মুকসুদপুর উপজেলা
মকসুদপুর উপজেলা (গোপালগঞ্জ জেলা) আয়তন: ৩০৮.৩৬ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৩°১০´ থেকে ২৩°২২´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°৪৮´ থেকে ৯০°০৮´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে নগরকান্দা ও ভাঙ্গা উপজেলা, দক্ষিণে গোপালগঞ্জ সদর ও কাশিয়ানী উপজেলা, পূর্বে ভাঙ্গা উপজেলা ও রাজৈর উপজেলা, পশ্চিমে কাশিয়ানী ও বোয়ালমারী উপজেলা।
জনসংখ্যা ২৮৯৪০৬; পুরুষ ১৪০৯৫৬, মহিলা ১৪৮৪৫০। মুসলিম ২০৯৫০৮, হিন্দু ৭৪৫৫৭, খ্রিস্টান ৫২৫১, বৌদ্ধ ৪৮ এবং অন্যান্য ৪২।
জলাশয় কুমার নদী ও দিগনার নদী এবং আতাডাঙ্গা বিল, মধুমতি বিল রুট, বসারতের খাল ও বাটিকুমার খাল উল্লেখযোগ্য।
প্রশাসন মুকসুদপুর থানা গঠিত হয় ১৯৬১ সালে। বর্তমানে এটি উপজেলা।
উপজেলা | ||||||||
পৌরসভা | ইউনিয়ন | মৌজা | গ্রাম | জনসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||
শহর | গ্রাম | শহর | গ্রাম | |||||
১ | ১৬ | ১৯৫ | ২৫৫ | ১৯৭১১ | ২৬৯৬৯৫ | ৯৩৯ | ৬১.৮ | ৫১.৯ |
পৌরসভা | ||||||||
আয়তন (বর্গ কিমি) | ওয়ার্ড | মহল্লা | লোকসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | |||
১৬.৭৯ | ৯ | ১৫ | ১৯৭১১ | ১১৭৪ | ৬১.৮ |
ইউনিয়ন | ||||||||
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড | আয়তন (একর) | লোকসংখ্যা | শিক্ষার হার (%) | |||||
পুরুষ | মহিলা | |||||||
উজানি ৯৪ | ৭০৫৯ | ৭০৭৩ | ৭১৬০ | ৪৮.৪ | ||||
কাশালিয়া ৫০ | ৪৩৪৫ | ৫৬০৭ | ৫৯৯২ | ৫১.৬ | ||||
খান্দারপাড় ৫৫ | ৩৪০৪ | ৪৮৭০ | ৫১৭২ | ৫৭.২ | ||||
গোবিন্দপুর ৩৩ | ৬৮৫৩ | ১১৫৩৮ | ১২০২১ | ৬০.১ | ||||
গোহালা ৩৯ | ৩৯২৯ | ১০৩৩২ | ১০৯৪৮ | ৪৫.৭ | ||||
জলিরপাড় ৪৪ | ৩৭৫৫ | ১০৩৮৭ | ১০৫২৫ | ৬২.৩ | ||||
দিগনগর ২৭ | ৬৫৬২ | ১২৫৯৭ | ১৩৭৫০ | ৪৪.০ | ||||
ননীক্ষীর ৭২ | ৩৯৬৬ | ৭৪১৫ | ৭৭২৬ | ৫৪.৫ | ||||
পশারগাতী ৭৮ | ৩৭৬১ | ৫৮৬০ | ৬১৪৬ | ৪৭.৮ | ||||
বহুগ্রাম ১১ | ৪০১৬ | ৬০৭৯ | ৬৪২৩ | ৬৬.১ | ||||
বাঁশবাড়িয়া ১৬ | ৩২৩৭ | ৫৫৫৪ | ৫৯০০ | ৪৮.৯ | ||||
বাটিকামারী ২২ | ৪০৮৪ | ৯০৮৩ | ১০০৬৯ | ৪৮.৮ | ||||
ভাবড়াশুর ১০ | ৩৭৩৬ | ৬২০২ | ৬৫৭০ | ৫৫.০ | ||||
মহারাজপুর ৬১ | ৫০৮৬ | ১০৯১২ | ১১৩৭৭ | ৪৮.৮ | ||||
মোচনা ৬৭ | ৩৯৭৩ | ৮১৩১ | ৮৮২৩ | ৪৯.৪ | ||||
রাঘদী ৮৩ | ৪২৮৭ | ৯৪৯৪ | ৯৯৫৯ | ৪৭.০ |
সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
ঐতিহাসিক ঘটনা ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ভাষা আন্দোলনের মিছিলে ছাত্র জনতার উপর পুলিশের গুলির প্রতিবাদে ২৪ ফেব্রুয়ারি এ উপজেলায় শোক মিছিল ও জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৬৬ সালে এ উপজেলায় আইয়ুুব বিরোধী আন্দোলনের মিছিলে পুলিশের গুলিতে স্কুল ছাত্র মহানন্দ শহীদ হন।
মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ২২ এপ্রিল পাকিস্তানি বিমান থেকে গুলিবর্ষণ করলে বানিয়ারচরে ৫ জন লোক আহত হয় এবং একটি লঞ্চ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ৯ আগস্ট মুকসুদপুর থানায় মুক্তিযোদ্ধা ও স্থানীয় জনগণের সম্মিলিত আক্রমণে পুলিশ ও রাজাকারসহ ৮৪ জন নিহত হয়। ১২ অক্টোবর বামনডাঙ্গা বাজারে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকবাহিনী ও রাজাকারদের লড়াইয়ে ২২ জন পাকসেনা ও রাজাকার নিহত হয়। এছাড়াও ১২ থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত দিগনগর ব্রিজের নিকট মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকবাহিনী ও রাজাকারদের লড়াইয়ে ৩০ জন পাকসেনা ও ১০ জন রাজাকার নিহত হয় এবং ৩ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। উপজেলার দিগনগর ও বাগাতি গ্রামে ২টি গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে।
বিস্তারিত দেখুন মুকসুদপুর উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৮।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৪০০, মন্দির ১৮০, গির্জা ১৫।
শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৫২.৫%; পুরুষ ৫৪.৮%, মহিলা ৫০.৫%। কলেজ ৪, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৪৩, প্রাথমিক বিদ্যালয় ২০০, কেজি স্কুল ৮, মাদ্রাসা ১৮। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: মুকসুদপুর ডিগ্রি কলেজ (১৯৭২), বঙ্গরত্ন ডিগ্রি কলেজ, কালীনগর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০৭), বাটিকামারী উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯২১), সাবের মিঞা জসিমুদ্দিন মডেল উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৮), এস জে উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৩৫), জে কে এম বি মল্লিক উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৩৮), পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৩৯), খান্দারপাড় ইউনিয়ন ইন্দুহাটি হলধর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪৫), বহুগ্রাম পি সি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬৬), বাটিকামারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯১৯), বনগ্রাম ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা (১৯২৫), দিগনগর ফাজিল মাদ্রাসা।
পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী মুকসুদপুর সংবাদ (পাক্ষিক)।
সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ৩, সিনেমা হল ২, নাট্যদল ৪, সাংস্কৃতিক সংগঠন ৭, নাট্য সংগঠন ৩, মহিলা সংগঠন ৮, ক্লাব ৬৯।
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৬৩%, অকৃষি শ্রমিক ২.১৪%, শিল্প ০.৫৩%, ব্যবসা ১৩.০৫%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ১.২১%, চাকরি ৮.৯%, নির্মাণ ২.৪%, ধর্মীয় সেবা ০.২২%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.৭% এবং অন্যান্য ৭.৮৫%।
কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৬৮.২৭%, ভূমিহীন ৩১.৭৩%। শহরে ৫৬.৭১% এবং গ্রামে ৬৯.০৬% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।
প্রধান কৃষি ফসল ধান, পাট, সরিষা, ডাল, আখ, গম, পান, পিঁয়াজ, মিষ্টি আলু, শাকসবজি।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি কাউন, চীনা, নীল, তিল, তিসি, মটর, ছোলা।
প্রধান ফল-ফলাদিব আম, কাঁঠাল, কলা, পেঁপে, নারিকেল, তাল, পেয়ারা, লেবু, লিচু।
মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ৬, গবাদিপশু ৪৫, হাঁস-মুরগি ৯৭, চিংড়ি ঘের ২০, হ্যাচারি ২, নার্সারি ১১।
যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১০৩ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৫৩ কিমি, কাঁচারাস্তা ৩৭৫ কিমি; নৌপথ ২০ কিমি।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি।
শিল্প ও কলকারখানা জুটমিল, আটামিল, স’মিল, রাইসমিল, তেলমিল, কটনমিল, আইস ফ্যাক্টরি, ওয়েল্ডিং কারখানা।
কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প ৬৬, মৃৎশিল্প ১০২, লৌহশিল্প ২৪৮, সূচিশিল্প ৮২৫, বাঁশের কাজ ২৭৫, কাঠের কাজ ৯০৭।
হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৩৮, মেলা ৭। টেংরাখোলা হাট, খান্দারপাড় হাট, বনগ্রাম হাট, টেকেরহাট (উত্তরপাড়), বাটিকামারী হাট ও গোহালার হাট এবং টেংরাখোলা মেলা ও কমলাপুর মেলা উল্লেখযোগ্য।
প্রধান রপ্তানিদ্রব্য পাট, পিঁয়াজ, তালের গুড়, গম, মিষ্টি আলু।
বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৪৩.০% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
প্রাকৃতিক সম্পদ এ উপজেলার চান্দার বিল এলাকায় পীট কয়লার সন্ধান পাওয়া গেছে।
পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৬.৩%, ট্যাপ ০.৩% এবং অন্যান্য ৩.৪%। এ উপজেলার ৮০% অগভীর নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে।
স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৮৩.৮% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ১৩.৯% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। তবে ২.৩% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ১৩, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ৬, ক্লিনিক ১।
এনজিও ব্র্যাক, প্রশিকা, কারিতাস, আশা, ওয়ার্ল্ড ভিশন। [পরিতোষ হালদার]
তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; মুকসুদপুর উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।