মতিঝিল, ঢাকা

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২২:৩৯, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)

মতিঝিল, ঢাকা  মুগল শাসনামলে গড়ে ওঠা ঢাকার একটি ঐতিহাসিক স্থান এবং বর্তমানে রাজধানীর প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা। মীর্জা মোহাম্মদ মুকিমের মহল হিসেবে এলাকাটি সমধিক পরিচিত ছিল। এ মহলের ভেতর ছিল একটি বড় দিঘি বা পুকুর, যার নাম ছিল সুকাকু মহলের পুকুর বা দিঘি। সুকাকু পুকুরটিই পরবর্তীতে মতিঝিল নামে পরিচিত হয়ে ওঠে। মুগল সুবাহদার মীর জুমলার (১৬৬০-১৬৬৩ খ্রি) শাসনামলে মীর্জা মুকিম নওয়ারা মহলের দারোগা ছিলেন। মীর্জা মুকিমের মহল ছিল পুরানা পল্টন ময়দানের (বর্তমান ঢাকা ষ্টেডিয়াম এলাকা) দক্ষিণে। মহলের ভেতরে ও বাইরে ছিল দু’টি বড় টিলা যার একটি এখনও বঙ্গভবন চত্বরে রয়েছে। মীর্জা মুকিমের মানসিক ভারসাম্যহীন পুত্র ও কন্যা সন্তানদের জন্য তিনি তাঁর সর্বস্ব হারান বলে জনশ্রুতি রয়েছে। জনশ্রুতি অনুযায়ী কন্যার জন্য সঞ্চিত অলংকার তাঁর কন্যা প্রতিদিন একটি করে অন্দরমহলের এ দিঘিতে ফেলতেন। সম্ভবত তার পরে দিঘিটি সুকাকু মহলের দিঘি থেকে মতিঝিল বা মোতির দিঘি নামে পরিচিত হয়। পরবর্তীকালে এই মোতির দিঘির নামানুসারে স্থানটির নাম হয় ‘মতিঝিল’।

ধারণা করা হয় যে, ব্রিটিশ আমলে মানুক নামে একজন আর্মেনীয় ব্যবসায়ীর বাসস্থান ছিল মতিঝিলে। ঢাকার নওয়াব খাজা আবদুল গণি (১৮১৩-১৮৯৬) জায়গাটি মানুকের নিকট থেকে ক্রয় করেন। পরবর্তী সময়ে মতিঝিলে নওয়াবদের বাগান ও বাগান বাড়ি নির্মিত হয়। মতিঝিল নামের সঙ্গে দিলখুশা নামটি জড়িত। নবাব স্যার সলিমুল্লাহর ভগ্নিপতি নবাব আজিম চিত্তবিনোদনের জন্য মতিঝিল এলাকায় ‘দিলকুশা’ নামের একটি মনোরম প্রাসাদ নির্মাণ করেছিলেন। ইংরেজ আমলে মতিঝিল ও দিলকুশার মাঝ বরাবর একটি রাস্তা স্থান দুটিকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছিল। বর্তমানে সেই মনোরম প্রাসাদের স্থলে আধুনিক আকাশ ছোঁয়া ভবন নির্মিত হলেও একটি প্রাচীন মসজিদ ও নওয়াব পরিবারের কয়েকজন সদস্যের সমাধি এখনও বর্তমান। তাঁদের মধ্যে হযরত শাহ নেয়ামতউল্লাহ্, নবাবজাদী আহ্ম্মদী বানু (১৯১২-১৯৮১), নবাবজাদী মেহের বানু, খান বাহাদুর খাজা মোহাম্মদ আজম, খাজা আকতার (১৯৩২-১৯৯৪), আলহাজ্ব খাজা আহ্ম্মদ (১৯৩৪-১৯৯২), খাজা মাসুদ নসরুল্লাহ (মৃত্যু-২০০০), বেগম জাহান আরা বান (মরহুম খাজা মাসুদ নসরুল্লাহর স্ত্রী), নওয়াবজাদা খাজা নসরুল্লাহ (স্যার সলিমুল্লাহর পুত্র), খাজা খালিদ নসরুল্লাহ (খাজা নসরুল্লাহর পুত্র), ওয়াহিদ বক্স কাদরী (আই.সি.এস) এবং খাজা মোহাম্মদ আরিনের সমাধি উল্লেখযোগ্য।

মতিঝিল শাপলা চত্ত্বর


১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর দিলখুশা প্রাসাদের নামানুসারে তৎকালীন মিউনিসিপালিটি কর্তৃক এ এলাকার নাম ‘দিলখুশা’ করা হয়।

মতিঝিলে একটি প্রাচীন মাজারের অস্তিত্বের কথা জানা যায়। মাযারটি হযরত শাহ জালাল দখিনীর বলে ধারণা করা হয়। প্রাক মুগল যুগে বঙ্গভবন এলাকায় ছিলেন হযরত শাহ জালাল দখিনী নামে এক সুফি দরবেশ। মৃত্যুর পর (১৪৭৬ খ্রিস্টাব্দ/ ৮৮১ হিজরি) তাঁকে এখানেই সমাহিত করা হয়। তাঁর মাযার সৌধটি বর্তমানে বঙ্গভবনের অভ্যন্তরভাগে অবস্থিত।

মতিঝিল এলাকায় এখনো টিকে থাকা অন্যান্য ঐতিহাসিক নিদর্শন সমূহের মধ্যে রয়েছে, পীরজঙ্গী মাযার, রামকৃষ্ণ মিশন, দিলখুশা জামে মসজিদ (বর্তমানে রাজউক ভবনের পাশে)।

বর্তমানে মতিঝিল এলাকায় অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠানের প্রধান অফিস অবস্থিত। এই এলাকার প্রায় সব ভবনই বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের অফিস হিসাবে ব্যবহূত হাওয়ার কারণে এলাকাটি মূলত ‘মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকা’ নামে পরিচিত। মতিঝিলের কেন্দ্রস্থলে রয়েছে শাপলা চত্ত্বর এবং বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইন্সের ট্রেডমার্ক বলাকা অবলম্বনে নির্মিত ‘বলাকা ভাষ্কর্য’। স্থানটি বলাকা চত্ত্বর নামে পরিচিতি। এছাড়াও সুউচ্চ বাংলাদেশ ব্যাংক ভবন, জনতা ব্যাংক ভবন, অগ্রণী ব্যাংক ভবন, সেনা কল্যাণ ভবন, ওয়াপদা ভবন, ইত্তেফাক ভবন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ, রাজউক ভবনসহ আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা এখানে অবস্থিত।  [ফজিলাতুন নেছা]

গ্রন্থপঞ্জি  হাকিম হাবিবুর রহমান, আসুদেগান-এ-ঢাকা (অনুবাদ: আকরাম ফারুখ ও আ.ন.ম. রুহুল আমিন চৌধুরী), ঢাকা, ১৯৯১; মুনশী রহমান আলী তায়েশ, তাওয়ারিখে ঢাকা (অনুবাদ: আ.ম. ম. শরফুদ্দীন আহমদ), ঢাকা, ১৯৮৫।