মৃত্তিকা পুষ্টি উপাদান

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২২:৪৭, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)

মৃত্তিকা পুষ্টি উপাদান (Soil Nutrient)  জীবন্ত জীবের বৃদ্ধির জন্য কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহূত রাসায়নিক মৌল বা যৌগ, যেমন-কার্বন, অক্সিজেন, ফসফেট ইত্যাদি। মৃত্তিকা থেকে গাছ যেসব পুষ্টি উপাদান গ্রহণ করে, শস্য উৎপাদনে ভূমিকা অনুসারে সেসবের এরূপ শ্রেণীবিন্যাস করা হয়: প্রাথমিক অপরিহার্য মৌল-নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশিয়াম; সেকেন্ডারি মৌল-ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, সালফার; অণুপুষ্টি উপাদান- আয়রন, ম্যাঙ্গানিজ, জিঙ্ক, কপার, বোরন, মলিবডেনাম, কোবাল্ট, ক্লোরিন। গাছের পুষ্টি উপাদান সরবরাহে বাংলাদেশের মৃত্তিকা গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য প্রদর্শন করে। অসমসত্ত্ব প্রকৃতির উৎসবস্ত্ত এবং মৃত্তিকা জৈবপদার্থের পরিমাণে ভিন্নতাই এর কারণ। মৃত্তিকাতে জৈবপদার্থের পরিমাণ কম হওয়ার কারণে বাংলাদেশের অধিকাংশ মৃত্তিকাতেই নাইট্রোজেনের অভাব দেখা যায়। চরম অম্লীয় ও চুনযুক্ত মৃত্তিকাতে ফসফরাসের ঘাটতি থাকে। ব্রহ্মপুত্র-যমুনা পললভূমি, পুরাতন ব্রহ্মপুত্র পললভূমি, সক্রিয় গঙ্গা পললভূমি, গোপালগঞ্জ খুলনা বিল, সিলেটের নিচু অঞ্চল (basin), সমতল বরেন্দ্রভূমি, উঁচু বরেন্দ্রভূমি এবং মধুপুর অঞ্চলের মৃত্তিকাতে ফসফরাসের অভাব দেখা যায়। পাহাড়ি সুরমা-কুশিয়ারা ও তিস্তা পললভূমি মৃত্তিকাতে পটাশিয়ামের পরিমাণ কম। সোপান ও পর্বত পাদদেশীয় (Piedmont) মৃত্তিকাতে পটাশিয়ামের পরিমাণ স্বল্প থেকে মধ্যম। হালকা গ্রথনের মৃত্তিকা এবং যেসব এলাকায় সেচ দ্বারা উচ্চ ফলনশীল জাতের শস্য চাষ করা হয় সেসব এলাকায় সালফারের অভাব মারাত্মক ও ব্যাপক বিস্তৃত। ঢাকা, বরিশাল, ফরিদপুর, কুমিল্লা, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, সিলেট, যশোর, কুষ্টিয়া, বগুড়া, পাবনা, রাজশাহী ও খুলনা জেলার মৃত্তিকাতে সালফারের অভাব রয়েছে। বরেন্দ্রভূমি, মধুপুর অঞ্চল ও অ্যাসিড-সালফেট মৃত্তিকাতে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামের অভাব দেখা যায়। জিঙ্ক ঘাটতি অঞ্চলে গাঙ্গেয় পললভূমির চুনযুক্ত মৃত্তিকা, সেচের আওতাধীন অবিরতভাবে সিক্ত মৃত্তিকা, অধিক জৈবপদার্থ সংবলিত মৃত্তিকা, পিট মৃত্তিকা, অধিক পিএইচ সংবলিত লবণাক্ত মৃত্তিকা, হালকা রঙের পর্বত পাদদেশীয় সমভূমি মৃত্তিকা অন্তর্ভুক্ত। অতি সম্প্রতি চুনহীন পলল, চুনহীন পললভূমি, সানুদেশীয়, সোপান ও পাহাড়ি মৃত্তিকার কিছু কিছু এলাকাতে বোরন ও মলিবডেনামের ঘাটতি শনাক্ত করা হয়েছে। শুধুমাত্র গঙ্গা কটাল পললভূমি মৃত্তিকার স্বাভাবিক পুষ্টি উপাদান সরবরাহ ক্ষমতা বেশি। আড়িয়াল বিল, লোয়ার মেঘনা নদী পললভূমি ও সিলেটের নিচু এলাকায় অবস্থিত মৃত্তিকার পুষ্টি উপাদান সরবরাহ ক্ষমতা মধ্যম থেকে বেশি। এছাড়া বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের মৃত্তিকায় পুষ্টি উপাদান সরবরাহ ক্ষমতা কম থেকে মধ্যম। মৃত্তিকার উর্বরতায় মারাত্মক সীমাবদ্ধতা উত্তর ও পূর্বাঞ্চলীয় পর্বত পাদদেশীয় সমভূমি, সমতল বরেন্দ্রভূমি, উচ্চ বরেন্দ্রভূমি, মধুপুর অঞ্চল, আখাউড়া সোপান এবং উত্তর ও পূর্বাঞ্চলীয় পাহাড়ে বিদ্যমান।

[সিরাজুল হক]