মুশায়েরা: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
'''মুশায়েরা ''' উর্দু কবিতা (শের-শায়েরি) পাঠের আসর। উর্দু কবিতার উন্নয়ন, বিকাশ ও প্রসারে উর্দুসাহিত্যের ঐতিহ্যবাহী এ আসরের ভূমিকা অপরিসীম।
'''মুশায়েরা ''' উর্দু কবিতা (শের-শায়েরি) পাঠের আসর। উর্দু কবিতার উন্নয়ন, বিকাশ ও প্রসারে উর্দুসাহিত্যের ঐতিহ্যবাহী এ আসরের ভূমিকা অপরিসীম। উপমহাদেশে কখন থেকে মুশায়েরার প্রচলন শুরু হয় তা সঠিক করে বলা কঠিন। কবি আমীর খসরু (১২৫৩-১৩২৫) প্রথম উর্দু কবিতার প্রচলন করেন। সে সময় এই মুশায়েরার মাধ্যমে জনসাধারণ কাব্যচর্চার সংস্পর্শে আসার সুযোগ লাভ করে। মুশায়েরার মাহফিল তখন ছিল অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণ। এতে কয়েকজন বিচারক থাকতেন। শের-শায়েরি পাঠকের সামনে শামাদানে মোমের প্রদীপ রাখা হত। এ প্রদীপ সভাপতি বা মীর মুশায়েরার সামনেও রাখা হত। শিবলি নুমানীর দেওয়া তথ্যে জানা যায় যে ষোল শতকের পূর্বেই ভারতে ফারসি সাহিত্য চর্চার অঙ্গনে মুশায়েরার প্রচলন ছিল। কবিরা তখন মুশায়েরার কবিতা রচনা প্রতিযোগিতায় অংশ নিতেন এবং তাদের কাব্যচর্চার মাধ্যমে কবিতার উৎকর্ষ ঘটত। অষ্টাদশ শতাব্দীতে যখন দিল্ললীর কবি ও লেখকরা উর্দু ভাষায় সাহিত্য চর্চা শুরু করেন তখন রাজধানী দিল্লীতে মুশায়েরার ব্যাপক প্রচলন হয়।
 
উপমহাদেশে কখন থেকে মুশায়েরার প্রচলন শুরু হয় তা সঠিক করে বলা কঠিন। কবি আমীর খসরু (১২৫৩-১৩২৫) প্রথম উর্দু কবিতার প্রচলন করেন। সে সময় এই মুশায়েরার মাধ্যমে জনসাধারণ কাব্যচর্চার সংস্পর্শে আসার সুযোগ লাভ করে। মুশায়েরার মাহফিল তখন ছিল অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণ। এতে কয়েকজন বিচারক থাকতেন। শের-শায়েরি পাঠকের সামনে শামাদানে মোমের প্রদীপ রাখা হত। এ প্রদীপ সভাপতি বা মীর মুশায়েরার সামনেও রাখা হত। শিবলি নুমানীর দেওয়া তথ্যে জানা যায় যে ষোল শতকের পূর্বেই ভারতে ফারসি সাহিত্য চর্চার অঙ্গনে মুশায়েরার প্রচলন ছিল। কবিরা তখন মুশায়েরার কবিতা রচনা প্রতিযোগিতায় অংশ নিতেন এবং তাদের কাব্যচর্চার মাধ্যমে কবিতার উৎকর্ষ ঘটত। অষ্টাদশ শতাব্দীতে যখন দিল্ললীর কবি ও লেখকরা উর্দু ভাষায় সাহিত্য চর্চা শুরু করেন তখন রাজধানী দিল্লীতে মুশায়েরার ব্যাপক প্রচলন হয়।


[[Image:Mushayera(UrduPoet).jpg|right|thumbnail|400px|মুশায়েরা পাঠের আসর]]
উনবিংশ শতাব্দীতে ঢাকায় মুশায়েরা কাব্য উৎসব ব্যাপক প্রসার লাভ করেছিল। ঢাকায় সে সময় কবি মির্জা গালিবের অনেক ভক্ত ছিলেন। ঢাকাইয়া উর্দু কবিদের মধ্যে অনেকে তাঁর সঙ্গে পত্র যোগাযোগ করতেন। ঢাকার নবাব পরিবারের উদ্যোগে আহসান মঞ্জিলে মুশায়েরা অনুষ্ঠিত হতো। নবাব আহসানউল্লাহ শাহীন ছদ্মনামে কবিতা রচনা করতেন। তিনি এবং নবাব পরিবারের কয়েকজন কবি মুশায়েরার আয়োজন করতেন। বিশেষ করে ঈদের দিনে আহসান মঞ্জিলে উর্দু কবিতার আসর বা মুশায়েরা জমে উঠতো। ঢাকার বিখ্যাত উর্দু কবিরা এতে অংশ নিতেন।
উনবিংশ শতাব্দীতে ঢাকায় মুশায়েরা কাব্য উৎসব ব্যাপক প্রসার লাভ করেছিল। ঢাকায় সে সময় কবি মির্জা গালিবের অনেক ভক্ত ছিলেন। ঢাকাইয়া উর্দু কবিদের মধ্যে অনেকে তাঁর সঙ্গে পত্র যোগাযোগ করতেন। ঢাকার নবাব পরিবারের উদ্যোগে আহসান মঞ্জিলে মুশায়েরা অনুষ্ঠিত হতো। নবাব আহসানউল্লাহ শাহীন ছদ্মনামে কবিতা রচনা করতেন। তিনি এবং নবাব পরিবারের কয়েকজন কবি মুশায়েরার আয়োজন করতেন। বিশেষ করে ঈদের দিনে আহসান মঞ্জিলে উর্দু কবিতার আসর বা মুশায়েরা জমে উঠতো। ঢাকার বিখ্যাত উর্দু কবিরা এতে অংশ নিতেন।


১০ নং লাইন: ৯ নং লাইন:
ঢাকার সৈয়দ বাকের তাবতাবাই ও আগাজান ইরানী ফারসি ভাষার উঁচু স্তরের কবি ছিলেন। প্রতি মাসে তাঁদের বাসভবনে ফারসি মুশায়েরা অনুষ্ঠিত হতো। সে মুশায়েরায় প্রায়শ সভাপতিত্ব করতেন সৈয়দ মাহমুদ আজাদ। এছাড়া উর্দু কবি নওশাদ নুরী প্রায়ই মুশায়েরার আয়োজন করতেন। উর্দুভাষী লোকজন ছাড়াও বাঙালি কবিসাহিত্যিকরাও স্বতঃস্ফূর্তভাবে এখানে অংশগ্রহণ করেছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ঢাকার মুশায়েরার ঐতিহ্য কালের পরিক্রমায় হারিয়ে গেলেও বেশ কয়েকজন উর্দু কবি এখনও এর ধারাবাহিকতা রক্ষার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।  [রফিকুল ইসলাম রফিক]
ঢাকার সৈয়দ বাকের তাবতাবাই ও আগাজান ইরানী ফারসি ভাষার উঁচু স্তরের কবি ছিলেন। প্রতি মাসে তাঁদের বাসভবনে ফারসি মুশায়েরা অনুষ্ঠিত হতো। সে মুশায়েরায় প্রায়শ সভাপতিত্ব করতেন সৈয়দ মাহমুদ আজাদ। এছাড়া উর্দু কবি নওশাদ নুরী প্রায়ই মুশায়েরার আয়োজন করতেন। উর্দুভাষী লোকজন ছাড়াও বাঙালি কবিসাহিত্যিকরাও স্বতঃস্ফূর্তভাবে এখানে অংশগ্রহণ করেছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ঢাকার মুশায়েরার ঐতিহ্য কালের পরিক্রমায় হারিয়ে গেলেও বেশ কয়েকজন উর্দু কবি এখনও এর ধারাবাহিকতা রক্ষার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।  [রফিকুল ইসলাম রফিক]


'''গ্রন্থপঞ্জি ''' ইসলামি বিশ্বকোষ, ২০তম খন্ড, ঢাকা, ইসলামিক ফাউন্ডেশন; হাকীম হাবিবুর রহমান, ঢাকা পঞ্চাশ বছর আগে, ঢাকা, বাংলা একাডেমী; রফিকুল ইসলাম রফিক, ঢাকা শহরে উর্দু সংস্কৃতি, ঢাকা, ২০০৬।
'''গ্রন্থপঞ্জি''' ইসলামি বিশ্বকোষ, ২০তম খন্ড, ঢাকা, ইসলামিক ফাউন্ডেশন; হাকীম হাবিবুর রহমান, ঢাকা পঞ্চাশ বছর আগে, ঢাকা, বাংলা একাডেমী; রফিকুল ইসলাম রফিক, ঢাকা শহরে উর্দু সংস্কৃতি, ঢাকা, ২০০৬।


[[en:Mushayera]]
[[en:Mushayera]]

০৪:২৪, ৫ মার্চ ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

মুশায়েরা  উর্দু কবিতা (শের-শায়েরি) পাঠের আসর। উর্দু কবিতার উন্নয়ন, বিকাশ ও প্রসারে উর্দুসাহিত্যের ঐতিহ্যবাহী এ আসরের ভূমিকা অপরিসীম। উপমহাদেশে কখন থেকে মুশায়েরার প্রচলন শুরু হয় তা সঠিক করে বলা কঠিন। কবি আমীর খসরু (১২৫৩-১৩২৫) প্রথম উর্দু কবিতার প্রচলন করেন। সে সময় এই মুশায়েরার মাধ্যমে জনসাধারণ কাব্যচর্চার সংস্পর্শে আসার সুযোগ লাভ করে। মুশায়েরার মাহফিল তখন ছিল অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণ। এতে কয়েকজন বিচারক থাকতেন। শের-শায়েরি পাঠকের সামনে শামাদানে মোমের প্রদীপ রাখা হত। এ প্রদীপ সভাপতি বা মীর মুশায়েরার সামনেও রাখা হত। শিবলি নুমানীর দেওয়া তথ্যে জানা যায় যে ষোল শতকের পূর্বেই ভারতে ফারসি সাহিত্য চর্চার অঙ্গনে মুশায়েরার প্রচলন ছিল। কবিরা তখন মুশায়েরার কবিতা রচনা প্রতিযোগিতায় অংশ নিতেন এবং তাদের কাব্যচর্চার মাধ্যমে কবিতার উৎকর্ষ ঘটত। অষ্টাদশ শতাব্দীতে যখন দিল্ললীর কবি ও লেখকরা উর্দু ভাষায় সাহিত্য চর্চা শুরু করেন তখন রাজধানী দিল্লীতে মুশায়েরার ব্যাপক প্রচলন হয়।

মুশায়েরা পাঠের আসর

উনবিংশ শতাব্দীতে ঢাকায় মুশায়েরা কাব্য উৎসব ব্যাপক প্রসার লাভ করেছিল। ঢাকায় সে সময় কবি মির্জা গালিবের অনেক ভক্ত ছিলেন। ঢাকাইয়া উর্দু কবিদের মধ্যে অনেকে তাঁর সঙ্গে পত্র যোগাযোগ করতেন। ঢাকার নবাব পরিবারের উদ্যোগে আহসান মঞ্জিলে মুশায়েরা অনুষ্ঠিত হতো। নবাব আহসানউল্লাহ শাহীন ছদ্মনামে কবিতা রচনা করতেন। তিনি এবং নবাব পরিবারের কয়েকজন কবি মুশায়েরার আয়োজন করতেন। বিশেষ করে ঈদের দিনে আহসান মঞ্জিলে উর্দু কবিতার আসর বা মুশায়েরা জমে উঠতো। ঢাকার বিখ্যাত উর্দু কবিরা এতে অংশ নিতেন।

এ ছাড়াও কয়েকটি ঢাকাইয়া পরিবারে নিয়মিত মুশায়েরার আসর বসত। হাকিম হাবিবুর রহমান আখুন্দজাদার তিবিবয়া হাবিবিয়া কলেজ ও রেজা আলী ওয়াসাতের বৈঠকখানায় মুশায়েরার মাহফিল জমে উঠত। হাকিম হাবিবুর রহমান শৈশবে দিল্লীতে অধ্যয়নকালে আগ্রার গুলাবখানায় মুশায়েরায় যোগদান করেন। ঢাকায় হাবিবুর রহমানের বাসভবনে প্রতিমাসে একবার মুশায়েরার বসত। ১৯৩০ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত প্রতিমাসে মুশায়েরায় আয়োজন করা হতো। মুশায়েরায় পঠিত শের-শায়েরির মধ্য থেকে বাছাই করা শের গুলদাস্তা নামক পত্রিকায় প্রকাশ করে বিনামূল্যে বিতরণ করা হতো। হাকিম সাহেবের মুশায়েরায় কবি নজরুল ইসলামও একবার উপস্থিত ছিলেন। মুসলিম সাহিত্য সমাজ নামে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনও মুশায়েরার আয়োজন করত। পাকিস্তান আমলে ঢাকার উর্দু কবি সৈয়দ শরফউদ্দীন শরফ আল-হুসাইনী তাঁর বেগমবাজারের বাসভবনে এবং কবি হাফেজ জহুরুল হক মোবারকী বকশীবাজারের বাসভবনে মুশায়েরার আসর বসাতেন। এ মাহফিলে রেজা আলী ওয়াশত, কাইফা চিরিয়া কোঠী, ফজলে করিম ফজল, ড. আন্দালীব শাদানী, সলিমুল্লা ফাহমী, হায়দার দেহলভী, অধ্যাপক ইকবাল আজীম প্রমুখ বিখ্যাত ব্যক্তিরা নিয়মিত শরিক হতেন। তাঁরা নাজিমউদ্দিন রোডে অবস্থিত ঢাকা রেডিও’র মুশায়েরা অনুষ্ঠানে অংশ নিতেন।

ঢাকার সৈয়দ বাকের তাবতাবাই ও আগাজান ইরানী ফারসি ভাষার উঁচু স্তরের কবি ছিলেন। প্রতি মাসে তাঁদের বাসভবনে ফারসি মুশায়েরা অনুষ্ঠিত হতো। সে মুশায়েরায় প্রায়শ সভাপতিত্ব করতেন সৈয়দ মাহমুদ আজাদ। এছাড়া উর্দু কবি নওশাদ নুরী প্রায়ই মুশায়েরার আয়োজন করতেন। উর্দুভাষী লোকজন ছাড়াও বাঙালি কবিসাহিত্যিকরাও স্বতঃস্ফূর্তভাবে এখানে অংশগ্রহণ করেছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ঢাকার মুশায়েরার ঐতিহ্য কালের পরিক্রমায় হারিয়ে গেলেও বেশ কয়েকজন উর্দু কবি এখনও এর ধারাবাহিকতা রক্ষার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।  [রফিকুল ইসলাম রফিক]

গ্রন্থপঞ্জি ইসলামি বিশ্বকোষ, ২০তম খন্ড, ঢাকা, ইসলামিক ফাউন্ডেশন; হাকীম হাবিবুর রহমান, ঢাকা পঞ্চাশ বছর আগে, ঢাকা, বাংলা একাডেমী; রফিকুল ইসলাম রফিক, ঢাকা শহরে উর্দু সংস্কৃতি, ঢাকা, ২০০৬।