মেট্রোপলিটান পুলিশ

মেট্রোপলিটান পুলিশ  রাজধানী  ঢাকা ও  অন্যান্য  মেট্রোপলিটান নগরীর জন্য গঠিত একটি বিশেষ পুলিশ বাহিনী। ইতোপূর্বে  ১৮৫৬ সালে মেট্রোপলিটন পুলিশ সম্পর্কিত ধারণা  প্রথম পাওয়া যায়। ঐ বছর ভারতীয়  নগর কলকাতা, মাদ্রাজ (চেন্নাই) ও বোম্বাই (মুম্বাই)-এর জন্য একটি আইন দ্বারা আলাদা পুলিশ বাহিনী  গঠন করা হয়। উল্লেখ্য, সে সময় শুধুমাত্র  প্রেসিডেন্সী শহরগুলোর জন্য  আলাদা পুলিশ  বাহিনী  গঠন করা হয়েছিল। ১৮৬১ সালে সর্বভারতীয় পর্যায়ে পুলিশ বাহিনীর গঠন, দায়িত্ব ও প্রশাসন বিষয়ক  পুলিশ অ্যাক্ট কার্যকর করা হয়।

১৯৭৬ সালের ২০ জানুয়ারি বাংলাদেশে একটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে ঢাকা মেট্রোপলিটান এলাকার জন্য একটি আলাদা পুলিশ বাহিনী গঠন করা হয়। ঢাকার জন্য আলাদা পুলিশবাহিনী গঠনের বেশ কিছু তাৎপর্য রয়েছে: (ক)  ১৮৬১ সালের  পুলিশ অ্যাক্ট  ঢাকা মেট্রোপলিটান এলাকায় প্রয়োগ করা হয়নি, (খ) বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের আওতা সীমিত করা হয়, (গ) মেট্রোপলিটান পুলিশের  তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব থাকে সরকারের উপর এবং পুলিশ বাহিনীর প্রশাসন কমিশনারের হাতে ন্যস্ত করা হয়। একই পদ্ধতিতে চট্টগ্রাম (১৯৭৮), খুলনা (১৯৮৪) এবং রাজশাহীতে (১৯৯২) আলাদা মেট্রোপলিটান পুলিশ প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯৭৬-সালে জারিকৃত অধ্যাদেশের বিশেষ দুর্বল দিকটি হলো জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের আওতা সীমিতকরণ। ঢাকা মেট্রোপলিটান এলাকায় আলাদা মেট্রোপলিটান ম্যাজিস্ট্রেসি স্থাপন না করে ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা সীমিত করা সম্ভব ছিল না। কাজেই ১৯৭৬ সালে  ফৌজদারি কার্যবিধি সংশোধন  করা হয়। এ সংশোধনীতে মুখ্য মেট্রোপলিটান ম্যাজিস্ট্রেটের অধীনে একটি আলাদা ম্যাজিস্ট্রেসি স্থাপন এবং একে সহায়তা করার জন্য মেট্রোপলিটান ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের ব্যবস্থা করা হয়।

১৯৯৯ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে  ঢাকায় ২১টি, চট্টগ্রামে  ৬টি, খুলনায়  ৫টি এবং রাজশাহীতে  ৪টি থানা মেট্রোপলিটান পুলিশের আওতাধীন ছিল। এসময়ে বাংলাদেশে নিয়োজিত মেট্রোপলিটন পুলিশের সদস্য-সংখ্যা ছিল: ঢাকায় ১৭,৮১০; চট্টগ্রামে ৪১৪১; খুলনায় ২১৪২; রাজশাহীতে ৯৬২।

মেট্রোপলিটান পুলিশ বাহিনীতে দুই পর্যায়ের কর্মকর্তা রয়েছেন। প্রথম পর্যায়ে রয়েছে পুলিশ কমিশনার, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার, উপ-পুলিশ কমিশনার, এবং সহকারি পুলিশ কমিশনারগণ। পুলিশ মহাপরিদর্শকের নিয়ন্ত্রণ সাপেক্ষে পুলিশ কমিশনার তার ক্ষমতা প্রয়োগ করে থাকেন। দ্বিতীয় পর্যায়ে রয়েছে অধস্তন অফিসার যথা পরিদর্শক, উপ-পরিদর্শক, সার্জেন্ট, সহকারি উপ-পরিদর্শক, প্রধান কনস্টেবল এবং কনস্টেবল। পুলিশ কমিশনার কর্তৃক পরিদর্শক নিয়োগ প্রাপ্ত হন। পুলিশ কমিশনারের লিখিত প্রাধিকার বলে উপ-পুলিশ কমিশনার পরিদর্শকের নিচের পদসমূহে নিয়োগ দিতে পারেন।

মেট্রোপলিটন পুলিশে অথবা মেট্টোপলিটন পুলিশ থেকে অন্যত্র  বাহিনীর যেকোন  সদস্য  বদলি হতে পারে। এধরনের বদলি সরকার  বা পুলিশের মহাপরিদর্শক কর্তৃক হয়ে থাকে। তবে কর্মকর্তাদের পদ ও মর্যাদার উপর তা নির্ভর করে। পুলিশ অ্যাক্টের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ নয় এমন বিস্তৃত নিয়মবিধি প্রণয়নের ক্ষমতা পুলিশ কমিশনারকে প্রদান করা হয়েছে। এর উদ্দেশ্য হলো জনজীবনে শৃংখলা বজায় রাখা এবং শান্তিপূর্ণ বসবাসে বিঘ্ন সৃষ্টিকারী প্রতিবন্ধকতা বা অন্যান্য অপরাধ সমূহ প্রতিরোধ করা। কিছু নির্দিষ্ট কার্যকলাপ নিষিদ্ধ করার ক্ষমতার মধ্যে রয়েছে: (ক) অস্ত্র ও বিস্ফোরক বহন, (খ) জনজীবন বিঘ্ন সৃষ্টিকারী  চিৎকার, উচ্চস্বরে সঙ্গীত  বা বাদ্য পরিবেশন এবং (গ) সমাবেশ ও মিছিল। পূর্বে একজন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট  বিশেষ আইনের অধীনে যেসব ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারতেন তা পুলিশ কমিশনারদের এক্তিয়ারে দেয়া হয়েছে। এধরনের গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণের একটি  হলো জন নিরাপত্তার স্বার্থে  অবৈধ সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করার উদ্দেশ্যে সামরিক বাহিনী ব্যবহারের ক্ষমতা।

আইনের বিধান লংঙ্ঘন করার ক্ষেত্রে মেট্রোপলিটন পুলিশ আইনে দন্ডের বিধান রয়েছে। এসকল বিধানের কয়েকটি হলো পুলিশ  বাহিনীর সদস্যদের দ্বারা ক্ষমতার অপব্যবহার সম্পর্কিত। বাহিনীর সদস্যদের দ্বারা কোন  নিয়ম লঙ্ঘন হলে তার  জন্য পুলিশ আইনে নির্দিষ্ট শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে। নিয়ম লঙ্ঘনের মধ্যে রয়েছে পুলিশের অবৈধ প্রবেশ এবং তল্লাশী, হয়রানিমূলক তল্লাশী ও আটক করা, ব্যক্তিগত সহিংসতা, হুমকি এবং গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে মেট্রোপলিটন কোর্টে চালান দেওয়ার ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় বিলম্ব। ১৮৬১ সালের পুলিশ অ্যাক্টের এবং মেট্রোপলিটন  পুলিশ অর্ডিন্যান্সের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। পুলিশ বাহিনীর নেতৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণ এবং ম্যাজিস্ট্রেটের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে এ পার্থক্য বিরাজমান। ১৮৬১ সালের  পুলিশ আইনে পুলিশ বাহিনীর উপর বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নিয়ন্ত্রণের বিধান রয়েছে। এ সম্পর্কটি বাংলাদেশ পুলিশ রেগুলেশন, ১৯৪৩-এ বিস্তারিতভাবে সংজ্ঞায়িত  আছে যা বাংলাদেশে গ্রহণ করা হয়েছে। মেট্রোপলিটন পুলিশ বাহিনী এধরণের  ম্যাজিস্ট্রেটীয় নিয়ন্ত্রণের আওতায় থাকে না। মেট্রোপলিটন  এলাকায় মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটগণ জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের পরিবর্তে মুখ্য মেট্রোপলিটন  ম্যাজিস্ট্রেটের  অধীনস্থ থাকেন।  [এ.এম.এম শওকত আলী]