মৃত্তিকার গঠনবিন্যাস

মৃত্তিকার গঠনবিন্যাস (Soil Structure)  সংযুতি তৈরি করতে মৃত্তিকা কণার বিন্যাস এবং মৃত্তিকা পরিলেখে এসব সংযুতির সুবিন্যস্তকরণ। গঠনবিন্যাস শব্দটি মৃত্তিকা কণার গ্রুপ বা বিন্যাসের সঙ্গে সম্পর্কিত। এ শব্দটি দ্বারা প্রাথমিক মৃত্তিকা কণার সার্বিক সংযুক্তি বা বিন্যাসের দ্বারা সৃষ্ট সংযুতি বা পেড নামক অনুসম্ভূত গ্রুপকে স্থূলভাবে বর্ণনা করা হয়।

কোনো একটি পরিলেখে একটি সুনির্দিষ্ট ধরনের গঠনবিন্যাস প্রাধান্য বিস্তার করতে পারে। কিন্তু প্রায়ই বিভিন্ন ক্ষিতিজে ভিন্ন প্রকারের গঠনবিন্যাস পরিলক্ষিত হয়। মৃত্তিকার অবস্থা ও বৈশিষ্ট্য, যেমন- পানি চলাচল, তাপ স্থানান্তর, বাতান্বয়ন এবং রন্ধ্রতা গঠনবিন্যাস দ্বারা প্রভাবিত হয়।

মৃত্তিকা গঠনবিন্যাসের প্রকার কোন ক্ষিতিজে বিদ্যমান পেড বা সংযুতির প্রকট আকৃতি গঠনবিন্যাসের প্রকার নির্ধারণ করে। প্রধান চার প্রকারের মৃত্তিকা সংযুতিগুলো হলো উপগোলকীয়, থালাকৃতি, প্রিজম-সদৃশ এবং ব্লক-সদৃশ। এসব সংযুতির (উপ-প্রকারস্থ) একটি সংক্ষিপ্ত বর্ণনা প্রদান করা হলো: উপগোলকীয় (দানাকৃতি ও চূর্ণাকৃতি উপ-প্রকার) গোলাকৃতির পেড বা সংযুতি এ প্রকার গঠনবিন্যাসের অন্তর্ভুক্ত। এসব পেড সাধারণত আলাদাভাবে অবস্থান করে একটি থেকে অন্যটি পৃথক থাকে। তুলনামূলকভাবে রন্ধ্রহীন সংযুতিগুলোকে দানা বলা হয় এবং বিন্যাসটি দানাকৃতি। কিন্তু যখন দানাগুলো বিশেষভাবে সচ্ছিদ্র হয় তখন চূর্ণাকৃতি শব্দটি ব্যবহার করা হয়। দানাকৃতি এবং চূর্ণাকৃতির গঠনবিন্যাস অনেক পৃষ্ঠমৃত্তিকারই বৈশিষ্ট্য, বিশেষ করে অধিক জৈব পদার্থ সংবলিত মৃত্তিকার। এ ধরনের গঠনবিন্যাস তৃণভূমি মৃত্তিকাতে প্রকট।

থালা-সদৃশ্য (থালাকৃতি) সংযুতিগুলো (পেড) তুলনামূলকভাবে অপুরু আনুভূমিক থালা, পত্রক বা লেন্স হিসেবে বিন্যস্ত থাকে। থালাকৃতির গঠন কিছু কিছু অকর্ষিত মৃত্তিকার পৃষ্ঠস্তরে পাওয়া যায়, কিন্তু অন্তঃমৃত্তিকা ক্ষিতিজের বৈশিষ্ট্যও প্রদান করতে পারে। কোন কোন মৃত্তিকা লাঙ্গল দ্বারা সৃষ্ট কঠিন স্তরে (ploughpan) স্থূল থালাকৃতির গঠনবিন্যাস দেখা যায়। মধুপুর অঞ্চলের শালবনের সুনিষ্কাশিত মৃত্তিকাতে থালাকৃতির গঠনবিন্যাস দেখা যায়।

প্রিজম-সদৃশ (স্তম্ভাকার ও প্রিজমতুল্য গঠন) উল্লম্বমুখী সংযুতি বা স্তম্ভ এ প্রকারের গঠনবিন্যাসের বৈশিষ্ট্য। বিভিন্ন মৃত্তিকায় সংযুতির উচ্চতা ভিন্ন হয়ে থাকে এবং সংযুতির ব্যাস ১৫ সেন্টিমিটার বা ততোধিক হতে পারে। শুষ্ক ও শুষ্কপ্রায় অঞ্চলের মৃত্তিকার অন্তঃমৃত্তিকা ক্ষিতিজে সাধারণত প্রিজম-সদৃশ গঠনবিন্যাস বিদ্যমান। এসব সংযুতি যখন সুগঠিত হয় তখন পরিলেখের লক্ষণীয় বৈশিষ্ট্যে পরিণত হয়। এ ধরনের গঠনবিন্যাস আর্দ্র অঞ্চলের দুর্বল নিষ্কাশিত কিছু কিছু মৃত্তিকাতেও পরিলক্ষিত হয়।

প্রিজমের শীর্ষ যখন গোলাকৃতির হয় তখন স্তম্ভাকার শব্দটি ব্যবহার করা হয়। যখন প্রিজমের শীর্ষ সমতল ও স্পষ্ট হয় তখন এ গঠনবিন্যাসকে প্রিজমতুল্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। প্রিজমতুল্য গঠনবিন্যাস বাংলাদেশের অধিকাংশ দোঅাঁশ ও এঁটেল প্রকৃতির পললভূমি মৃত্তিকার আদর্শ গঠনবিন্যাস।

চৌকোণা-সদৃশ পিন্ড (চৌকোণাকৃতি ও উপকৌণিক চৌকোণাকৃতির পিন্ড উপরিভাগ) এ ক্ষেত্রে সংযুতিগুলোর আকার হ্রাস পেয়ে চৌকোণাকৃতি প্রাপ্ত হয়। এ সংযুতিগুলোর ছয়টি পৃষ্ঠ অসম এবং এদের তিন মাত্রা মোটামুটিভাবে সমান। এসব পিন্ডের পুরুত্বের পরিসর প্রায় ১ থেকে ১০ সেন্টিমিটার। সাধারণত এদের সামগ্রিক বিন্যাস এতটাই স্বতন্ত্র যে এদেরকে শনাক্ত করা কষ্টকর নয়। যখন খনকের প্রান্তগুলো তীক্ষ্ণ হয় এবং আয়তক্ষেত্রাকৃতির পৃষ্ঠগুলো সুস্পষ্ট হয়, তখন এ উপ-বিভাগকে চৌকোণাকৃতি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। যখন পিন্ডগুলো উপগোলাকৃতির হয় তখন এসব সংযুতিকে উপকৌণিক চৌকোণাকৃতির পিন্ড বলা হয়। চৌকোণা-সদৃশ গঠনবিন্যাস সাধারণত অন্তঃমৃত্তিকাতেই দেখা যায়। এদের উৎপত্তির ধাপ ও অন্যান্য বৈশিষ্ট্য মৃত্তিকার নিষ্কাশন, বাতান্বয়ন ও মৃত্তিকাতে শিকড় প্রবেশ্যতার মতো অনেক কিছুর উপরই প্রভাব বিস্তার করে। চৌকোণাকৃতির গঠনবিন্যাস অধিকাংশ দোঅাঁশ ও এঁটেল প্রকৃতির পললভূমি মৃত্তিকাতে দেখা যায়। প্রিজমতুল্য গাঠনিক এককগুলোকে মৃত্তিকা প্রাণী ও গাছের শিকড় ভেঙ্গে ফেলতে পারে এবং এর ফলে কৌণিক চৌকোণাকৃতি বা উপকৌণিক চৌকোণাকৃতি গঠনবিন্যাস কম এঁটেলযুক্ত বস্ত্ততে উৎপন্ন হতে পারে।  [মোঃ মিজানুর রহমান ভূঁইয়া]