মুন্তখব-উত-তাওয়ারিখ

মুন্তখব-উত-তাওয়ারিখ  একটি সাধারণ ইতিহাস গ্রন্থ। এর রচয়িতা আবদুল কাদির বদাউনী। এতে ভারতের গজনীর সুলতান থেকে শুরু করে সম্রাট আকবরের রাজত্বের চল্লিশতম বছর পর্যন্ত (১৫৯৫-৯৬) ঘটনাবলির বর্ণনা রয়েছে। মুলুক শাহের পুত্র আবদুল কাদির ভারতের উত্তর প্রদেশের বদাউনে হিজরি ৯৪৮ (১৫৪১-৪২ খ্রিস্টাব্দে) জন্মগ্রহণ করেন এবং তাঁকে ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলা হয়। ১৫৭৩ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট আকবরের সঙ্গে তাঁকে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয় এবং এরপর দরবারি পন্ডিতদের মধ্যে তিনি তালিকাভুক্ত হন। তিনি ছিলেন তবকাত-ই-আকবরীর রচয়িতা নিজামউদ্দীন আহমদ এর বন্ধু। বন্ধুর মৃত্যুর পর বদাইনী মুন্তখব-উত-তাওয়ারিখের  রচনা শুরু করেন এবং ১০০৪ হিজরির ২৩ জমাদি-উস-সানি (ফেব্রুয়ারি ১৫৯৬) তিনি তাঁর রচনা শেষ করেন। সম্ভবত এর অব্যবহিত পরেই তাঁর মৃত্যু হয়।

বদাউনীর মুন্তখব-এ আকবর সম্বন্ধে, বিশেষ করে তাঁর ধর্মমতের কঠোর সমালোচনা রয়েছে। এজন্য সম্রাটের জীবদ্দশায় গ্রন্থটি প্রকাশ না করে তা গোপন রাখা হয়েছিল। সম্রাট জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালে এটি প্রকাশ করা হয়। সম্রাট জাহাঙ্গীর গ্রন্থটির বিষয়বস্ত্ত নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। বদাউনীর সন্তানেরা বইটির অস্তিত্ব সম্পর্কে জানত না বলে যে দাবি করেছিল, জাহাঙ্গীর তা বিশ্বাস করেননি। মুন্তখব-উত-তওয়ারিখে আকবরের নতুন ধর্ম সম্পর্কিত মতামত ও তা ধর্মমত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার বর্ণনা প্রাধান্য পেয়েছে যা সমসাময়িক অন্যান্য ফার্সি গ্রন্থে পাওয়া যায়নি।

বাংলার ইতিহাস পুনর্গঠনে মুন্তখব-উত-তাওয়ারিখ খুব একটা সাহায্য করে না। এ গ্রন্থে বাংলার ইতিহাস পৃথক কোনো অধ্যায়ে আলোচনা করা হয়নি। সমগ্র ভারতের ইতিহাস বর্ণনায় বদাউনী মাঝে মধ্যে বাংলার উল্লেখ করেছেন মাত্র।  [আবদুল করিম]