মুক্তিযোদ্ধা সংসদ

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২২:৪৫, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)

মুক্তিযোদ্ধা সংসদ  বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযোদ্ধাদের একটি অরাজনৈতিক কল্যাণমূলক সংগঠন। ১৯৭২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সংসদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিম্নরূপ:

১.  স্বাধীনতা যুদ্ধের অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনের উদ্দেশ্যে জনসাধারণ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করা;

২.  দেশ ও জনগণকে রক্ষা করা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে একটি অরাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে কাজ করা এবং দেশের কল্যাণের জন্য যেকোন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা;

৩.  মুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধাহত/পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের সদস্যদের পুনর্বাসনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা;

৪.  দেশের অর্থনীতির উন্নয়ন এবং জনগণের অধিকার সংরক্ষণের ক্ষেত্রে যথাযথ ভূমিকা পালন করা;

৫.  সমগ্র দেশে উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করা;

৬.  জাতীয় ঐক্য ও সংহতি রক্ষাকল্পে সব ধরনের সাম্প্রদায়িকতা, সম্প্রসারণবাদ, বর্ণবাদ ও সাম্রাজ্যবাদকে প্রতিহত করা;

৭.  মুক্তিযোদ্ধাদের একটি তালিকা প্রণয়ন করা এবং তা সরকারি গেজেটে প্রকাশ করা;

৮.  মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস প্রণয়ন এবং যুদ্ধের স্মৃতি ও দলিলপত্র সংরক্ষনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা; এবং

৯.  স্বাধীনতা অর্জনের জন্য সংগ্রামরত বিশ্বের নিপীড়িত জাতিসমূহের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করা।

একটি কল্যাণমূলক সংগঠন হিসেবে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ‘খাদ্যাভাস পরিবর্তনের আন্দোলন’ এবং ‘পরিচ্ছন্ন ঢাকা নগরী কর্মসূচি’ গ্রহণ করে। এর পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধাদের পূনর্বাসিত করার জন্য সংসদ প্রচেষ্টা চালাতে শুরু করে। সংসদের গৃহীত কার্যক্রমে রয়েছে:

(ক) মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য একটি জাতীয় বোর্ড গঠন; (খ) বিভিন্ন সংস্থায় মুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্বাসন ও আত্তীকরণ; এবং (গ) মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে শত্রুপক্ষ নিধনের জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত বিভিন্ন খুনের মামলা থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের অব্যহতি পেতে সহায়তা দান। সংসদের অর্জনসমূহের মধ্যে রয়েছে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন, ১৯৭৩ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিশেষ বি.সি.এস পরীক্ষা অনুষ্ঠান, সরকারি চাকুরিতে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৩০% পদ সংরক্ষণ এবং ১৯৭২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারির পূর্বে মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত ফৌজদারি মামলাসমূহের দায় বা শাস্তি থেকে তাদের অব্যাহতি।

দেশে সৃষ্ট নানা ধরনের পট পরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের গঠনতন্ত্র একাধিকবার সংশোধিত হয়েছে। ২০০১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় কাউন্সিল সম্মেলনে অনুমোদিত  গঠনতন্ত্রে সাধারণ ও সহযোগী এই দুই ধরনের সদস্য অন্তর্ভুক্তির বিধান রয়েছে: বাংলাদেশকে মুক্ত করার জন্য ১৯৭১ সালে যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সকল ব্যক্তি এর সাধারণ সদস্য হতে পারেন। আর বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বে বিশ্বাসী এবং সংসদের গঠনতন্ত্রের সঙ্গে সংহতি প্রকাশকারী  যেকোন ব্যক্তি এর সহযোগী সদস্য হতে পারেন (যদি তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য না হন)।

সংসদের কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল ১০১ জন সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত। জেলা কমিটিতে ৫১ জন, থানা কমিটিতে ৪১ জন এবং ওয়ার্ড কমিটিতে ২১ জন সদস্য। সংসদের গঠনতন্ত্রে ১৯৭৮ সালে প্রধান উপদেষ্টা এবং প্রধান পৃষ্ঠপোষকের পদ সংযোজন করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী যেকোন সম্মানিত ব্যক্তি সংসদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক এবং প্রধান উপদেষ্টা হতে পারেন। তবে তাদের অবশ্যই যথাক্রমে পৃষ্ঠপোষক কমিটি এবং উপদেষ্টা কমিটির সদস্য হতে হবে।

সংসদ মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের অধিভুক্ত নিম্নলিখিত কমান্ডসমূহ গঠন এবং পরিচালনা করে: মুক্তিযোদ্ধা শিশু কমান্ড; মুক্তিযোদ্ধা যুব কমান্ড; মুক্তিযোদ্ধা মহিলা কমান্ড; মুক্তিযোদ্ধা কৃষক কমান্ড; মুক্তিযোদ্ধা শ্রমিক কমান্ড; মুক্তিযোদ্ধা টেক্নোক্র্যাট কমান্ড; মুক্তিযোদ্ধা শিক্ষক কমান্ড; মুক্তিযোদ্ধা সংসৃকতি কমান্ড; মুক্তিযোদ্ধা ব্যবসায়ী কমান্ড; এবং আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কমান্ড।

কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল কমান্ডসমূহের সংখ্যা বৃদ্ধি করার অধিকার সংরক্ষণ করে। সংসদ এর অধিভুক্ত ইউনিয়ন, থানা, জিলা এবং কেন্দ্রীয় সংগঠনসমূহের কমিটির রূপরেখাও প্রণয়ন করেছে।

[স্বপন কুমার সরকার]