরবাড়ি ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়।

এনজিও ব্র্যাক, আশা।  [মো. মহেববুল্লাহ]

তথ্যসূত্র  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; মোহাম্মদপুর উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।