মুজাদ্দিদিয়া তরীকা

মুজাদ্দিদিয়া তরীকা  চার সুফি তরীকার অন্যতম। শায়েখ আহমদ সিহিন্দী (১৫৬৩-১৬২৪ খ্রি) এ তরীকার স্থপতি। তিনি মুজাদ্দিদে আল্ফে সানী অর্থাৎ দ্বিতীয় সহস্রাব্দীতে ভারতে ইসলামের পুনর্জীবন দানকারীরূপে পরিচিত। তিনি সম্রাট আকবরের প্রবর্তিত ’দীন-এ-ইলাহী’ ধর্মের প্রভাব থেকে মুসলমানদের মুক্ত করেন।

শায়েখ আহমদ সিহিন্দী চার পর্যায়ে মুসলিম সমাজকে সংস্কারের পথ প্রদর্শন করেন। প্রথম পর্যায়ে তিনি রূহানী কামালিয়াতের মাধ্যমে ওলী-দরবেশদের একটি জামা’আত কায়েম করেন যাঁরা কার্যকর আদর্শরূপে ইসলামী বিধান ও আখলাকের প্রচারে ব্রতী হন। দ্বিতীয় পর্যায়ে তিনি সুধী সমাজকে খাঁটি ইসলামী আকীদা সম্পর্কে অবহিত করেন। তৃতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন স্তরের রাজকীয় ক্ষমতার অধিকারী আমীর উমারাদের নিজ নিজ দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন করার চেষ্টা। চতুর্থ পর্যায়ে তিনি ভারত সম্রাটের ওপর প্রভাব বিস্তার করেন।

সমকালীন অবাঞ্ছিত প্রভাবসমূহ থেকে ইসলামকে মুক্ত করার জন্য তিনি তাঁর অনুগামী প্রচারকদেরকে কুরআন ও  হাদীস মূল শিক্ষাসমূহ প্রচারের জন্য প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে গমনের পরামর্শ দেন। এক পর্যায়ে মুজাদ্দিদের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে তাঁকে ভারতের সম্রাট কারারুদ্ধ করেন। অবশ্য পরে তাঁকে মুক্তি দিয়ে সম্রাট তাঁর নিজের উপদেষ্টা নিযুক্ত করেন।

শায়েখ আহমদ সিহিন্দী সর্বপ্রথম তাঁর পিতার নিকট চিশ্তিয়া সিলসিলার বাতিনী দীক্ষা হাসিল করে এই সিলসিলার খিলাফত লাভ করেন। এরপর শাহ্ সিকান্দর কিথালী (রহঃ)-এর নিকট কাদিরিয়া সিলসিলায় মুরীদ হয়ে তাঁর নিকট থেকে নক্শবন্দিয়া তরীকার খিলাফত লাভ করেন। এরপর খাজা বাকীবিল্লাহ্ নক্শবন্দী (রহঃ)-এর মুরীদ হয়ে তাঁর নিকট থেকে নক্শবন্দিয়া তরীকায় আরও অধিক বুৎপত্তি লাভ করেন। পরবর্তীতে তিনি এই নক্শবন্দিয়া তরীকার কিছুটা সংস্কার সাধন করে মুজাদ্দিদিয়া তরীকা প্রবর্তন করেন। এরপর তিনি কাদিরিয়া, চিশতিয়া, নক্শবন্দিয়া এবং মুজাদ্দিদিয়া এই চার তরীকার মানুষকে মুরীদ করতেন। তবে তিনি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর পূর্ণ অনুসরণের উদ্দেশ্যে সকল তরীকার মুরীদকে গযল, কাওয়ালী ও সামা শুনতে নিষেধ করতেন। মুজাদ্দিদ নক্শবন্দিয়া তরীকাকে অন্যান্য তরীকার চেয়ে অধিক পছন্দ করতেন। এই তরীকায় শরীয়তের দৃষ্টিতে আপত্তিকর কোন কার্যকলাপের কোন স্বীকৃতি নেই।  [এ.এইচ.এম মুজতবা হোছাইন]