মুখোপাধ্যায়, হেমন্তকুমার

মুখোপাধ্যায়, হেমন্তকুমার (১৯২২-১৯৮৯)  কণ্ঠশিল্পী, সুরকার। ১৯২২ সালের ১৬ জুন বারাণসীতে তাঁর জন্ম। তিনি কলকাতায় বড় হয়ে ওঠেন। গায়ক হওয়ার উদ্দেশে তিনি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া ছেড়ে দিয়েছিলেন।

হেমন্তকুমার মুখোপাধ্যায় ধ্রুপদী সঙ্গীতের শিক্ষা গ্রহণ করেন ওস্তাদ ফৈয়াজ খানের কাছে; আর লঘু শেখেন শৈলেষ দাশগুপ্তের কাছে। তাঁর প্রথম গ্র্যামোফোন রেকর্ড প্রকাশিত হয় সতেরো বছর বয়সে, শেষ রেকর্ড চৌষট্টি বছর বয়সে। তাঁর সঙ্গীত-জীবন বিস্তৃত ছিল অর্ধশতাব্দীরও কিছু বেশি সময় ধরে। তাঁর প্রথম হিন্দি গানের রেকর্ড প্রকাশিত হয় ১৯৪০ সালে। তিনি হিন্দি গানের একজন প্রধান শিল্পী এবং সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন। কয়েকটি হিন্দী ছায়াছবিও তিনি প্রযোজনা করেন। তবে তিনি বাংলায় জনপ্রিয়তা অর্জন করেন আধুনিক গান এবং রবীন্দ্রসঙ্গীতের জন্য। পঙ্কজ মল্লিক এবং দেবব্রত বিশ্বাসের সঙ্গে এক দিকে রবীন্দ্রসঙ্গীতকে তিনি শহুরে ভদ্রলোকদের বৈঠকখানা থেকে বের করে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেন, অন্যদিকে ভারী কণ্ঠকে গানের আদর্শ কণ্ঠ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। তাঁর প্রথম রবীন্দ্রসঙ্গীতের ডিস্ক (প্রাঙ্গণে মোর শিরীষ শাখায় এবং হে নিরুপমা, ১৯৪৪) আজও জনপ্রিয়।

ইন্ডিয়ান পিপলস থিয়েটার অ্যাসোসিয়েশনের (আইপিটিএ) সদস্য হিসেবে হেমন্তকুমার মুখোপাধ্যায় ১৯৪০-এর দশকে বামধারার রাজনীতির প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে পড়েন। আইপিটিএ-র অপর সদস্য প্রখ্যাত সুরকার ও সঙ্গীত-রচয়িতা সলিল চৌধুরীর অনুরোধে তিনি তাঁর রচিত ও সুরারোপিত অনেকগুলি গান করেন, যা গণসঙ্গীত হিসেবে সুপরিচিত। এসব গানের মাধ্যমে জনগণকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা এবং সাম্যের ভিত্তিতে সমাজ গঠন সম্পর্কে সচেতন হতে আহবান জানানো হয়েছে। এ ধরনের প্রথম গান, কোনো এক গাঁয়ের বধূর রূপকথা খুবই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় হেমন্তকুমার বিভিন্ন সঙ্গীতানুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে শরণার্থীদের জন্য অর্থসংগ্রহে সহায়তা করেন। সঙ্গীতে অবদানের জন্য তিনি অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেন। ১৯৮৯ সালে ঢাকা থেকে একটি পুরস্কারে ভূষিত হয়ে কলকাতায় ফিরে যাওয়ার পরেই ২৬ জুন তিনি মারা যান।  [গোলাম মুরশিদ]